বিএনপির মহাসচিব থাকতে চান না ফখরুল

তারেকের ওপর নাখোশ

রাজনৈতিক ডেস্ক : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর দল চলছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই। কিন্তু তারেক রহমান যেভাবে দল পরিচালনা করতে চাচ্ছেন সেভাবে চালাতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার সঙ্গে মতবিরোধ হচ্ছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তিনি এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে সাজা শেষ হওয়ার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর দলের মহাসচিব থাকতে চাচ্ছেন না। এ বিষয়টি ইতোমধ্যেই তারেক রহমানকে জানিয়ে দিয়েছেন ফখরুল।

সূত্রমতে, গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই লন্ডনপ্রবাসী তার ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর থেকে তারেক রহমানের সঙ্গে ফোন ও স্কাইপিতে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। অবশ্য একাধিকবার লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও করে এসেছেন তিনি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে না পারাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারেক রহমান মির্জা ফখরুলের ওপর অসন্তুষ্ট হন। এ পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল পদত্যাগ করার উদ্যোগ নিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে ভেবে তারেক রহমান কৌশলে মির্জা ফখরুলকে বশে রাখার চেষ্টা করেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩০০ আসনের জন্য দল ও জোটের একটি খসড়া প্রার্থী তালিকা করে লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠান। কিন্তু তারেক রহমান সেই তালিকায় আমূল পরিবর্তন করে দলীয় প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত করেন। এ তালিকায় দলের অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতার নাম না থাকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। মনোনয়নবঞ্চিতরা তারেক রহমানের পাশাপাশি মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও কেউ কেউ মির্জা ফখরুলের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। এ পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের প্রতি চরম নাখোশ হন মির্জা ফখরুল। তবে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে ভেবে এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বরং তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যান।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভরাডুবির পর তারেক রহমান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার জন্য চাপ দেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল কৌশলে তারেক রহমানকে বোঝাতে সক্ষম হন এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নামলে নেতাকর্মীরা হয়রানির শিকার হবেন। বরং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি দিলে তা সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করেও যখন কোন আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হয়নি তখন মির্জা ফখরুলের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন তারেক রহমান।

এ ছাড়া নির্বাচনে পরাজয়ের পর সারা দেশের প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের দিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করাতে বলেন তারেক রহমান। কিন্তু এক মাসের মধ্যে মামলা করবেন বললেও এ সময়ের মধ্যে মির্জা ফখরুল নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে মামলা করাতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগেই মির্জা ফখরুল তারেক রহমানকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর বিএনপির মহাসচিব থাকতে চান না। সিঙ্গাপুর গিয়েও তারেক রহমানকে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলামের মহাসচিব থাকার বিষয়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সায় থাকায় তারেক রহমান এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে নিজে কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে মামলা করাতে না পারায় তারেক রহমান বিষয়টি ভালভাবে নেননি। তবে তিনি অতি সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া কিছু নেতার সঙ্গে লন্ডন থেকে স্কাইপি বৈঠকে অংশ নিয়ে ১৫ ফেব্রæয়ারির মধ্যে প্রতি জেলায় একটি করে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তারেক রহমানের এ নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়েও দলের অধিকাংশ নেতার অনাগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে।