বিএনপির সাত দফা প্রত্যাখ্যান আ’লীগের

ঢাকা : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় উত্থাপিত সাত দফা প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের কোনো পরিবর্তন ও সংযোজনের সুযোগ নেই।

বিএনপির জনসভার সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, এই সমাবেশের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে, নেতিবাচক রাজনীতির ফলে বিএনপির জনসমর্থন কমেছে। আজ তাদের সক্ষমতা দেখলাম। এ সমাবেশের উপস্থিতি গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগের পথসভায় উপস্থিতির পরিমাণের ধারে কাছেও যায়নি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। এ দিন বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিএনপির সাত দফা উত্থাপনের পরপরই এ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি জানান, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে গত ১ অক্টোবর থেকে গণসংযোগে নামবে আওয়ামী লীগ। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে টানা গণসংযোগ করবে দলটি।

বিএনপির জনসভা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এলোমেলো দল বিএনপি হাঁকডাক দিয়ে মহাসমাবেশ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আষাঢ়ের তর্জন-গর্জনই সার। কক্সবাজার যাওয়ার সময় রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী লীগের হয়ে যে আটটি পথসভা ও সমাবেশ করেছি, এর একটির ধারে কাছের উপস্থিতিও বিএনপির মহাসমাবেশে হয়নি। তাদের এই সমাবেশের উপস্থিতি হতাশাজনক। দেখে মনে হয়েছে, জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই। এ দলটি ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে।
সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি বেধেছিল দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই যে হাতাহাতি, মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াÑ এটাই তাদের জাতীয় ঐক্যের সূচনা। এখানেই স্পষ্ট, কেমন তাদের ঐক্য।
বিএনপির জনসভার মঞ্চে কারাবন্দী দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য খালি চেয়ার রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়াকে সম্মান করে খালি চেয়ার বসিয়ে মঞ্চে সেলফি তুলছেন নেতারা। কী দেখলেন? মঞ্চে সেলফি, এই হলো বিএনপি।

গত ১ অক্টোম্বর থেকে গণসংযোগ : ওবায়দুল কাদের জানান, গত ১ অক্টোম্বর থেকে আওয়ামী লীগের গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মফস্বল, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এই কর্মসূচি পালন করার জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সদস্যরা চারটি দলে ভাগ হয়ে গণসংযোগে নেতৃত্ব দেবেন। চারটি দলের নেতৃত্ব দেবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রথম দিন গত ১ অক্টোম্বর দলের চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চারটি টিমে বিভক্ত হয়ে ঢাকার চারটি থানায় গণসংযোগ করবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের নেতৃত্বে বিকেল ৪টায় ওয়ারী থানার তিনটি ওয়ার্ড, ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে বেলা ১১টায় উত্তরা থানার তিনটি ওয়ার্ড, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে বিকেল ৪টায় মোহাম্মদপুর থানা এবং আবদুর রহমানের নেতৃত্বে বিকেল ৪টায় পল্টন থানার তিনটি ওয়ার্ডে গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হবে।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকম-লীর সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, ফরিদুন নাহার লাইলী, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দেলোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তফসিলের পর সবাই ভোটে অংশ নেবে : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামী মাসের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তার বিশ্বাস, তফসিলের পর অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তার কাছে খবর আছে, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নির্বাচন করবে। অন্যরাও নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আশাবাদী ওবায়দুল কাদের। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি জানান, চলতি মাসের শেষ নাগাদ ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার।

বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন নেই। বিএনপির প্রয়োজন অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সরকারে কে থাকল, তা তাদের দেখার দরকার নেই। কারণ নির্বাচনকালীন সরকার শুধু দৈনন্দিন কাজ করবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে ইসি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের উদ্বেগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগকে আমলে নিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের দাবি যৌক্তিক হলে মানতে বাধা নেই। আইনে সবকিছু বলা থাকে না। পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ থাকে, বিধিমালায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।