ব্যাংক পরিচালকের মেয়াদ বাড়ল, খেলাপি ব্যক্তির দায় গ্রুপে বর্তাবে না

ঠিকানা অনলাইন : কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি ঋণ খেলাপি হলে গ্রুপভুক্ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি এখন থেকে খেলাপি হবে না, ব্যাংক কোম্পানি আইনে এমন সংশোধনী আনা হয়েছে। আরও তিন বছর বাড়িয়ে পরিচালক পদে টানা ১২ বছর থাকার সুযোগ তৈরি করে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০২৩ সংসদে পাস হয়েছে। তবে এ সংশোধনীর প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।

বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

পাস হওয়া বিলে পরিচালক পদের মেয়াদ টানা ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করাসহ ২০১৮ সালে সংশোধন করা সবশেষ ব্যাংক কোম্পানি আইনের আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে যারা ২০১৮ সালের পর থেকে ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছেন তারা ওই সময় থেকে আরও ১২ বছর থাকার সুযোগ পাবেন।

এদিন সংশোধনীতে কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি না হলে সেই খেলাপি ঋণের দায়ে গ্রুপভুক্ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে খেলাপি করা যাবে বলেও আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

এদিন বিলটি পাসের আগে এ দুটি সংশোধনীর প্রস্তাব আসে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর কাছ থেকে। তিনি পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ গ্রহীতার ঋণ সুবিধা বিষয়ক সংশোধনী দুটি প্রস্তাব করেন।

তিনি পরিচালকদের পদের মেয়াদ বিষয়ক সংশোধনীতে প্রস্তাব করেন, “আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন অথবা কোন ব্যাংক-কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৮ কার্যকর হবার পর কোন ব্যাক্তি কোন ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে ১২ বছরের অধিক অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।”

ঋণখেলাপি বিষয়ক অপর সংশোধনীতে তিনি প্রস্তাব করেন, “পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোন খেলাপি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা না হয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপী বলে গণ্য হবে না, এবং এইরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ততকর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।”

পরিচালক পদে সংশোধনী প্রস্তাবটি দেখে সংসদে জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য জোরালো আপত্তি তোলেন। এভাবে সংশোধনী আনার প্রক্রিয়া নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করার বিষয়টি বিল উত্থাপনের সময় ছিল না। যেহেতু সরকারি দলের সংসদ সদস্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তাই মনে হচ্ছে এটা গ্রহণ করা হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপনই হয়নি সেটা চাওয়া হয় কী করে? তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।

পরে এর প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পরে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন শুরু হলে তারা আবার যোগ দেন।

বিলটি পাসের বিরোধিতায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, খেলাপি ঋণ ১৪ বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমেছে। …সরকারি ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ গুণ বেড়েছে। বছরওয়ারি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণ। এ বক্তব্যে খেলাপি ঋণ নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’র কিছুটা অবসান হবে বলে আশা করেন তিনি।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬ বছর করা হয়। পরে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ২০১৮ সালে তা সংশোধন করে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর করা হয়, যা এখন ১২ বছর করা হলো।

এর আগে ২০১৮ সালে সংসদের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনার মধ্যেই ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে এক পরিবারের চার সদস্য থাকার সুযোগ দেওয়া হয়; এর আগে যা ছিল দুজন।

এরপর ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সমালোচনা এবং সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে আইনটি আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২১ সালের ১৭ মে এজন্য সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এবার একই পরিবার থেকে পরিচালক সংখ্যা চারজন থেকে কমিয়ে আবার তিন জনে বিধান যোগ করা হয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ব্যাংক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে এ শর্ত দিয়েছিল।

এ বিষয়ে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দু’টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।”

এসআর