নারায়ণগঞ্জ : রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী প্লেন ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ মাহমুদ ওরফে মাহাদির বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। কর্মসূত্রে তিনি মাহাদি হিসেবে পরিচিত থাকলেও এলাকায় পলাশ মাহমুদ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের ছেলে। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা সিমলাকে।
নিহতের সর্বশেষ স্ট্যাটাস ঘৃণা নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে : নিহত মাহাদি ওরফে পলাশ মাহমুদের সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে নাম মাহিবি জাহান। সেখানে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিজনেস এনালিস্ট। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। বসবাস করেন যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে। তার ফেসবুকে দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত ছিল তার। তবে ‘অবাধ্য ছেলে’ উল্লেখ করে বাবা পিয়ার জাহান জানান, পলাশ কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেনি। তার ফেসবুকে দেখা যায়, সিমলাকে নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী বিরহের গান দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে আপলোড করেন তিনি। সেই সঙ্গে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সর্বশেষ পোস্ট করেছেন তিনি। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে, সর্বশেষ যে পোস্টটি তিনি করেন তা ছিল কারও প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১টা ৩ মিনিটে শেষ পোস্টে তিনি লেখেন ‘ঘৃণা নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে’। তবে যার প্রতি তার এত ঘৃণা তার নাম উল্লেখ করেননি তিনি। তবে তার আগের পোস্টগুলো দেখে ধারণা করা যায়, এ পোস্টটিও চিত্রনায়িকা সিমলাকে নিয়েই করা।
বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা সিমলাকে : ফেসবুকে নায়িকা সিমলার সঙ্গে অসংখ্য অন্তরঙ্গ ছবি রয়েছে পলাশের। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তারা বিবাহিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে ফেসবুকে সিমলার সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে পলাশ লেখেন এ হচ্ছে আমার বউ, যে আমার হাজার ভুলের মাঝে আমাকে সহ্য করে পার করে দিলো একটি বছর।
পিতার অবাধ্য ছিলেন পলাশ : পিয়ার জাহান ও রেনু আক্তার দম্পত্তির একমাত্র ছেলে ছিলেন পলাশ। পলাশের তিন বোনের মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়েছে। পিয়ার জাহান ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরব ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাবার দেওয়া টাকা-পয়সা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন পলাশ। নাচ, গান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করেছেন। এ দিকে পিয়ার জাহান এখন এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পিয়ার জাহান বলেন, পলাশ সোনারগাঁও উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও তাহেরপর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাস করে। এরপর সোনাগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় ঢাকা চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। একপর্যায়ে জানা যায়, পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। পলাশ ২০১৪ সালে বগুড়া সদর উপজেলায় মেঘলা নামে এক মেয়েকে প্রথম বিয়ে করে। তাদের সংসারে আড়াই বছর বয়সি আয়ান নামে একটি ছেলে সন্তান আছে। এ ছাড়া বছরখানেক আগে পলাশ চিত্রনায়িকা সিমলাকে বিয়ে করেছে বলে জানায়। এ সময় সিমলাও বিয়ের কথা স্বীকার করে।
হঠাৎ পরিবর্তন ঘটে পলাশের : পলাশের বাবা জানান, সর্বশেষ ২০ থেকে ২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে; মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশের মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে জানান তিনি।
পলাশের বাড়িতে এলাকাবাসীর ভিড় : এ দিকে প্লেন ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারীর বাড়ি সোনারগাঁওয়ে শুনে তার বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই তার বাড়িতে ভিড় ছিল।
এলাকাবাসী পলাশকে প্রতারক হিসেবে চিনত-পুলিশ সুপার : পলাশ মাহমুদ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে পলাশ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। পলাশের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে পুলিশ সুপার জানান, পলাশের পরিবার জানিয়েছে তাদের বাসায় দুইবার অভিনেত্রী সিমলা এসেছিল এবং তারা বিবাহিত বলেও দাবি করা হয়। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ভূমিকা কী হবে জানতে চাইলে এসপি বলেন, আমরা আপাতত তথ্য নিশ্চিতের কাজ করেছি। র্যাব থেকে তাকে আসামি দাবি করা হলেও আমরা সে তথ্য পাইনি, তবে র্যাবের দাবিকে ভুল বলছি না, সে আসামি হতেও পারে। মামলা নারায়ণগঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা নেই; তাই আমরা ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না। তবে তদন্তের স্বার্থে যদি আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন বিস্তারিত আরও জানার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১টায় দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবি পলাশের বলে নিশ্চিত করে।