ঠিকানা রিপোর্ট : যথাযাগ্য মর্যাদায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করলেন নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রথম প্রহরে ১৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিকে একদিন পর ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার মহান বিজয় দিবস। আর প্রবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
নিউইয়র্কে প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা। এ বছরও জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার উদ্যোগে নিউইর্য়কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটক।
নিউইয়র্কে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তান এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহ্বায়ক মিথুন আহমেদ।
এখানে উল্লেখ্য, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র দুইদিন পূর্বে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাত-রাজাকার-আলবদর-আলশামস্ বাহিনির নরপশুরা একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর এক নৃশংস বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা হত্যা করে বাংলাদেশের মেধাবী লেখক, কবি, সংগীতজ্ঞ, চলচ্চিত্রকার, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, দার্শনিক ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের। বাঙালি জাতির শোকাবহ এই বিপর্যয়ের দিনটিকে স্মরণ করার জন্যে বিগত ২৪ বছর ধরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে।
লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে সংহতি-সমাবেশটি রাত ১২টা ০১ মিনিটে প্রদীপ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বিজয় দিবস পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি : ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করার জন্য প্রবাসে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট, নিউইয়র্কে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন বিজয় দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত বিজয় মুহূর্তকে বিশেষভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিজ-এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর হিসাবে তিনি এবারের বিজয় দিবসে ‘বিজয়ের বায়ান্ন’ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, এই উদযাপনের ভেতর দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যুদ্ধের বীরত্বগাথা ও ঘটনাগুলোকে সবার সম্মুখে তুলে ধরা হবে।
১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরাস-এ শুরু হবে বিজয় উৎসব। অনুষ্ঠান চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের মাউন্টেইন ব্যাটালিয়ান কমান্ডার আবু জাফর মাহমুদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যথেচ্ছা বিকৃত করা হয়েছে। একেকটি রাজনৈতিক দল ব্যক্তি ও পরিবার চর্চার মাধ্যমে ইতিহাসের আংশিক ও বিকৃত তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে আমাদের দেশ ও জাতি লক্ষ্যভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত হয়েছে। দেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ দেখেনি।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, যে বৈষম্য, দুঃশাসন ও অনাচারের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনার গোড়াপত্তন, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সেই বৈষম্যকেই বছরের পর বছর লালন করেছি। আমরা পরিবারতন্ত্রকে লালন করেছি। আমরা জাতীয় সংসদের পবিত্রতা নষ্ট করেছি। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী ও সংগঠকদেরকে অবমূল্যায়ণ করতে করতে পরিকল্পিত বিস্মৃতির মুখে ঠেলে দিয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট যারা গড়েছেন, যুদ্ধে যারা সরাসরি সম্মুখে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাঁদের বীরত্বগাথা ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানকে আমরা পর্দার আড়ালে ঠেলে দিয়েছি। ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে আমাদের রাজনীতি ও সমাজ তথা গোটা জাতি। এখন সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে ফিরিয়ে আনার।
বাংলাদেশ সোসাইটি : প্রবাসের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কের ওজোন পার্কের দেশি সিনিয়র সেন্টারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ জানান, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সপরিবারে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস (বিপা) আগামী ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার জ্যামাইকা পারফরমিং আর্ট সেন্টারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিপার শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেবেন।
বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি