বিদেশে অপপ্রচার দেশবিরোধী না সরকারবিরোধী?

মোস্তফা কামাল: বিদেশে বসে দেশবিরোধী অপপ্রচার ও অপতৎপরতার অনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছে সরকার। বরাবরের মতো বলা হয়েছে, বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তারা কারা? নাম কী? কোন দেশে বসে দেশবিরোধী কী তৎপরতা চালাচ্ছে তারা?
পয়পরিস্কার জবাব নেই। কিন্তু তাদের আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি শোনানো হয়েছে খুব কড়া করে। ধরা যাক, কৌশলগত কারণে সরকার এখনই তাদের নামধাম প্রকাশ করছে না। সময় হলে হয়তো করবে। সরকার কিভাবে, কোন আইনের আওতায় আনবে তাদের? বিষয়টা এতো সোজা? এসব প্রশ্ন নিয়ে কৌতূহল অনেকের। তারা ভেবে পাচ্ছেন না, সরকার কী বাংলাদেশ স্টাইলে ‘দেইখা নিমু’ ধরনের হুঁশিয়ারি ছেড়ে বাতাস বোঝার চেষ্টা করছে? নাকি খুশিতে, ঠেলায় বা এমনি-এমনিই?
দুয়েকজন মন্ত্রীর সুর-স্বরে ওই অপতৎপরতাকারীদের অবস্থান যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশে বলে ইঙ্গিত মেলে। এখন পর্যন্ত কি ওইসব দেশের সরকারকে জানানো হয়েছে বিষয়টি? দেশগুলোতে কি বাংলাদেশের দূতাবাস বা কস্যুলেট অফিস নেই? ‘দেশের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা’ বলতে কী বোঝানো হয়- এ প্রশ্নও অমূলক নয়। ‘সরকার বিরোধিতা’, আর ‘দেশ বিরোধিতা’ কি এক কথা? দুটার একই অর্থ করলে কি মেনে নেবে পশ্চিমা কোনো দেশ? এছাড়া পাসপোর্ট বাতিল কী খুব সহজ? প্রবাসে থাকা কোনো কোনো বাংলাদেশির কিন্তু হোস্ট কান্ট্রির নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ওই দূর দেশে ফায়ার করা সম্ভব?
কয়েকজন ইউটিউবারকে নিয়ে এতো বিচলিত হওয়ার শিশুতোষ কাণ্ড শোভন নয়। স্মরণে আনতে হয় এমন স্থুলকাণ্ড তথা প্রস্তাব করে সৌদি আরব হাসির যোগান দিয়েছিল খাশোগিকে হত্যার আগে। তার চেয়ে বড় কথা, এ ধরনের হাঁকডাক সত্যিকারের রাষ্ট্রবিরোধীদের শেষ পর্যন্ত সুবিধাই এনে দেবে না তো?
পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের একটি কবিতার পঙক্তি ‘এসো ভাই তুলি হাই, ঠ্যাং করি চিত’- এখানে খুব প্রাসঙ্গিক। সচেতন মাত্রই জানেন, যাদের পাসপোর্টই নেই তারা রাষ্ট্রহীন, রিফিউজি। তাদের জন্য সারা দুনিয়াই খোলা। যে কোন দেশের নাগরিকত্ব পাবার এমন সুযোগ আর কেউ না নিলেও সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ যে নেবে না, তা কি বলা যায়?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।