বিচ্ছেদ বাড়ছে শোবিজে

বিচ্ছেদ একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এটা কারোই কাম্য নয়। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনাটি খুব নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শোবিজে। বিচ্ছেদ বাড়ছেই শোবিজে। গত কয়েক বছরে অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। কারণ যেটাই হোক, ঘন ঘন বিচ্ছেদের কারণে শোবিজে দেখা দিয়েছে ইমেজ সংকটও।

চলচ্চিত্র, টিভি কিংবা সঙ্গীতাঙ্গন- কোথায় নেই তারকাদের বিচ্ছেদের খবর। শুধু তাই নয়, বড় তারকাদের ক্ষেত্রে এ রকমটা বেশি ঘটেছে গত দু’বছরে। প্রেম, জমকালো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা এবং তার কয়েক মাস কিংবা বছর না পেরোতেই ডিভোর্সের ঘটনা ঘটে চলেছে।

এ ক্ষেত্রে এক এক তারকা কারণ দেখাচ্ছেন একেকটা। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিভোর্স হয়েছে মতবিরোধ ও মনমানসিকতার অমিল হওয়ায়। বিচ্ছেদের এ তালিকায় অতি সম্প্রতি যোগ হয়েছেন চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকা শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। ১২ মার্চ তাদের ডিভোর্সের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। গোপনে শাকিব-অপু বিয়ে করেন ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল। দীর্ঘ ৯ বছর বিয়ের খবর গোপন রাখেন এই তারকা জুটি।

গত বছরের ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ছয় মাস বয়সী ছেলে আব্রামকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন অপু। বিয়ের ও সন্তানের খবর ফাঁস করেন তিনি। এরপর অবশ্য শাকিব ও অপুর সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। কিন্তু সেটা বেশিদিনের জন্য নয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শাকিব ও অপুর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপু বিশ্বাসের বাসার ঠিকানায় বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান শাকিব।

এরপর অপু অবশ্য আশা করেছিলেন বিষয়টির সুরাহা হবে। তালাকের বিষয়ে শুনানির জন্য শাকিব ও অপু বিশ্বাসকে তলব করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সেই শুনানিতে প্রথমবার অপু উপস্থিত হলেও শাকিব হননি। দ্বিতীয়বার কেউই উপস্থিত হননি। তাই নিয়ম অনুযায়ী ১২ মার্চ ডিভোর্স হয়ে যায় শাকিব-অপুর। এ দিকে ক’দিন আগেই লাক্স তারকা বাঁধনের ডিভোর্সের বিষয়টিও অবাক করেছে সবাইকে।

কারণ বিচ্ছেদের বিষয়টি বেশ পরে প্রকাশ করেন বাঁধন। এমনকি স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন তিনি। গত বছরের ২০ জুলাই নিজেদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন সঙ্গীত তারকা-অভিনেতা তাহসান ও মডেল-অভিনেত্রী মিথিলা।

১১ বছর সংসারের পর মতানৈক্যের কারণে নিজেদের বিচ্ছেদের ঘোষণা যৌথভাবে দেন তাহসান ও মিথিলা। তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানও রয়েছে। তাহসান-মিথিলা জুটিকে মিডিয়ার অন্যতম আদর্শ জুটি হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু তাদের এই বিচ্ছেদে তাজ্জব বনে যান তাদের ভক্ত-দর্শক।

অনেকেই তাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবার পরামর্শও দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। গত বছরের জানুয়ারিতে আরেক সঙ্গীত তারকা হাবিব ওয়াহিদ তার স্ত্রী রেহান চৌধুরীকে ডিভোর্স দেন। নিজেই ফেসবুকের মাধ্যমে ডিভোর্সের বিষয়টি জানান সবাইকে। কিন্তু পরবর্তীকালে রেহান জানান, মডেল-অভিনেত্রী তানজিন তিশার কারণেই তার সংসার ভেঙেছে।

একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে হাবিব-তিশার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি তাদের মধ্যে লিভ টুগেদারের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন রেহান। যার ফলে শেষতক টিকেনি হাবিব-রেহানের সংসার। তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। মডেল-অভিনেত্রী আনিকা কবির শখের সঙ্গে অভিনেতা নিলয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়েই তাদের সম্পর্ক চলেছে দীর্ঘদিন।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে নিলয়-শখ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি। কিন্তু গত বছরের শুরুতেই বিচ্ছেদের তালিকায় যুক্ত হয় তাদের নাম। ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মডেল স্পর্শিয়া ও নির্মাতা রাফসান আহসান। কিন্তু সেই বিয়ে টিকেনি বেশিদিন। গত বছরের ২১ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয় তাদের। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন অভিনেতা নোভা ফিরোজ ও নির্মাতা রায়হান খান। ভালোভাবেই সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু বিপত্তি বাধে গত বছর। সে বছরের ৮ অক্টোবর নিজের বিচ্ছেদের খবর জানান নোভা।

গত ২৬ আগস্ট রায়হান খানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসার জীবনের ইতি টানেন বলে জানান তিনি। গত বছরের ১২ মে মাসে দীর্ঘদিনের প্রেমিক বৈমানিক পারভেজ সানজারির সঙ্গে বিয়ে হয় মিলার। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেন মিলা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারও হন পারভেজ। পরে জামিনে মুক্ত হন।

বর্তমানে মিলা ও পারভেজ দুজন আলাদা থাকছেন। একইভাবে ২০১৬ সালে কয়েক বছর সংসারের পর স্বামীকে ডিভোর্স দেন কণ্ঠশিল্পী সালমা। তার স্নেহা নামের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। বর্তমানে মেয়েকে নিয়েই থাকছেন সালমা। এ ছাড়াও কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বিয়ে ও ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে সঙ্গীত তারকা হদয় খান ও মডেল অভিনেত্রী সুজানা, অভিনেত্রী সোহানা সাবা ও নির্মাতা মুরাদ পারভেজ, জনপ্রিয় জুটি মনির খান শিমুল-নাদিয়া, সারিকাসহ আরো বেশ কজন তারকার।