বড় জয়ের পরও অতৃপ্তি

বাংলাদেশ ১০ : ০ বাহরাইন

স্পোর্টস রিপোর্ট : কমলাপুর স্টেডিয়াম গেটে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে দেখা মিলল অভাবনীয় দৃশ্য, বাংলাদেশি কিশোরী ফুটবলাররা টিম বাসে উঠবে, হাজারখানেক দর্শক দুই দিকে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে, সবার মুখেই ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। বছর পাঁচেক ধরে দারুণ খেলা লাল-সবুজ নারী ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে মাঠে দর্শকের ঢল থাকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বরও ব্যত্যয় ঘটেনি কমলাপুর স্টেডিয়ামে। উজ্জীবিত কিশোরীরা বড় জয় দিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব শুরু করেছে স্বাগতিকরা; মারিয়া, রিতু, নাজমা, মনিকা, আঁখি, রূপনারা ১০-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাহরাইনকে। হ্যাটট্রিক না পেলেও জোড়া গোল করেছে অধিনায়ক মারিয়া মা-া, আনুচিং মগিনি ও ছোট শামসুন্নাহার; অন্য ৪ গোল আনাই মগিনি, তহুরা খাতুন, বড় শামসুন্নাহার ও সাজেদা খাতুনের। দুই বছর আগে জায়ান্ট ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ, এবার আরও বড় ব্যবধানে। গত আসরেও ১০-০ গোলের জয় পেয়েছিল লাল-সবুজ কিশোরীরা, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হারিয়েছিল উজবেকিস্তানকে।বড় জয় পেলেও গোল নিয়ে কিছুটা অতৃপ্তির কথা ম্যাচ শেষে জানালেনও স্বাগতিক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কেননা প্রথমার্ধে ৫-০ গোলে এগিয়ে থাকা দল ৩২ মিনিট ১০ জনের প্রতিপক্ষ পেলেও তিনটির বেশি গোল করতে পারেনি। কোচের কথা, ‘আরও গোল হওয়া উচিত ছিল, অন্তত ৪-৫টি। মেয়েরা ভালো কিছু সুযোগ নষ্ট করেছে; গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি, শট বাইরে গেছে।’ তবে শিষ্যদের খেলায় খুশি কোচ।
কোচের মতো গোল নিয়ে আক্ষেপে পুড়তে পারে আনুচিং, মারিয়া ও ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার। জোড়া গোল করা তিন কিশোরীই হ্যাটট্রিক করার সুযোগ পেয়েছিল প্রথম ম্যাচে, ব্যর্থ হয়েছে নিজেরা; কংবা হতাশ করেছে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক জারা নেজার আলি। মারিয়ার দুটি শট পোস্টে লাগে, গোলরক্ষক রোখে তিনবার, জারাকে দুইবার একা পেলেও বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শামসুন্নাহার। আনুচিং ডি-বক্সের ভেতর দুইবার বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেয়। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নেন কোচ। তবে হ্যাটট্রিক না হওয়ায় ‘আক্ষেপ নেই’ জানায় মারিয়া, শামসুন্নাহার; দুইজনেরই এক সুর, ‘আমরা আসলে একটা দল হয়ে খেলি, নিজেদের কথা ভাবি না। মাঠে দেখবেন গোল করার মতো অবস্থায় থেকেও যদি দেখি আমার চেয়ে ভালো জায়গায় আরেকজন আছে তাকে বল ছেড়ে দেই। আমাদের কাছে নিজে গোল করার চেয়ে দলের জয়টা গুরুত্বপূর্ণ।’

আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ লেবানন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে ৬-৩ গোলে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে আসরে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে লেবানিজ কিশোরীরা; একাই ৪ গোল করেছে জাহরা আসাফ। প্রথম ম্যাচে তারা জিতেছিল ৮-০ গোলে।

শুরুটা ভালো করতে পারায় লেবানন ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিল স্বাগতিকরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে যে কৌশলে রদবদল হবে; ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন কোচ, ‘সব দলই সমান, তারপরও কখনও কখনও কৌশল পরিবর্তন করতে হয়।’ কেননা স্বাগতিকদের শক্তি-সামর্থ্য জেনে পাঁচ ডিফেন্ডার ও চার মিডফিল্ডার খেলিয়েছে, রক্ষণ কাজ করেছে ডি-বক্সের ঠিক ওপরে। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারে খেলেছে দীর্ঘদেহী মরিয়ম জামাল ও ডানা বাসেম; তাদের দেওয়াল ভাঙতে কঠিন হওয়ায় দূর থেকে শট নিতে হয়েছে। যদিও ৫৮ মিনিটে শামসুন্নাহারকে ডেঞ্জার বক্সে ফেলে ডানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মার্চিং অর্ডার পাওয়ায় দলের শক্তি খর্ব হয়েছিল। কিন্তু এরপর গোলরক্ষক নানা ছুতোয় সময় নষ্ট করে দলকে আরও বড় ব্যবধানে হার থেকে রক্ষা করে। ফলে ১০ গোলে হেরেও যে খুশি দেখা গেল শেষ বাঁশির পর নিজেদের মধ্যে হাইফাইভ করা দেখা; মাঝ মাঠে স্ট্রাইকার মানার রিদা কাঁদতে চাইলেও তাকে তিন সতীর্থ তাকে পিঠ চাপড়ে সান্ত¦না দিয়েছেএক বছর ধরে ফুটবল খেলা বাহরাইন কিশোরীরা ঢাকা আসার আগে প্রস্তুতি নিয়েছে ২ মাস। এর মধ্যে যতটা সম্ভব দলটাকে তৈরি করার চেষ্টা করেছেন কোচ খালেদ হাসান তালেব; নিয়মিত একাদশের সাতজনকে আনতে না পারায় দলের শক্তি নাকি খর্ব হয়েছে মনে করেন তিনি। তারা থাকলেও কি রুখতে পারত বাংলাদেশকে?