মোস্তফা কামাল : চার দিকে কত ঘটনা! চোখ মেললেই ঘটনা। প্রতিক্রিয়া বা বিরক্তি জানানো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কিছু বলতে না যাওয়াই নিরাপদ। মুখটা সামলে রাখায় বিপদমুক্তি। নিজেরই আরো বড় অঘটনের টার্গেটে পড়লে বাঁচাবে কে? মুখও খুলবে কেউ? মনেও রাখবে? বরং অঘটন ঘটন পটিয়সীদের পক্ষ নেয়। তাই ভয়ের রাজ্যে শান্ত প্রজা হয়ে থাকার বুদ্ধিমানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বোবার শত্রু নেই, কথাটি তারা কেবল রপ্ত নয়, আমলও করছেন। যত অপমান সয়ে মাথা গুঁজে কোনো মতে এই টিকে থাকাকে কি বাঁচা বলে?
এ ধরনের প্রশ্নের কূলকিনারা নেই কোথাও। ঘরে-বাইরে, ঘাটে-মাঠে, সমাজে, কর্মস্থলেও এই দুর্গতি। চুপ থাকা দোষ হিসেবে শনাক্ত। এই নোংরামিতে বোবাও পড়ছে শত্রুর কবলে। বাক প্রতিবন্দীও ধর্ষিত হচ্ছে। মাথা পিছু হিসাবে এই ধর্ষিতের মাথায়ও এখন অনেক আয়। গড়ের অংকে আয়ের সঙ্গে তার ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সহিষ্ণুতাও বেড়েই চলছে। সহ্য না করে যাবে কোথায়?
আইএমএফের একটি রিপোর্টের পর গত কয়েকদিন দেশ তোলপাড়। তৃপ্তি, প্রশংসা, বন্দনার ঝড়। মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছেÑ তা কি যা-তা ব্যাপার। আইএমএফ কেন বিশ্বব্যাংকের কৌশিক বসুরাও সার্টিফিকেট তো দিয়েই যাচ্ছেন। আর কী চাই? অন্ধ-বোবাসহ দেশের মানুষের আয় বাড়ার এসব তথ্য চাইলেই ডিলিট করা সহজ নয়। নাখান্দা আদমদের যা-ই হোক, চতুর এবং ক্ষমতাবানদের আয়ের সাথে আয়ুও বেড়ে চলছে, তা গোপন তথ্য নয়। ঘরের ভেতর আরেক ঘর, দফতরের ভেতর আরেক দফতর গড়ে উঠছে। করোনা ঝড়ে অনেকে কাজ হারিয়েছে। অনেকের বেতন কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাতে কী? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেই বা কী? কোনো পণ্যের কি অভাব, ঘাটতি, কমতি আছে? বিক্রিও কি কম?
এই কঠিন সময়ে দুর্নীতি, লুটপাট, নারী শিশু নির্যাতন, দখলদারিত্ব, চাতুরী, টেন্ডারবাজি কোনটা কমেছে? থেমে নেই কতৃত্ববাদ। তেল মালিশ। তথ্য বলছে, করোনার সময় ৭২ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেলেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। আমফান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, দেশের শ্রমজীবী মানুষ, বিদেশ থেকে আসা ও বিদেশে থাকা শ্রমজীবী মানুষের সংকট বাড়লেও সম্ভাবনার অপার রাজ্যে বসত গড়া মানুষের সংখ্যাও কি কম?
তাদের ওপর রাগ করলে ফল আসবে? মানুষ আর ভূত উভয়েই জানে ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। মানুষ রাগ কমাতে মাথায় পানি ঢালে। ভূতের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। বলা হয়ে থাকে, ভূতের রাগ কমে আলো বা আগুনে। আর মানব ভূতের রাগ কমাতে কী লাগে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।