বিজ্ঞান, বিজ্ঞানি ও ইতিহাস

দলিলুর রহমান

পারিবাকি কোম্পানী: ১৯৬৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ‘Beatles’ গ্রুপ আমেরিকান টেলিভিশন শোতে যার নাম ‘The Ad Sullivan show’ দেখা দেয়। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যার শেষ কর্ডস ছিল, “I want to hold your hand?” 73 মিলিয়ন লোক এই শোটি দেখছিলেন তার মধ্যে একজন দর্শক ছিলেন Armand Zildjian| Armand Zildjian ঠিক তখনো বুঝতে পারেন নি যে তার কোম্পানী এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। ঐ শোতে বিখ্যাত Ringo Starr (The Fab Fears Drummer) Zildjian এর তৈরি Cymbals বাজাচ্ছিলেন।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তরষফলরধহ এর কোম্পানীর তৈরি Zildjian এর চাহিদা বেড়ে যায় কারণ পৃথিবীর প্রায় সব ড্রামাররাই- Ringo Starr যে Cymbal বাজাচ্ছিলেন সেই একই Cymbal বাজাতে চান। Armand Zildjian ৯০,০০০টি Cymbal এর অর্ডার পান। তার কোম্পানী ছোট থেকে সপ্তাহের মধ্যে একেবারে তুঙ্গে উঠে যায়। Armand Zildjian এর ভাগ্য খুলে যায়। ৩০ বছর আগে তার বাবা Avedis Zildjian, কোম্পানীর মালিক তখনো অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা। আশঙ্কা করা হচ্ছিল কোম্পানী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। Avedis Zildjian টার্কি থেকে ১৯২৯ সনে আমেরিকায় আসেন যখন গ্রেট ডিপ্রেশন বা আর্থিক মহামন্দা চলছিল। খুব কম লোকেরই তখন দামি Cymbal কেনার ক্ষমতা ছিল । আমিরিকার তখন ভীষণ দুঃসময়; লোকেরা ঠিক মত খাবারই পেতনা । কিন্তু Zildjians তাদের ১৩ জেনারেশনের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প- Cymbal তৈরি, পূরাতন ব্যবসা ধরে রেখেছিলেন। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা টেকনোলজিটা কি? ১৬১৮ খ্রিস্টাব্দে একজন আলকেমিষ্ট নাম- Avedis Zildjian একটি নতুন পন্থা আবিষ্কার করেন। আর তা হলো তিনি তামা ও টিনের একটি সঙ্কব ধাতু তৈরি করেন। যার মধ্যে খুব সামান্য একটু সিলভারও আছে। এই সঙ্করটি দিয়ে যখন Cymbals তৈরি করা হয়। তা অস্বাভাবিক পরিষ্কার ও শক্তিশালী আওয়াজ তৈরি করে- যে পদ্ধতিটি এখনো তাদের আয়ত্বে। আজকে এই কোম্পানী পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো Cymbals তৈরি করে থাকেন এবং এই কোম্পানী চালাচ্ছে তাদের ষোড়শ জেনারেশন আর এই ব্যবসায় তারাই সর্বাগ্রে।
কয়েক বছর আগে Bank of Korea এক জরিপে ৪১টি দেশে ৫০০০টি কোম্পানী চিহ্নিত করে যেগুলো ২০০ বছর পরানো। তাদের শেকড়, কোন কোন ক্ষেত্রে, প্রায় মধ্যযুগে (Middle Age)। একটি উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে জাপানিজ মেশিনারিজ ফার্ম “Tech Kaihatsu” যেটা ৭৬০ সালের। এসব কোম্পানী শত বছর অত্যন্ত কৃতকার্যের সাথে টিকে থাকে- সময় ও দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে, যুদ্ধের মধ্যে, অর্থনৈতিক উঠা নামার মধ্যেও। এগুলোর অনেকটাই বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে, ভীষণ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এতো বাঁধার মধ্যে কিভাবে এসব পুরাতন কোম্পানি টিকে থাকে? নানা ভাবে এই কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে।
১। অনেক কোম্পানী তাদের ব্যবসা প্রসারিত করে যা- যে ব্যবসা দিয়ে কোম্পানী শুরু তা থেকে ভিন্ন। কিন্তু দেখা গেছে অনেক কোম্পানী সে পথেও টিকতে পারেনি।
২। কোন কোন ব্যবসা তুলনায় লম্বাদিন বাঁচিয়ে রাখায় সুবিধার যেমন: ওয়াইন, জাপানিজ সাকে, চা ইত্যাদি এসব ব্যবসায় হঠাৎ করে বিরাট পরিবর্তন আসে না- মার্কেট ওঠা নামার মধ্যে।
৩। গবেষণায় দেখা গেছে সেই সব কোম্পানী টিকে গেছে যে গুলো নতুন প্রবর্তন করতে পেরেছে। আজকের দিনে যেটা খুব জোর দিয়েই বলা হয়- “Innovate or Die” নতুন প্রবর্তন কর অথবা মর। আজকাল ইনোভেশন (Innovation) শব্দটি খুবই শোনা যায়। ইনোভেশন বা নবপ্রবর্তন কি?
এটা কোন একটি Brilliant ধারণাকে বোঝায় না। যা বলতে গেলে কিংবদন্তী আবিষ্কার- ঠিক তা ইনোভেশন না। একাধিক ধারণাকে বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করা যায়, যা বাজার যাত হতে পারে। বা সমাজের বিরাট পরিবর্তন এনে দিতে পারে। যেমন -সেলফোনের আবির্ভাব এবং তার উত্তর উত্তর উন্নয়ন। ফোন ক্যামেরা অন্যসব ক্যামেরাকে বাজার থেকে সরিয়ে দিল।
ইনোভেশন শুধু ল্যাবরেটরীতে উদ্ভাবন করা হবে তা কিন্তু নয়- যা নতুন টেকনোলজির উন্নয়ন। টেকনোলজি অবশ্যই ইনোভেশনের চাবিকাঠি কিন্তু ইনোভেশনের ধারণা বিভিন্ন দিক থেকে আসতে পারে। যেমন- মার্কেটিং, সেল যারা নতুন চাহিদা বুঝতে পারেন। তার মানে হল- টেকনোলজিকে বিশেষ প্রয়োজনের সাথে মেশাতে হবে। যে জন্যে দেখা যায় কেউ একাই একটা কিছু উন্নয়ন করে মার্কেট দখল করতে পারে না। তার একটা দল থাকে। তবে শুধু টিম ওয়ার্ক যথেষ্ট নয়, যথেষ্ঠ নয়, নতুন পদার্থের ধারণা যথেষ্ট নয়, ইনোভেশন হল ক্রেতাদেরকে মূল্যাবধারণ প্রদান করা।
নিউজার্সী।