বিশেষ মোজাতেই বাজিমাত রাকিটিচের

স্পোর্টস ডেস্ক : সেভিয়ার মধ্যবিত্ত সংসারে তিনি ছিলেন ধ্রুবতারা। বার্সেলোনার মতো বিত্তশালী পরিবারে গিয়েও নিজের স্ট্যাটাস বদলাননি। সুয়ারেজ, মেসি, ইনিয়েস্তা, পিকেদের মতো মহাতারকার ভিড়ে হারিয়ে যাননি। বরং আরও ঝকঝকে, ধারালো হয়ে উঠেছেন। শুধু ক্লাব স্তরেই নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেও সমান উজ্জ্বল তিনি। মডরিচ, পেরিসিচদের দলের নিউক্লিয়াস ইভান রাকিটিচ। তবে সম্প্রতি পারফরম্যান্স নয়, রাকিটিচ ইউরোপীয় প্রচার মাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন অন্য কারণে। মোজার কারণে। শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি। বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সিতে বা বার্সার জার্সিতে রাকিটিচকে দেখা গিয়েছে অদ্ভুত ডিজাইনের মোজা পরতে।
এমন মোজার রহস্য কী? কিট প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘টেপডিজাইন’ এর কর্ণধার মারিও অফনার জানান, মোজার সাফল্যের রহস্য। ‘অত্যাধুনিক ডিজাইনের এ মোজার বিশেষত্ব হলো, কোনোভাবেই মোজার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয় না। মোজার যে প্রান্ত গোড়ালির ওপরে থাকে, তা সঠিকভাবে পায়ের সঙ্গে লেগে থাকে। সাধারণত মোজার ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে গেলে খেলার মাঝপথে অস্বস্তিকর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে। এ ক্ষেত্রে সে রকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

ঘটনা হলো, উন্নতমানের মোজার ভেতরের সারফেসে রবার থাকে ইলাস্টিসিটি রক্ষা করার জন্য। তবে টেপডিজাইনের বিশেষত্বই আলাদা। এখানে পায়ের পাতায় ছোট ছোট গোলাকৃতি রাবার নব থাকে, যা যথেষ্ট আরামদায়ক। অন্তত সংস্থার কর্ণধারের দাবি এমনই।

২০১৫ সালে ব্যবসা শুরু এ কোম্পানির। অস্ট্রিয়া ছোট শহর গ্রাজে। অফনার ব্রাদার্স এবং থমাস ওয়েবার, আলেকজান্দার ক্রোইস ব্যবসা খোলেন। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কিট প্রস্তুত করার ভাবনা ছিল তাদের কাছে। ব্র্যান্ডের নাম দেওয়া হয় ‘টেপডিজাইন’। মারিও বলেন, ‘বর্তমানে আধুনিক যেকোনো মোজায় চামড়া জাতীয় দ্রব্য থাকে না পুরোপুরি। প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এখানেই আমাদের ডিজাইনের নতুনত্ব।’
ইভান রাকিটিচ নাকি এতটাই মুগ্ধ এ ধরনের মোজায়, যে বিশেষ আকৃতির এ ডিজাইন ছাড়া মাঠে নামার কথা ভাবেনই না। এমনটাই বলছিলেন অস্ট্রিয়ান মারিও। রাকিটিচের পা থেকে জনপ্রিয় হওয়া এ ‘গ্রাজ সকস’ বর্তমানে ইউরোপের অধিকাংশ ফুটবলাররা ব্যবহার করেন ডেলে আলি, কাইল ওয়াকার, পিয়ের অবামেয়াং, থরগান হ্যাজার্ড, ইব্রাহিম ট্রাওরে, আলভারো নেগ্রেদো, ডেভিড আলাবাদের মতো সুপারস্টারদের ভরসা এ মোজা। ইউরোপ সার্কিটে ২ হাজারের বেশি ফুটবলার বর্তমানে ব্যবহার করছেন বিশেষ ধরনের এ মোজা। ফুটবলারদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই এ টেপডিজাইনের মোজা।

কর্ণধারদের দাবি, শুধু ফুটবল নয়, টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, হ্যান্ডবল, রাগবির মতো খেলায়ও এ বিশেষ ধরনের মোজার ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। অস্ট্রিয়া থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মারিও জানান, ‘নিঝনি নভগরদে ক্রোয়েশিয়া বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে ইভান আমাদের কোম্পানির দুই কর্মীকে ডেকেছিল মোজার বিষয়ে। সেখানে বিশেষ ডিজাইনের অর্ডার করা মোজা পরেই ইভান খেলতে নেমেছিল মেসিদের বিপক্ষে। তার পরে তো আপনারাই দেখেছেন কিভাবে পারফর্ম করেছিল ও।’

অফনার জানান, ‘বার্সেলোনায় ইভানের মোজা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন স্বয়ং মেসি, সুয়ারেজও। মোজার বিষয়ে জানতেও চেয়েছেন। শিগগির মেসি, সুয়ারেজের পায়ে এমন বিশেষ মোজা দেখলে অবাক হবেন না।’ বিশ্বকাপে অস্ট্রিয়া যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তবে সে দেশের মোজাই এবার ফুটবল দুনিয়া কাঁপাচ্ছে। এটাও বা কম কী।