ভারতের অর্থায়নে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প

মঈনুদ্দীন নাসের : মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নির্মাণে ভারত ও জাপান অর্থায়ন করছে। আর পরীক্ষামূলকভাবে এসব কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প চালু করার জন্য ভারত তাদের দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমারে ঠেলে দিচ্ছে। ভারতের আসাম ও অন্যান্য স্থানে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টের জন্য রয়েছে ডিটেনশন সেন্টার। অনেক রোহিঙ্গা সে সব ডিটেনশনে আটকে আছে। ২০১২ সাল থেকে সেখানে রোহিঙ্গাদের অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে ডিটেনশনে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের আসলে বিতাড়ন করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে। অনেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে অনেক ভারতীয় যারা বার্মায় কাজ করতেন তাদের বিতাড়ন করা হয়। অনেকের সেই বিখ্যাত পতঙ্গ ছবির গান মনে আছে নিশ্চয়ই ‘মেরী পিয়া গিয়ে রেঙ্গুন….ইয়াদ সিতাতি হ্যায়।’ দেরাদুন ও রেঙ্গুনের মধ্যে কথোপকথনের সেই কথা কারও ভুলার নয়। ভারত থেকে অনেক হিন্দু ও মুসলমান সে সময় রেঙ্গুনে যায়। আজ ভারত সে বন্দরে কথা ভুলে গিয়ে রেঙ্গুন থেকে বিতাড়িতদের ফেরত পাঠাচ্ছে। আর তাদের রাখা হবে ভারতের অর্থে নির্মিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। বাংলাদেশ সেই ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি।
গত ৩ অক্টোবর ভারত ৭ জন রোহিঙ্গাকে আসামের ডিটেনশন সেন্টার থেকে সীমান্তে নিয়ে যায়। পরদিন তাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে ভারতের ৪০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ভারতে ৪০,০০০ রোহিঙ্গার মধ্যে জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর রিফিউজি (ইউএনএইচসিআর) ১৬,৫০০ রোহিঙ্গাকে পরিচয়পত্র দিয়েছে। তাতে বলা হয় যে, ‘এদের সাহায্য করেন। তাদের হয়রানি, গ্রেফতার, আটক এবং ডিপোর্টেশন থেকে বাঁচান।’
ভারত বলছে, তারা এই শর্ত স্বীকার করে না। তারা জাতিসংঘের রোহিঙ্গাদের ডিপোর্টেশন বিরোধী অবস্থাকে স্বীকার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের যেখানে তাদের জীবন বিপন্ন সেখানে ফেরত পাঠাচ্ছে। ভারতের হোম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভারত ভূষণ বলেন, যে কেউ যদি এদেশে বৈধ পারমিট নিয়ে না আসে সে অবৈধ বিবেচিত। আইনানুসারে যেকোনো অবৈধকে ফেরত পাঠানো হবে। আইনানুসারে তাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। রয়টারের পক্ষ থেকে জম্মু ও দিল্লিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখা গেছে। তারা সেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছে ক্রমাগত।
অনেকে ভয় করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার সব রোহিঙ্গা মুসলমানদের ডিপোর্ট করে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে চায়। মুসলমান বিতাড়ন নির্বাচনে জেতার জন্য মোদি সরকারের জন্য মোক্ষম অস্ত্র। আবার অন্যদিকে ভারতের অর্থায়নে নির্মাণ করা মিয়ানমারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোও চালু করতে হবে। বিজেপি প্রধান অমিত শাহ বলেন, সকল অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট জাতির নিরাপত্তা সংকট বাড়াচ্ছে। অমিত শাহ বলেন, বিজেপিকে আগামী বারের জন্য জেতালে একটি অবৈধও তারা এদেশে থাকতে দেবে না। তবে তিনি মাইগ্রেন্ট গ্রুপের কথা বলেনি। সেজন্য সেখানে যদি আসামের বাঙালিদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয় তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম প্রধান জম্মু ও কাশ্মিরের হিন্দু প্রধান এলাকায়ও বাস করেন। এই উত্তেজনাপূর্ণ হিমালয় এলাকার রাজ্য যা পাকিস্তান ও ভারত শাসিত অঞ্চলের মধ্যে মুসলিম যোদ্ধাদের আবাসস্থল সেখানে প্রায় ৭০০০ রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে মাচা বেঁধে বাস করছেন। বিশেষ করে জম্মু অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের একজন শহিদুল্লাহ বলেন, সেখানে মিয়ানমারে তারা যেভাবে বসে দিনযাপন করতো সে রকম চায়। তারা ভালো চাকরি পাবে, মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবে- সে আশায় এখানে এসেছেন। এসব সত্য যে ভারতের কাছে তারা এসবের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে একই সাথে বাড়ছে ঘৃণা।
এদিকে, ভারত জোর করে ঠেলে রোহিঙ্গাদের পাঠালেও বাংলাদেশ তা করতে পারছে না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা রিফিউজিদের মিয়ানমারে ঠেলে পাঠাচ্ছে না। কারণ কনসেনট্রেশন ক্যাম্প হবে অমানবিক। নিউ ইয়র্ক টাইমস মিয়ানমারে যেভাবে রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে তাকে ২১ শতাব্দীর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেখানে এখন ১,২০,০০০ রোহিঙ্গা আছে কাঁটাতারের ঘেরার মধ্যে। সেখানে চাকরি নেই। স্বাস্থ্যসেবা নেই, নেই কোনো শিক্ষা, সেখানে কুঁড়েঘরের মতো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য। আর ভারত ও জাপান করছে বিনিয়োগ। আর ফায়দা গুনবে লাভের।