বিদেশিদের দুয়ারে ঐক্যফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটারের ভোটদানে বিরত থাকার ঘটনা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত বলে উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া সত্ত্বেও ২০টি ভোটকেন্দ্রে সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিত থাকতে না দেওয়া এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপির অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা ও এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান অনাগ্রহ ভয়ংকর উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়।

জানা যায়, ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতের রাষ্ট্রদূতদের কাছে পাঠানো পত্রে সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জনসাধারণের অনাগ্রহ, অনীহার চিত্র তুলে ধরে তাদের প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় তাদের সরকারের মাধ্যমে যথাযথ ভ‚মিকা রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে গণশুনানির ফলাফলও তাদের অবহিত করা হয়। জেলা পর্যায়ে গণশুনানির পর সবিস্তারে তাদের জানানো হবে বলে জানানো হয়। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পরও ঐক্যফ্রন্টের দুই নির্বাচিত সদস্যের শপথ গ্রহণ বিদেশিদের হতবাক করেছে এবং ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তাদের আগ্রহেও ভাটা পড়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, দেশের মধ্যে তাদের অভিযোগ ও দাবির প্রতি জনসমর্থন সংগঠিত করতে শোচনীয় ব্যর্থতার পর বিদেশিদের কাছে বিরোধীদের আবেদন-নিবেদন ফলদায়ক কিছু বয়ে আনবে না। কোনো কোনো দেশের তাদের প্রতি দুর্বলতা থাকলেও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিদ্যমান উন্নত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনো ভ‚মিকার পক্ষে নয়। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করেন, ড. কামাল ও বিএনপিতে তার সহযোগীরা ভবিষ্যতের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা করছেন মাত্র। জনমত সংগঠিত করতে তাদের ব্যর্থতা বিদেশিদেরও হতাশ করেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন। অন্য সব কারণ ছাপিয়ে সিইসির একটি বিষয় তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, অন্যতম বড় দল বিএনপির অংশগ্রহণ না করাই কম ভোটার উপস্থিতির কারণ।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরুত্তাপ পরিবেশ, ভোটের দিন ভোটারদের অস্বাভাবিক কম উপস্থিতি এবং স্বল্প হারে ভোট প্রদান ও সিইসির আত্মোপলব্ধি প্রমাণ করেছে যে সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও বিএনপির অংশগ্রহণহীন নির্বাচন শতভাগ অর্থপূর্ণ হয় না। প্রদত্ত ভোটের হার অনেক কম হলেও নির্বাচনের আইনগত বৈধতার ক্ষেত্রে তা অন্তরায় নয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। বিএনপি কর্তৃক একে কোনো ইস্যু করতে না পারার ব্যর্থতার দায় দলটির নেতৃত্বের।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি দল দৃশ্যত বিচলিত না হলেও বিব্রত। ভোটারদের ব্যাপক হারে কম উপস্থিতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও পরিলক্ষিত হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও সরকারকে অনাকাক্সিক্ষত প্রশ্নের মধ্যে ফেলবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভোটের দিন তার প্রতিফলন নিশ্চিত করার উপায় খুঁজছে সরকার ও সরকারি দল। এ উদ্দেশ্যেই মনোনীত প্রার্থীদের বাইরে দলের অন্য প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না। সংরক্ষিত নারী আসনসহ দুজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে করে ফল কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। স্থানীয় সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার নির্বাচন নিয়ে এলাকার ভোটার সাধারণের মধ্যে সাধারণত বিপুল উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। কিন্তু বরাবরের এ চিত্র এবার এখনো দেখা যাচ্ছে না। সংসদ নির্বাচনের চেয়েও অধিক হারে ভোট পড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। যদি তেমনটি না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যাবে। ভোটার সাধারণের মধ্যে ভোট দিতে অনাগ্রহই এ অবস্থার অন্যতম কারণ বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। গত সংসদ নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশন দেখালেও অনেক ভোটারই ভোট দিতে পারেননি, ভোটকেন্দ্রে যাননি। বিএনপি ও তার সহযোগীদের এ-সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের অভিজ্ঞতাই তাদেরকে নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহী করে তুলেছে।

বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও অনেক উপজেলায়ই বিএনপির স্থানীয় নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার হুমকি তাদের দমিত করছে না। সরকারি দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী, প্রার্থী-সমর্থকদের সতর্ক করা হয়েছে বিএনপিসহ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থকদের যেন প্রচ্ছন্নভাবেও হুমকি দেওয়া না হয়। স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর কর্মপন্থা নিতে বলা হয়েছে। গোলযোগ, মারামারি, সংঘাত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহী করবে বলে সরকার অহিংস, শান্তিময়, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে।

প্রার্থীদের নিজ দায়িত্বে অধিক হারে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে সাধারণভাবে যে অনাগ্রহী মনোভাব পরিদৃষ্ট হচ্ছে, তা দূর করাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

পুুনর্নির্বাচনের দাবি ঐক্যফ্রন্টের
ঘুরেফিরে আবার বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তার প্রতি ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে ফের পুনর্নির্বাচনের। না হয় পদত্যাগ করার। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট যে অভিযোগ তুলে আসছিল ক্রমশ এর রেশ মিইয়ে যেতে না যেতেই আবার নতুন করে সরব। এত দিন কেবল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে থাকলেও এখন নতুন করে যোগ হয়েছে উপজেলা পরিষদের প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের বিষয়টি। বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে না পারলেও এ-সংক্রান্ত প্রচারণা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে আন্দোলন আরও জোরালো করার পথে হাঁটছে।

এরই অংশ হিসেবে তারা বিবৃতি দেওয়া, বক্তব্য প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রতিনিয়ত যাতে এ ধরনের প্রচারণা গণমাধ্যমের সংবাদে থাকে, সে জন্য তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরামহীন প্রচারণা চালাবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনারা স্বীকার করেছেন ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি হয়েছে। আমরাও বলেছি, দেশে কোনো ভোট হয়নি। ভোটের আগের রাতে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আর তাই জনগণের দাবি মেনে নিয়ে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এসব কথা বলা ছাড়াও তিনি তার পদত্যাগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে না পারলে পদত্যাগ করে প্রমাণ করুন আপনার বিবেক আছে। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়টিও সামনে এসেছে। বিএনপির মহাসচিব ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সারা দেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের মুক্তির দাবি করছি। তারা পুনর্নির্বাচনের পাশাপাশি খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ও জোটের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

ঐক্যফ্রন্টও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে আসছে। সম্প্রতি বিভিন্নভাবে জামায়াত আলোচনায় এসেছে।

জামায়াত দাবি করেছে, অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করে তাদের অধীনে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে। এদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নতুন করে পুনর্নির্বাচনের দাবি সামনে এসেছে। ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করেছে, ডাকসু নির্বাচনেও ভোট ডাকাতির পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

১১ মার্চ মতিঝিলের ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে সংঘটিত অনিয়ম-অবিচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা হবে। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে, আইনের শাসনকে রক্ষা করতে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, ঐক্যের পক্ষে সবাই রয়েছে। এখানে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা আছেন। তারাও বলেছেন ঐক্যকে সুসংহত করার কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উপজেলা পরিষদের প্রথম পর্যায়ের একটা নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেনি। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে সরকার যে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি করেছে, সেই ভোট ডাকাতির নীরব প্রতিবাদে জনগণ উপজেলা নির্বাচন থেকেও বিরত থেকেছে। ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তারা।

মির্জা ফখরুল বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবির প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। অনেকে ধারণা করেছিল, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটা সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এখানেও জাতীয় নির্বাচনের মতো ৩০ ডিসেম্বরের যে ঘটনা সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি জাতি দেখল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি ছাত্র সংগঠনের ভোট ডাকাতি, গুন্ডামি, সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছে। এসব অপকর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণটাও শিক্ষার্থীরা দেখতে পেয়েছে এবং তারা প্রতিবাদ করেছে। মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, ডাকসু ও উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো দেশে প্রকৃতপক্ষে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেছেন, আমরা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে মানুষের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। বাংলাদেশের সব মানুষ আজ অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে সব মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। মানবাধিকার ফিরে পাবে। আর তাদের ভোটাধিকার পাবে। তিনি এক অনুষ্ঠানে আরও বলেন, এ দেশে গণতন্ত্রের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে না।

তিনি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ছাড়া এ দেশের গণতন্ত্র মুক্ত করা যাবে না। তিনি হলেন গণতন্ত্রের মা। তার নেতৃত্বেই এ দেশের গণতন্ত্র মুক্ত করতে হবে। মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। মানুষের অধিকার না থাকলে নারীর অধিকার কোথা থেকে আসবে। নারী-পুরুষ সবাইকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশের সবাইকে সমানভাবে অবদান রাখতে হবে। ড. মোশাররফ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি হয়েছে। যেমনিভাবে একজন নারী ভোটাধিকার বঞ্চিত করেছে, তেমনিভাবে একজন পুরুষ ভোটের অধিকার বঞ্চিত করেছে এই সরকার।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশও পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে। তারা এ নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে। তাদের প্রচার বিভাগ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। তিনি ৯ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত ৮ মার্চ আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রদত্ত এক বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ৩০ ডিসেম্বর নয়, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ব্যালট পেপার কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। তার বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, ৩০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিচালনায় ভোটারবিহীন নির্বাচনের নাটক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার এ বক্তব্য প্রদানের পরে ৩০ ডিসেম্বরের কথিত নির্বাচন রাজনৈতিক, সাংবিধানিক, আইনগত ও নৈতিক বৈধতা হারিয়েছে। তিনি সাক্ষ্য দিলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘কারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে, এ জন্য কারা দায়ী, কাদের কী করা প্রয়োজন, সেই শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা, যোগ্যতা নির্বাচন কমিশনের নেই। কী কারণে এগুলো হচ্ছে, তা বলারও কোনো সুযোগ নেই। এ কথা বলার পর বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ গোটা নির্বাচন কমিশনেরই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকার নৈতিক ও সাংবিধানিক কোনো অধিকারই তাদের নেই। তাদের ষোলকলা ব্যর্থতার কথা তারা স্বীকার করে নিয়েছেন।

এই বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৩০ ডিসেম্বরে ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের দায়দায়িত্ব তিনি বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের ওপর চাপালেন। এ থেকে দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দেশে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসন চলছে। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও মুখ খুলে কথা বলতে পারছেন না। আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা আদৌ সম্ভব নয়।

জামায়াত দাবি করেছে, ৩০ ডিসেম্বর জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের প্রহসন হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর সকালে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার আগেই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থীদের এজেন্টদের জোর করে বের করে দিয়ে প্রার্থীদের মারপিট করে আহত করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৯ ডিসেম্বর রাতে ও ৩০ ডিসেম্বর সকালে এক নিকৃষ্টতম ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের নাটক করা হয়েছে। এই নির্বাচন সব বিরোধীদলীয় জোট, দল এবং জনগণ ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচনের কোনো ধরনের বৈধতা নেই। অতএব, অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করে তাদের অধীনে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।