ভাত ছেটালে শুধু কাক নয়, মানুষও আসে: চঞ্চল চৌধুরী

ঠিকানা অনলাইন : দুই বাংলারই জনপ্রিয় মুখ চঞ্চল চৌধুরী। অভিনয় জীবনে এখন সেরা সময় পার করছেন তিনি। তবে শোকের সাগরে ভাসতেও দেখা যায় এ অভিনেতাকে। যখনই তিনি বিষাদের নীল সাগরে ডুব দিয়েছেন, তখনই সে ব্যথা ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন চঞ্চল। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

২০ মার্চ (সোমবার) বিকেলে ফেসবুকে অভিনেতা চঞ্চল একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন ভক্তদের সঙ্গে। সে স্ট্যাটাস থেকে বোঝা যায়, বাবার মৃত্যুর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

পোস্ট করা ওই স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দুটি ছবি পোস্ট করেছেন চঞ্চল। ওই ছবি দুটিতে কাককে উদ্দেশ্য করে অভিনেতা ফিরে গেছেন তার শৈশবের স্মৃতিতে।

পাঠকদের জন্য চঞ্চল চৌধুরীর সেই ফেসবুক পোস্ট তুলে দেয়া হলো-

ছোটবেলা থেকেই গ্রামে থাকার সুবাদে দেশীয় অনেক পাখির সাথে পরিচয় হয়েছিল, সখ্যতা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কাক, শালিক, টুনটুনি, কবুতর, ঘুঘু, টিয়া, চড়ুই, ফিঙে, বুলবুলি, ময়না, বক….ইত্যাদি।

ওদের সাথে হাটে, ঘাটে, মাঠে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতো। ওদেরও মনে হতো একই গ্রামের বাসিন্দা। তবে পরিবারের সদস্য মনে হতো কাক আর শালিককে।

প্রতিদিনই বাড়ির বাঁশঝাড়, গাছ আর উঠোনে ছিল ওদের চঞ্চল ছুটাছুটি। জোড়া শালিক দেখলে যেমন যাত্রা শুভ হয়, ঠিক তেমনি সনাতন ধর্ম মতে বাবা মায়ের মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রথমে কাকের মুখে খাবার তুলে তারপর নিজেদের খাবার খাওয়ার ধর্মীয় রীতি প্রচলিত আছে।

সে কারণেই অন্য পাখিদের চেয়ে কাক কে একটু অন্যভাবে চিনেছিলাম। দুপুরবেলা গাছের ডালে কাকেরা কা কা কা কা করতো, আর আমাদের মা ভাত ছিটিয়ে দিতেন প্রতিদিন। এভাবেই আমাদের মতোই মায়ের হাতের ভাত কাকসহ অনেক পাখিই খেতো।

কাকের কণ্ঠটা কর্কশ, কিন্তু রং টা কুচকুচে কালো। কালো রং আমার খুব পছন্দের….“ভাত ছেটালে কাক আসে” এই কথাটি বলে শুধু কাকদেরকে অপমান করা হয়েছে। ভাত ছেটালে সকল প্রাণীই আসে, মানুষও বাদ যায় না।

ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের পাতায় আঁকা কিছু কাকের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ছবিগুলো এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, সেই ৪৩ এর দুর্ভিক্ষের সময়।

মানুষ,কাক আর কুকুর ডাস্টবিন থেকে খাবার খাচ্ছে, যেন সবাই এক….শত্রুও একটাই…ক্ষুধা। কোন যোগসূত্র ছিল কিনা মনে নেই, পরবর্তীতে আমি কিন্তু জয়নুল আবেদীনের আর্ট কলেজ অর্থাৎ চারুকলায় লেখাপড়া করেছি।

আর পুরো চারুকলা জুড়ে দেখেছি সেই জয়নুল আবেদীনের কাকের দেশ। চারুকলায় কাকদের সাথে অনেক বছর পার করেছি একই গাছের ওপর নিচে।

এখনও চারুকলায় গেলে ওদের সঙ্গে কথা হয়। অনেক কাকেরই বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছে। যেমন কিছুদিন আগে চলে গেছে আমার বাবা।

পৃথিবীর সকল কাক ভালো থাক….
সকল প্রাণী ভালো থাক॥

ঠিকানা/এসআর