
অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় চলমান শতাব্দীতে পশ্চিমাবিশ্ব অতিমাত্রায় ইসলামাতঙ্কে ভুগছে। অত্যন্ত সুকৌশলে সে আতঙ্ক বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে খুব দ্রুতই ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মান ও চীনসহ সব অমুসলিম রাষ্ট্র এ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ইংরেজিতে যাকে ইসলাম-ফোবিয়া বলা হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, মুসলিম অধ্যুষিত বহু দেশকেও ইসলামভীতির ভাইরাসে আক্রান্ত করা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান বিদ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও প্রচারমাধ্যমগুলো নিজেদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য ও ভয়ঙ্কর তথ্য উপস্থাপন করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছেন। বিশেষ করে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের সঙ্গে ইসলামকে জড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী ইসলাম-ফোবিয়াকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া আধুনিকতা, নারী-স্বাধীনতা, উন্নতি-প্রগতি ও বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তরুণ প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আলতো করে ইসলামাতঙ্ক ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমা আগ্রাসননীতি এভাবেই এগুচ্ছে। সময়ে সময়ে এ ফাঁদে পা দিচ্ছেন কিছু মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবী।

৯/১১ ট্র্যাজেডির পর থেকে উদ্বেগজনক হারে ইসলাম-ফোবিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জার্মান। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন, বিশেষ করে সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে ইসলামকে জড়ানো এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতেই ইসলামের প্রতি আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। ইসলাম-ফোবিয়া বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পশ্চিমাবিশ্ব ব্যয় করছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। তৈরি করেছে বহু শক্তিশালী টিম। কথায় কথায় হাজির করছে কথিত জঙ্গিতত্ত¡। যারা দিনরাত বিশ্বকে গণতন্ত্র ও মত-পথের স্বাধীনতার সবক দেন তারাই আইন করে ইসলামের আজান ও পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নিজেদের ধর্মীয় পোশাক ইচ্ছেমতো পরলেও মুসলিম নারীদের হিজাবের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে নিষেধাজ্ঞা আইন প্রণয়ন করা হয়। অতিসম্প্রতি ভারতের অস্কারবিজয়ী গায়ক এ আর রহমানের মেয়ে তার ধর্মীয় পোশাক বোরকা পরে অনুষ্ঠানের স্টেজে উপস্থিত হওয়াকে নিয়ে কী তোলপাড় কা-ই না করা হলো সেখানেও ইসলামভীতি কাজ করেছে।
কিন্তু এত কিছুর পরও বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলাম তার স্বভাবজাত সৌন্দর্য ও আকর্ষণ নিয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে। চতুর্মুখী সম্মিলিত প্রোপাগান্ডা, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও যারাই ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করছেন তারাই ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হচ্ছেন। অতি সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা এ দাবির যৌক্তিকতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
জোরাম ভ্যান ক্লাভেরেন ডাচ পার্লামেন্টের একজন সাবেক এমপি। কট্টর ডানপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে যিনি পরিচিত। দেশটির চরম ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) এমপি হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় চরম ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন। বোরকা ও মিনার নিষিদ্ধের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা নেদারল্যান্ডসে ইসলামের কোনো ছিটাফোঁটাও দেখতে চাই না।’ এর চেয়েও তার জঘন্য বক্তব্য হলো ‘ইসলাম মানেই হলো মিথ্যাচার’ ‘কোরআন একটি বিষাক্ত গ্রন্থ।’ কিন্তু এ লোকটাই ইসলামবিরোধী বই লেখার জন্য পড়াশোনা করতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ভাঙে। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। (দৈনিক নয়া দিগন্ত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ইং)।
এ ধরনের বহু ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সাধারণ অমুসলিম থেকে নিয়ে শিক্ষিত ও ধর্মগুরু পর্যন্ত ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে সব খবর না এলেও কিছু খবর আসছেই। দৈনিক ইত্তেফাক ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ইং এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, কেনিয়ার পশ্চিম প্রদেশের খ্রিষ্টান পাদ্রি চার্লস ওকাওয়ানি দুই বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং কর্মস্থান ‘ওহিয়ে এলাহি’ গির্জার স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। দৈনিক কালের কণ্ঠ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ইং এর এক রিপোর্টে বলেছে, ভারতের তামিল সিনেমা শিল্পের অভিনেতা ও সংগীত পরিচালক কুরালারাসান সম্প্রতি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরালারাসানের ইসলাম গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ইসলাম-ফোবিয়া সত্ত্বেও ইসলামের সৌন্দর্য লালন ও আকর্ষণ বিকিরণের সংক্ষিপ্ত নমুনা এটি। বস্তুত পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যম ইসলাম সম্পর্কে যতই ভ্রান্তি, ভীতির তৈরি করুক না কেন, ইসলাম তার ঐশী সৌরভে সবাইকে বিমোহিত করবেই।