বেদনায় অঙ্কুরিত সোনালী সূর্য ড. জোহা


সেজুতি চৌধুরী : আজকাল রোদেলা আকাশ, করুণ বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাস, পাতাঝরা নিঃসঙ্গ বৃক্ষ, সুখের উচ্ছ্বাস আর দুঃখের বাতায়ন সবই যেনো এক আপাত অকারণ প্রহরের বাতাবরণে ছেয়ে থাকে।
স্বদেশ ছেড়ে বহুদূরে এদেশে এসেও আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল মনকে চঞ্চল আর ভিন্ন এক অনুভূতিতে ভরে তোলে। ১৯৬৯ সালে দেশজুড়ে চলছিল গণঅভ্যুত্থান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মতিহারের সবুজ চত্বরে এক গগণস্পর্শী অতুলনীয় ঘটনায় আমাদের স্মৃতি সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সংগ্রামে আন্দোলনরত প্রাণপ্রিয় ছাত্রদের রক্ষা করতে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে জীবন দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা বা ড. জোহা।
’৬৯ এর ১৮ ফেব্রুয়ারির সকালটায় মহিতারের সবুজ চত্বরে এক করুণ বাতাস কি এক অজানা আশঙ্কা ব্যক্ত করছিল। তার প্রয়াণে আর নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
কিন্তু এই স্বাধীন দেশ পেতে যাদের অবিস্মরণীয় অবদান ড. দোহা তাদের অন্যতম। তিনিই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক যিনি জীবন দেন পাক হানাদারদের হাতে।
কিন্তু আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে খুঁজে পেতে কষ্ট হয় ড. জোহার নাম। দেশে এবং প্রবাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং সংশ্লিষ্টরাই শুধু তাকে স্মরণ করেন, শ্রদ্ধা জানান অবিস্মরণীয় এই অনিবার্য মানবকে। কোন পাঠ্যপুস্তকে, প্রকাশনায়, প্রচার মাধ্যমে, টিভিতে তার নাম তেমন করে আমরা দেখতে পাই না। জাতির পিতাকে হত্যা করে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি আর যার জীবনের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল তাকে ভুলে আমরা লজ্জিত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না।
ব্যাকুল মন বলে ওঠে-
আমি বারবার ফিরে আসি। সেই আমারই আবাস ভূমে। যেখানে গোয়াল ঘরে দুদেল গরু/ডোবানালায় মাছেরা খেলা করে/আনন্দে উদ্বেল হয় বুনো হাঁসেরা/ আর ঘুঘু ডাকে কদম গাছে/আনমনা হয় নতুন বধূ/ফিরে পেতে চায় তার ন্যায্য অধিকার/অবশেষে একদিন কেনো অনিবার্য সব অবশিষ্টাংশ হয়ে যায়।
ড. জোহা আমাদের হৃদয়ে আর তাঁকে আমরা দেখতে চাই চন্দ্রসূর্য স্পর্শ করা সংগ্রামী আর রাষ্ট্রীয় অক্ষরে। জয়তু ড. জোহা।
নিউ ইয়র্ক।