বীর্যের বেদনা

বেনজির শিকদার :

যে সকালগুলো দুঃখ নিয়ে আসে
তারে তোমরা কী কও?
কোন নামে ডাকো?
পাখির ঠোঁটে উড়ে যায় যে জীবন;
তার কাছে তোমরা কী চাও?
ছবিখানা— কোন রঙে আঁকো?

বিমূর্ত অন্ধকারে বুকের নোনায় পুষে দাঁড়াশের সঙ্গম;
যে রমণী একলা কাঁদে
বেদনার কলেবরে বাড়ে যার জল
যে ফড়িং হারিয়ে ফেলে কামনার কল্লোলিত সাধ;
বোধের অতীত যে বৈভব
সেই বোধ-বৈভবে দাঁড়িয়ে
বিবেকের বাটখারায় তারে তোমরা কোন দরে মাপো?

ছিঁড়ে ফেলে প্রাচীন অন্তর্বাস
যদি জেগে ওঠে মিথুনরত মহাজাগতিক খুন
বিন্দু থেকে বৃত্ত; আর সুইসাইডাল নোটে লেখা হয়
বেহিসেবি জীবনের যন্ত্রণা!
তারে তোমরা কোন কাতারে ফেলো?

জন্মের পাপে যে দেবদারু বে-শরম, উতলা হয়
যে দুহিতা হারায় যোনীর অধিকার
পানের পাতায় ক্রমাগত লাল হয় যে ঠোঁট;
যে শকুন মুখ দেয় উলঙ্গ ভাগাড়ে
আলগোছে চেটে খায় কমিনের গতর;
কালশিটে লেগে থাকা আফটার সেভের দায় যে পুরুষের
আঁধার মিলিয়ে গেলে তারে তোমরা কোন চোখে দেখো?

মিটিয়ে প্রাগৈতিহাসিক ঋণ,
যে প্রদীপ নিভে যায়-
অণ্ডকোষ বিবর্জিত ঘোড়সওয়ারের থাবায়!
যে ভাঁটফুল পড়ে থাকে নিত্যকার জ্বরে
ডিঙিয়ে পৃথিবীর চৌকাঠ-
যে মেঘ চলে যায় অন্তহীন ভোগে
যে শহর ঘুমায় না বহুকাল;
গাঢ় জিঘাংসায়-
ঊরু বেয়ে নেমে আসা লালরক্তে পিঠচাপড়ে হাসে!
যে বোঝে না বীর্যের বেদনা
প্রেমময় নাভীর অম্ল আবেদন।
প্রত্যাখ্যানের হাহাকারে তারে তোমরা কী দণ্ড দেবে?

পৃথিবী দেয় যারে জাগতিক সুখ
বুকের ওমে সাজায় মিছিলের পারিজাত পথ
থরথর কেঁপে ওঠা না-বলা তিয়াস
সাঁতরে পার হয়ে অবগুণ্ঠনের ঠোঁটকাটা গাঙ
পেয়ে গেলে বিশুদ্ধ রথ-
ক্ষীণ আয়ুরেখায় যে রমণে রাত হয় ভোর
অনার্য কর্ষণের তীব্রতায় তারে তোমরা কত দামে যাচো?

যে মাটি ভুলে যায় উষ্ণতার শপথ!
যে দোয়েল শিস দেয় অহেতুক অনাচারে
যে মানুষ চূড়ান্ত ব্যর্থতায় ধারণ করে
জগতের সমুদয় সফলতার ঘ্রাণ;
কিংবা খেয়ে নিলে অচ্ছুৎ অচিন বাগডাসায়-
যে পুরুষ মরে যায় নারীর পদতলে
যে নারী বিলীন হয় নোঙরহীন পুরুষের আদিমতায়
অনন্ত খরায় যে কবির শুকিয়ে যায় কাব্যশস্যমাঠ;
বীভৎস সময়ের তটরেখায় দাঁড়িয়ে
তার কাছে তোমরা কোন মহাকাব্য প্রত্যাশা করো?