বিশ্লেষকরা দেখছেন যেভাবে

জাতীয় ঐক্য

রাজনৈতিক ডেস্ক : গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। এ ঐক্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো বলছে, এটি ষড়যন্ত্রের ঐক্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ অবশ্য এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সে কারণে দলটির নেতারা মনে করছেন তাদের মতো বড় দলকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়। আমি মনে করি, একে বলা যেতে পারে দুরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের ঐক্য। কারণ এ ঐক্যে যারা রয়েছেন তারা বলছেন, বর্তমান সরকার নানা দুরাচার করছেন। ইতিহাসে দেখা যায়, রাজনৈতিক সংকটের সময় বিভিন্ন কারণে সরকারি দলের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে সেই সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। আমি মনে করি, এটাও হয়তো তাদের তেমনই আন্দোলন।

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ঐক্য তো হতেই পারে। নির্বাচন সামনে রেখে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা তো জানি, রাজনীতির বিকল্প রাজনীতি। এ দিক থেকে এ ঐক্য প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি আরেক শঙ্কাও কাজ করছে, অনেক দিন ধরেই ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী বলে আসছিলেন জামায়াতকে নিয়ে কোনো ঐক্য হবে না, হতে পারে না। কিন্তু গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির সঙ্গে ছায়া হয়ে এসেছে জামায়াত। এটা এ কারণে বলছি, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির এক নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, ২০ দলের সঙ্গে জামায়াত আছে এবং থাকবে। জামায়াত যদি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকে, তা হলে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষগুলো এটা কিভাবে নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এই ঐক্য বেশিদূর এগোতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ ঐক্য প্রক্রিয়াকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো আমিও সাধুবাদ জানাই। স্বাগত জানাই। কারণ গণতন্ত্রের স্বার্থে সংসদে এবং সংসদের বাইরে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন। এটা গণতন্ত্রের জন্যও ভালো, ক্ষমতাসীনদের জন্যও ভালো। এতে সরকারকে নজরদারিতে রাখা যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বিরোধীদল থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তো বিরোধী ভূমিকা নেই বললেই চলে। এই ঐক্য যদি বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে, তা হলে গণতন্ত্রের জন্যই ভালো হবে বলে আমি মনে করি।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, এটা একটা শুভ প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, যেহেতু দেশে দুটি বড় দল আছে, সেই বড় দলগুলোর মধ্যে যদি ছোট দলগুলো যুক্ত হয়, তা হলে তাদের যে ভয়েস তা সামনে আনতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে ছোটদলগুলোর পলিসি যুক্ত হয়ে নতুন কিছু হতে পারে। সেই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ঐক্য প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখতে পারে। সে কারণে এই ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমি স্বাগত জানাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসীন বলেন, এই জোট নিয়ে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। নির্বাচন সামনে রেখে এ রকম কিছু তো হতেই পারে। তবে নির্বাচন ঘিরে এই ঐক্যের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের প্রত্যাশা থাকবে। আসন বণ্টনের ব্যাপার আছে। এসব নিয়ে এই ঐক্য প্রক্রিয়া কতদূর এগোতে পারবে তা-ই দেখার বিষয়।