নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, নির্বাচন কমিশনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সব চললে ও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে তফসিল। ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সরকারি দল ও জোট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বসে নেই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটও। বিএনপির সঙ্গে সরকারের এখনো পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের জন্য প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার বিষয়ে, বিএনপির চাওয়া পূরণে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। সমঝোতার নানামুখী চেষ্টা পরোক্ষভাবে চলছে। সরকারের সঙ্গে ও সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা হচ্ছে না। তবে অন্তরালে চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু যত আলোচনাই হোক, সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি এই অবস্থায় কোণঠাসা থাকলেও বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আগামী নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও এতে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে না। কারণ, তিনি লন্ডন সফরের সময় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও পুত্র তারেক রহমানকে সবই বলে এসেছেন তার অনুপস্থিতিতে কী করতে হবে।
বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি অংশ নিতে সব ধরনের চেষ্টা করবেন। শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে না পারলেও দলকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি রাখছেন। কাদের মনোনয়ন দিতে পারেন, সেটাও ঠিক করেছেন। তিন স্তরের প্রার্থী তালিকা করা হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে। কারণ যাদের প্রার্থী করা হবে তাদেরকে যাতে কমিশন অযোগ্য ঘোষণা করতে না পারে। একজনকে অযোগ্য ঘোষণা করলে অন্যজন যাতে প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেন। যদিও বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপিসহ জোটের নেতাদের আশা, খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে জামিনে মুক্তি পাবেন। মামলায় সর্বোচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চলবে। তিনি যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজন হলে তারা আদালতেও যাবেন। কারণ, উচ্চ আদালতের আদেশ আছে, কারো ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের বেশি শাস্তি হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হবেন। আবার এমনও আদেশ আছে, নিম্ন আদালতে শাস্তি হলেও মামলা সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সেই হিসেবে নির্বাচন কমিশন আদালতের যেকোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারে তার ও তারেক রহমানের বেলায়। বিএনপির কাছে যতখানি খবর রয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশন তাকে ও তারেক রহমানকে দণ্ডিত হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না-ও দিতে পারে। কেবল সরকারের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হলেই নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। নির্বাচন কমিশন যদিও বলছে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে কিন্তু তারা সরকারের নির্দেশ ছাড়া এক পাও নড়বে না বলে মনে করছে বিএনপি। সেই হিসেবে বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। যদিও বিএনপির নেতারা বারবার বলছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তারা নির্বাচনে যাবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা বিএনপি এখনো জানে না। এদিকে তারেক রহমানও নির্বাচনে যেতে পারবেন না এমনটাই আশঙ্কা রয়েছে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে কিংবা না পেলেও কারাগারে বসেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তারেক রহমানকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে হবে। সেখানে তিনি সরকারের খাতায় পলাতক। তাই পলাতক ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলবে কি না, তার সুরাহা হয়নি। সেই অবস্থায় আটকে যেতে পারে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়া।
খালেদা-তারেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নানা বাধা থাকলেও দল ও জোটকে নির্বাচনে তারা পাঠাতে চাইছেন। এ জন্য নেতাদের মাঠের প্রস্তুতি নিতেও বলেছেন। সিনির নেতারা এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, সরকার চাইলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায়। সমঝোতারও চেষ্টা করবে। এখনো চেষ্টা আছে, তবে কোনো অগ্রগতি নেই।
সূত্র জানায়, সরকারের তরফ থেকে মনে করা হচ্ছে, বিএনপির ভুলের জন্য সরকারের কিছুই করার নেই। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, এটা তাদের বিষয়। সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। নির্বাচনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কাজ করবে। তাদের কোনো কথা থাকলে তারা নির্বাচন কমিশনে বলবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার কোনো বিষয় নেই। বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি সরকারের কাছে অযৌক্তিক। কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটি মীমাংসিত বিষয়। আদালতের রায়ের পর সংবিধানে সংশোধনী এনে এর স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সরকার দায়িত্বে থাকবে, ওই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই হিসেবে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এখানে নতুন করে নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও সাংবিধানিক নয় বলে সরকার মনে করছে। সে কারণে সরকার বিভিন্নভাবে সমঝোতার আভাস ও আলোচনা করলেও প্রত্যক্ষ আলোচনা করবে না।
সূত্র জানায়, সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং থাকবে। নির্বাচন যথাসময়েই হবে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের সময় ছুটিতে যেতে হবে কিংবা তিনি দায়িত্বে থাকবেন না বলে বিএনপি যে সুযোগ চায়, সেটা অসম্ভব। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হলেও তা অনির্বাচিত ও নির্দলীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নয়। আর বিএনপিকে সরকারে রাখতে হবে, এটা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ওই সময়ের সরকারের পরিকল্পনা থাকলেও এখন আর নেই। কারণ বিএনপির নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি বর্তমান সংসদে নেই। সেই হিসেবে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সরকারে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও সরকার সর্বোচ্চ ছাড় দিতে পারে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে ও বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি হলে। সরকার টেকনোক্রেট কোটায় বিএনপির চার থেকে পাঁচজনকে নির্বাচনকালীন সরকারে সম্পৃক্ত করতে পারে। তবে এর আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার চাইছে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। সব দলের অংশগ্রহণেই সরকার নির্বাচন চায়।
সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে বিএনপি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। তাদের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনে অংশ না নিলে পরপর দুবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অভিযোগে ও নিবন্ধন অব্যাহত থাকার নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন বাতিল হবে। এ বিষয়ে সরকারের কিছুই করার নেই। এ কারণেই বিএনপিকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পুরোপুরি নিশ্চিত না করলেও এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলেও তারা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। শরিক দলগুলোকে কত আসন ছাড় দেওয়া হবে, এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন নতুন দলকে জোটে সম্পৃক্ত করে জোটের আকার বাড়ানো হলে ওই সব দলের জন্যও আসন ছাড় দিতে হবে। জামায়াতকে দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে না নিয়ে বিএনপির ব্যানারে নির্বাচনে নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিকল্পনা চলছে। এ অবস্থায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া, তার যাচাই-বাছাইসহ সব প্রক্রিয়াতেই থাকবে। নির্বাচন কমিশনে জমাও দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদিও কারচুপির আশঙ্কা থেকেই যায় ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই আবারও সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে বিএনপি ও তার জোট নির্বাচনে না-ও থাকতে পারে। শেষ মুহূর্তে বয়কট ও বর্জনের ঘোষণা দেবে। এর কারণ, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না।
সূত্র জানায়, যদিও বিএনপির আশঙ্কা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হবে এবং বিএনপির প্রার্থীদের জয়ী হতে বাধা দেওয়া হবে। তবু তারা নির্বাচনে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত তাহলে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে। নির্বাচন বর্জন করবে। অভিযোগ আনবে পাতানো নির্বাচনের। ওই নির্বাচনে তারা থাকবে নাÑএ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন ও তারেক রহমানের কাছে খবর রয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে নির্বাচনে বিএনপি বিপুলসংখ্যক ভোট পাবে ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারে। এ জন্য তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আরও মনে করছে, দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই। এ কারণে এখন জনগণ চুপচাপ থাকলেও তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সরকার পরিবর্তন হবে আর বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করতে পারবে। যদিও বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলকে নানাভাবে তাদের কথাগুলো বলার চেষ্টা করছে। লিখিত আকারে, বিভিন্ন বৈঠকে, সিডি আকারে ও ডকুমেন্টারি তৈরি করে তারা কূটনীতিকদের কাছে কয়েক বছর ধরেই দিয়ে আসছে। কূটনীতিকেরা বারবারই বলে আসছেন তারা বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইছে। এ অবস্থায় সরকার বিদেশিদের দেশের রাজনৈতিক ব্যাপারে আর হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। সরকারের এই অবস্থানে থাকার কারণে সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারকেরা বিদেশিদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিলে কিংবা দাওয়াতে গেলেও তারা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না। বরং বর্তমান সরকারের অধীনেই যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, সেটাই বলছে। সরকার সংবিধানের বাইরে কোনো কাজ করছে না, সেটাও বলছে। সম্প্রতি চীন, ভারত, পশ্চিমা দেশগুলোকেও একই কথা বলেছে। আগামীতেও একই অবস্থানে থেকেই সরকার নির্বাচন করবে। সরকারের নীতি হচ্ছে সংবিধানের বাইরে তারা নড়বে না। যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি আদালতে গেলেও সরকার আইনিভাবে কোনো সুবিধা পাওয়ার সুযোগ কম।
সূত্র জানায়, সরকারের কঠোর অবস্থান ও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটুট থাকার কারণে বিএনপিকে নানামুখী পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। আপাতত বিএনপি বিভিন্ন সভা-সমাবেশেই তাদের কথাগুলো বলবে। প্রেস কনফারেন্সেও বলবে। সরকারের সমালোচনা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তারা চেষ্টা করবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার। সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিএনপিমনা ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা জনগণের পক্ষে থাকেন। দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তারা সারা দেশের মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে নামার জন্য কাজ করে যাবেন। বিএনপির আশা, নির্বাচনের আগে হলেও তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হবে। আর তাতে সফল হলে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে। বিএনপি আশা করছে, নির্বাচনের আগে জনগণ এমনভাবে জেগে উঠবে যে একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। পাতানো নির্বাচন করাও সম্ভব হবে না। তা না হলে বর্তমান সরকারি দল আবার ক্ষমতাসীন হতে পারবে না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে। আর না হলে তারা সব প্রক্রিয়া করার পরও সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের ওপর দায় চাপিয়ে নির্বাচনে থাকবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হবে না ও কারচুপির আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করবে। এতে করে একদিকে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণ ও গোটা বিশ্বাসীকে জানানো যে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি। এতে করে আওয়ামী লীগ আগামী দিনে আবার সরকার গঠন করলেও তাদের চাপের মুখে থাকতে হবে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সরকার যে চাপের মুখে ও সমালোচনার মুখে কাটাচ্ছে এর চেয়েও বেশি চাপে থাকবে। এবার পাঁচ বছর সরকার কন্টিনিউ করলেও তখন সরকারকে টিকে থাকতে সমস্যা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে ফের নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করতে বাধ্য হবে।
সরকারের বিশেষ একটি সূত্র জানায়, বিএনপি জনগণকে আন্দোলনে নামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। কারণ জনগণ কোনো আন্দোলন চায় না। তারাও বুঝে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো ইস্যু নেই। সংবিধান ও আইনের মধ্যে সরকার সবকিছু করছে। আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদালতে শাস্তি হয়েছে। সরকারের আইনজীবীরা এ ব্যাপারে কাজ করেছেন। বিএনপি মুখে যতই সরকারের সমালোচনা করুক না কেন, এটা হালে পানি পাচ্ছে না। জনগণ আদালতের আদেশ নিয়েও কোনো কথা বলতে রাজি নয়। সরকার এটাও মনে করছে, আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশের পরিস্থিতি কোনোভাবেই অবনতি করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবে। নির্বাচন হবে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী। আর কমিশনও নির্বাচন করবে। সেখানে সরকার কোনো প্রভাব খাটাবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হলেও ২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে দেশে ও বিদেশে সমালোচনাও হবে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে, সেটাই সরকার আশা করছে। নিবন্ধন ঠেকানোর জন্য হলেও আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না থাকলেও সেই ব্যর্থতার দায় তাদেরই নিতে হবে। এর আগে তারা নির্বাচন না করে বয়কট করেও যে সুযোগ নিতে চেয়েছিল, সেটা পারেনি, এবারও পারবে না। বিএনপিকেই ঠিক করতে হবে তারা কী করতে চায়।