ভবিষ্যদ্বাণী নয়, রাজনৈতিক বক্তব্য!

শিতাংশু গুহ : পাগলের রকমভেদ আছে, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ হয়তো রাজনৈতিক পাগল। তিনি আবার জ্যোতিষী? ২০২২ সালের শেষে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ২০২৩-এ আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ বাধবে এবং যুদ্ধের পর টেসলা ও টুইটার প্রধান ইলন মাস্ক হবেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বেশ কটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে, ২০২৩-এ ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধ বাধবে?
গুগলকে প্রশ্ন করলাম, ফ্রান্স-জার্মানি যুদ্ধের কি কোনো শঙ্কা আছে? গুগল পাশ কাটিয়ে উত্তর দিল, ইউক্রেন প্রশ্নে ইইউর বৃহত্তম দুই দেশের মধ্যে কিছুটা সমস্যা আছে। দুই দেশের মধ্যে একটি মিটিং বাতিল হয়েছে। ‘জ্বালানি সংকটে’ দুই দেশ দুই রকম ভাবছে। বার্লিন তাকিয়ে আছে ওয়াশিংটনের দিকে, প্যারিসের দৃষ্টি নিবদ্ধ ইইউর দিকে।
যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গণকের ভবিষ্যদ্বাণী পুরোপুরি রাজনৈতিক, পুতিনকে খুশি করা? আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা কেউ দেখছেন না! আর টেলসার প্রধান এ বছর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রেসিডেন্ট হওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছেন বলে শোনা যায়নি। গণক ভদ্রলোকের ইতিমধ্যে পদোন্নতি হয়েছে। তিনি পুতিনের সুনজরে আছেন।
দিমিত্রি মেদভেদেভ আরো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। যেমন ব্রিটেন আবারো ইইউতে ঢুকবে, এরপর ইইউ ভেঙে যাবে। তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল দেড়শ ডলার হবে। ইউক্রেনের পশ্চিম অংশ হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড দখল করে নেবে। জার্মানিতে চতুর্থ রাইখের উত্থান ঘটবে। নর্দান আয়ারল্যান্ড ব্রিটেন ছেড়ে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে। এশিয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হবে।
আমেরিকা চায় ইইউ ভেঙে যাক, ইউক্রেন যুদ্ধ না থামলে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তেলের দাম বাড়ছে, বাড়তেই পারে? রাইখের উত্থান হয়তো ঘটবে না, তবে ইসলামি মৌলবাদ দেশে দেশে ডানপন্থী শক্তিকে চাঙা করে দিয়েছে। আমেরিকা-ইউরোপ থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এশিয়ায় যাচ্ছে, তা প্রায় সকল অর্থনীতিবিদ বলছেন, এ জন্য গণকের দরকার পড়ে না।
ইউক্রেন সম্পর্কে দিমিত্রি মেদভেদেভের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হতে পারে। অভিনেতা ভলাদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। ইউক্রেনের জনগণ নেতা নির্বাচনে ভুল করেছেন, এখন খেসারত দিচ্ছেন। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের কিছুটা অংশ দখলে নিয়েছে, সুযোগ বুঝে অন্যরা নেবে, সেটাই হয়তো স্বাভাবিক।
নর্দান আয়ারল্যান্ড ব্রিটেন ছেড়ে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এগুলোকে ভবিষ্যদ্বাণী না বলে রাজনৈতিক বক্তব্য বললে মানাত ভালো। তিনি রাজনীতিবিদ, দেশ-বিদেশের খবর রাখেন এবং পুতিনকে খুশি রাখতে হবে, তাই হয়তো ওসব কথা বলছেন। হয়তো ২০২৩-এ তিনি ‘লাইমলাইটে’ আসতে চান?
৭ জানুয়ারি ২০২৩