বিশ্বে আবার নেতিবাচক বার্তা

ঢাকা : চট্টগ্রামে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচলে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে। কয়েক বছর ধরে এই নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে রাখছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এরপর অস্ট্রেলিয়াও অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সরকারের আন্তরিক চেষ্টায় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্য সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও অস্ট্রেলিয়া করেনি। পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও আলোচনা চলছে।

ক‚টনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা সারা বিশ্বের নজরে এসেছে। এটি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বিষয়ে নেতিবাচক বার্তা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল হক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ ঘটনা বহির্বিশ্বে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি বহির্বিশ্বে একটি খারাপ বার্তা দেবে। তিন বছর আগে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অর্থ এই নয় যে তারা সারা জীবনের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে। এ ক্ষেত্রে আরো আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বা ডিজিটাল ব্যবস্থা আরো উন্নত করা উচিত ছিল। এসব বিষয়েও এখন প্রশ্ন আসতে পারে।

পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুর্বলতা বা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো বিশ্বের সামনে দৃশ্যমান করতে হবে।

গত কয়েক বছরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা মানের উন্নতির চেষ্টার মধ্যেও কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতার বিষয় গণমাধ্যমে এসেছে। চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঠিক তিন সপ্তাহ আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা তল্লাশি নিয়ে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকি : ভিআইপি ও তাদের সঙ্গীদের তল্লাশিতে যত অনীহা’। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থাসহ (আইকাও) বৈশ্বিক অনেক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা মানের দিকে দৃষ্টি রাখে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে এসে তারা দৈবচয়নের ভিত্তিতে পুরনো ভিডিও ফুটেজ দেখেছে। সেখানে অনেককেই তল্লাশি ছাড়া বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ঢুকে যেতে দেখা যায়। এটি বিমানবন্দরসহ বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসচিব মো. মহিবুল হক বলেছিলেন, নিরাপত্তা তল্লাশি ঠিকমতো না হলে সবাই ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ভিআইপি যাত্রী ও তাদের সঙ্গীরা বিদেশে বিমানবন্দরগুলোয় যেভাবে নিরাপত্তা তল্লাশিতে সহযোগিতা করেন, এ দেশেও তাই করবেনÑ এমনটা প্রত্যাশা করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী কোনো ভিআইপি নন, সাধারণ যাত্রী। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ‘অস্ত্র’ নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকেছেন ও ফ্লাইটে উঠেছেন। নিরাপত্তা তল্লাশির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই তার ফ্লাইটে ওঠার কথা। তাহলে কিভাবে তিনি ‘অস্ত্র’ নিয়ে বিমানে উঠে গেলেন সেই প্রশ্নও উঠছে।