ভালবাসার তৃষ্ণা

সারওয়ার চৌধুরী

মাসুদের সকালটাই যেন মাটি! রুবির সাথে মনোমালিন্য করে সকালের নাস্তাটাই করা হয়নি। ডানকিন ডোনাটে নাস্তা সেরে কফি হাতে নিয়ে গাড়িতে বসলো। দিনের শুরুতে কামাইয়ের আগেই দশ ডলার খরচ! গাড়ি স্টার্ট দিলো। রোববার সকালে রাস্তাঘাট এমনিতেই ফাঁকা। সচরাচর রোববারে সে লেট করে কাজে আসে! কিন্তু আজকের পরিস্থিতিটা ভিন্ন।
সাদা বয়স্কা একজন মহিলা হাত তুলতেই মাসুদ গাড়ি থামাল।
– গুড মর্নিং! প্রফেশনাল একটা হাসি দিয়ে সে মহিলার দিকে তাকায়।
– গুড মর্নিং! তুমি কি টাইম স্কোয়ারে যাবে?
মাসুদের মেজাজটা কিছুটা হলেও খুশি! যাহোক প্রথমেই একটা লং ট্রিপ পাওয়া গেলো! সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই ভদ্রমহিলা গাড়িতে উঠে বসে। ব্রঙ্কস থেকে ট্রাফিক জ্যামহীন হাইওয়ে ধরে টাইম স্কোয়ারে আসতে সময় লাগলো মাত্র বিশ মিনিট।
– ভালো একটা জায়গা দেখে গাড়িটা পার্ক করো- মাসুদকে লক্ষ্য করে মহিলা বললো।
মাসুদ বুঝতে পারছে না যে, মহিলাতো এখানে নেমে যাবে, তাহলে গাড়ি পার্ক করার প্রয়োজন কি? মিটার ফ্রি রোববারে নিউইয়র্ক সিটিতে। বিশেষ করে টাইম স্কোয়ারের মতো জায়গায়, পার্কিং পাওয়া কষ্টকর। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর একটা পার্কিং স্পট পাওয়া গেলো।
– তুমি যদি আমার সাথে আসো আমি খুব খুশি হবো! মহিলা মাসুদকে অনুরোধ করে।
মাসুদ এবার কিছুটা বিরক্ত! মহিলার উদ্দেশ্য কি? দেখেতো মনে হয় বয়স সত্তর-পঁচাত্তরের কম হবে না। এ বয়সে কি ভীমরতি ধরেছে !?! বিরক্তিভাব নিয়ে সাথে সাথে চললো। টাইম স্কোয়ার চত্বরের মাঝামাঝি রাখা চেয়ারগুলোর একটিতে বসতে বসতে সামনাসামনি আরো একটি চেয়ার দেখিয়ে মাসুদকেও বসে পড়ার ইশারা করে বৃদ্ধা। মাসুদ ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে! কি রকম এক মহিলার খপ্পরেই না পড়েছে সে! একবার চিন্তা করে পুলিশ কল করবে! আবার সেই চিন্তা থেকে ফিরে আসে, অলরেডি দুটি ড্রাইভিং ভায়োলেশন তার এগেইনেস্টে। মহিলার মুখে কোন কথা নেই, শুধু স্নেহের দৃষ্টিতে মাসুদের দিকে তাকিয়ে আছে! মায়ের বয়সী একজন মহিলা, কিন্তু তার হাবভাবতো মোটেই সুবিধার নয়! এভাবেই ঘন্টা দুয়েক পার হলো।
– ঠিক আছে, এবার ওঠা যাক! ভালো দেখে একটা রেস্টুরেন্টে চলো। মাসুদের দিকে তাকিয়ে মহিলা বলল।
মহিলার দেখিয়ে দেয়া দামি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করে মাসুদ। এবার বোধকরি বিদায় মিলবে! কিন্তু না, গাড়ি থেকে নেমেই সে মাসুদকেও নেমে আসার জন্যে ইশারা করে। বিরক্তির মাত্রা বাড়লেও মাসুদ জানে, সে যদি না করে তবে এ মহিলাও তাকে ছাড়বে না! মহিলার হাবভাব তার ভালো করে বোঝা হয়ে গেছে।
কথা না বাড়িয়ে পেছন পেছন রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। একটার পর একটা দামি খাবারের অর্ডার দেখে মাসুদ কিছুটা শঙ্কিত! দেখতে তো রোগা, তারপর বয়সটাও কম নয়! এ বয়সে খাবার-দাবারে এতো রুচি? যা হোক, এতো খাবার অর্ডার করলেও সে কিন্তু বেশি কিছু খাচ্ছে না, বরং একটু একটু করে টেস্ট করে মাসুদকে পেট ভরে খাওয়ার অনুরোধ করছে! এত্তোসব খাবার তো আর একজনের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও মাসুদ সিজার, সালাদ আর মাছের আইটেমগুলো পেট ভরে খেলো। খাবার পালা শেষ। ওয়েটার টেবিলে বিলের কাগজটা রেখে গেছে। বিলটা হাতে নিয়েই সে মাসুদের দিকে তাকায়
– তোমার কাছে কি দুশো ডলার হবে?
ও মোর জ্বালা! মাসুদের মনে হচ্ছে চিৎকার দেবে! বুড়ি, তোর যদি টাকা না থাকে, তবে কেনো এতো দামি রেস্টুরেন্টে খেতে আসলি!?! কথাগুলো অবশ্য তাকে বলা হয়নি। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো সে। এখানে কিছু বলতে গেলে পাবলিকের সিম্পেথিটা বুড়ির দিকেই যাবে, আর সব দোষ তার ঘাড়ে বর্তাবে।
জীবনে অনেক টাকা-পয়সা নষ্ট হয়েছে। আজকেরটাও না হয় সেগুলোর সাথে যোগ হলো! পকেটে তো কোন ক্যাশ নেই, অগত্যা একটি ক্রেডিট কার্ড বের করে ওয়েটারকে বিল চার্জ করতে দিলো। প্রচ- রাগে জ্বলছে সে! কি রকম এক বাজে মেয়েলোকের খপ্পরেই না পড়েছে!
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠেই মহিলা বললো- চলো হোয়াইট প্লেইন গোরস্থানে।
গোরস্থান! গোরস্থানে গিয়ে মরবে নাকি? জ্বীন-ভূত নয়তো?
মাসুদের ভেতরটায় যেনো অনেক জটিল, রহস্যময় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ভেতরে যতো প্রশ্নই আসুক, মুখ খুলছে না মাসুদ! মহিলার আচরণ খুবই আশ্চর্যজনক, পরে যদি আবার কোন বিপদ হয়! কোন কথা না বাড়িয়েই রওয়ানা দিল হোয়াইট প্লেইন গোরস্থানের দিকে।
গোরস্থানের সামনে গাড়ি থামিয়ে মাসুদকে বসিয়ে রেখে সে একাই ভেতরে গেলো। বেশ কিছু সময় পর ফিরে আসলো!
মাসুদ একবার চিন্তা করছিলো চলে যাবে, কিন্তু কি রকম এক আগ্রহ যেনো তাকে আটকে রেখেছে! মহিলার চোখ দুটো লাল দেখাচ্ছে। মনে হয় কবরস্থানে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে!
গাড়িতে উঠেই বললো- চলো। এবার আমি ব্যাংকে যাবো।
ব্যাংকে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফিরেই একটা ঠিকানা মাসুদের হাতে ধরিয়ে দিলো। ঠিকানাটা একটা হাসপাতালের। মাসুদ কিছুই বলছে না। নিজেকে একটা ব্যাটারিচালিত পুতুল মনে হচ্ছে! মহিলা যেভাবে তাকে চালাচ্ছে, সেভাবেই সে চলছে! হাসপাতালের কাছাকাছি যেতেই মাসুদকে ইশারা করে- ঐ কফিশপের সামনে গাড়ি পার্ক করো।
পার্ক করতেই সে বেরিয়ে এসে মাসুদকে অনুরোধ করলো- তুমিও আমার সাথে আসো, দুজনে একসাথে কফি খাবো!
মাসুদের মনে হচ্ছিলো ওর ঝুলে পরা বুড়ো গালে কশে একটা চড় লাগায়! না, সে তো ঠিক করেই রেখেছে এ মহিলার সাথে কোন কথা বাড়াবে না। ধীরস্থিরভাবে কোন কথা না বলে মহিলার পেছন পেছন কফি শপের এক কোণায় বসলো! মনের মধ্যে শুধু একটাই চাওয়া, ঝামেলাহীনভাবে কোনরকমে এ বাজে মহিলার খপ্পর থেকে বেরিয়ে যাওয়া!
মহিলা উঠে গিয়ে নিজহাতে দুটো কফি বানিয়ে একটা কাপ মাসুদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ফ্রেঞ্চ ভ্যানিলা, আমার খুব প্রিয় কফি, আশা করি তোমারও ভালো লাগবে!
মাসুদের গায়ে আগুন জ্বলছে। মহিলা যেনো বেহায়াপনার সব সীমাই ছাড়িয়ে যাচ্ছে!
– কি ভাবছো? মহিলার জিজ্ঞাসায় মাসুদ যেনো নিজের মাঝে ফিরে আসে।
– না, কিছু না।
– আমি জানি, তুমি আমাকে নিয়েই ভাবছো! আমার সারাদিনের আচরণে তুমি বিরক্ত। মহিলা একাই বলে যাচ্ছে, মাসুদের যেনো কিছুই বলার বা শোনার ইচ্ছে নেই।
– সারাদিন তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার আচরণের জন্যে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তোমার বয়সী আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। ছেলেটা তার পরিবার নিয়ে ফ্লোরিডায়, আর মেয়েটা ক্যালিফোর্নিয়ায় সেটেল্ড। দুজনই ভাল চাকরি করে ও প্রতিষ্ঠিত। তাদের সময় নেই নিউইয়র্কে এসে আমাকে দেখার। আর আমিও নিউইয়র্ক ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাই না। এখানে আমার একটা বাড়ি আছে, যেটা আমার প্রয়াত স্বামীর অনেক কষ্ট আর পরিশ্রমের ফসল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও একতরফা কথাগুলো মাসুদ প্রতিক্রিয়াহীনভাবে শুনছে।
– গাড়িতে ওঠার পর পেছন থেকে তোমাকে আমার ছেলের মতো লাগলো! মহিলা বলেই যাচ্ছে- ছেলের জন্যে কয়েকদিন ধরে মনটা খুব কাঁদছে, তাই ইচ্ছে হলো সারাদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরবো! আমার স্বামী বেঁচে থাকতে প্রায় সময়ই আমরা বাচ্চাদেরকে নিয়ে টাইম স্কোয়ার যেতাম। সবাই একসাথে সময় কাটাতাম। পুরনো সেই স্মৃতির খোঁজেই তোমাকে নিয়ে সেখানে যাওয়া। লাঞ্চের সময় মনে হলো, যদি আমার ছেলেটা কাছে থাকতো, তবে তাকে আদর করে সযতেœ এভাবেই খাওয়াতাম! আর গোরস্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো আমার প্রয়াত, প্রাণপ্রিয় স্বামীকে বলে আসা যে, খুব শীঘ্রই আমি তাঁর কাছে আসছি, খুব বেশি হলে তিন-চারদিন!
‘তিন-চারদিন’ কথাটা যেনো মাসুদের চিন্তাশক্তিতে একটু নাড়া দিলো! এ মহিলাতো দেখি একেবারে বদ্ধ পাগল! একা থাকতে থাকতে বোধ হয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন! এবার কি তাহলে আত্মহত্যার চিন্তা ভাবনা করছেন?
মাসুদ নীরব শ্রোতার মতো শুনছে।
মহিলা বলেই যাচ্ছে- এখন যে আমি হাসপাতালে যাবো, এটাই হবে পৃথিবীতে আমার সর্বশেষ যাত্রা বিরতি! আমি ব্লাড ক্যান্সারের রোগী।
মহিলার সমস্ত চেহারাজুড়ে এখন দুনিয়ার হতাশা, প্রচ- অসহায়ত্ব! মাসুদের চিন্তাশক্তিও যেনো হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলো! মহিলার চোখ দুটো ছলছল করছে।
– আমার অবস্থাটা সর্বশেষ স্টেজে। ডাক্তাররা আমাকে মাত্র দু’সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। আমি আমার সন্তানদের জানিয়েছি, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তারা আমাকে এসে দেখার সময়টুকু বের করতে পারছে না! এরই মধ্যে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে! আমিও এই কয়দিন অপেক্ষা করেছি, কিন্তু মনে হলো, যদি মরে বিছানায় পড়ে থাকি, তিন-চারদিন হয়তো কেউ জানতেই পারবে না! আমি চাই না আমার মৃত শরীরটা বিছানায় পরে থেকে পচন ধরুক! মরার পর যদি আমার সন্তানেরা আসে, তা হলে হয়তো দুর্গন্ধে আমার কাছে যেতে পারবে না! আমি চাই আমার প্রিয় সন্তানেরা যদি আমাকে জীবিত না পায়, অন্তত মৃত মুখটা অবিকৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
মাসুদ অনেকটা বাকরুদ্ধ! একজন অসহায়, সন্তানের জন্যে ভালবাসার তৃষ্ণায় কাতর মায়ের আহাজারীকে সে এতক্ষণ উপলব্ধি করতে পারেনি! সারাটা দিন যে তাকে সন্তানের মতো স্নেহ করেছে, ভালবেসেছে… আর সে কিনা তাকে নিয়ে আজেবাজে চিন্তাভাবনায় ডুবে ছিলো!
মহিলা ডান হাতে ধরা টিস্যুটা দিয়ে দু’চোখ বেয়ে নেমে আসা জলধারাকে থামানোর নিরর্থক চেষ্টা করছে! অনেক দিনের লুকিয়ে থাকা বেদনাগুলো যেনো জল হয়ে ঝরছে…!
– যখন রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, তখন ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার সাথে কোন ক্যাশ নেই! আর ক্রেডিটকার্ড, ডেবিট কার্ড সবগুলো দুদিন আগেই বন্ধ করে ফেলেছি, তাই বাধ্য হয়ে তোমার কাছ থেকে ধার নেয়া। পরে আজ যখন ব্যাংকে যাই তখন ব্যাংক ব্যালেন্স সন্তানদের একাউন্টে সমানভাবে ট্রান্সফার করে শুধু এক হাজার ডলার সাথে নিয়ে এসেছি! স্বামীর রেখে যাওয়া প্রিয় বাড়িটা আগেই বাচ্চাদের নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।
এতোগুলো না বলা কথা এক সাথে বলে মহিলা একটু থামেন। মাসুদ অনুভব করছে এতোদিনের অব্যক্ত এ কথাগুলো, মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা বেদনাগুলো যেনো মহিলাকে কুঁকড়ে খাচ্ছিলো। হাতের ব্যাগটা খুলে পঞ্চাশ ডলারের একটা নোট ক্যাশিয়ারকে কফির বিল হিসেবে দিয়ে বললো- বিল রেখে বাকিটুকু তোমার টিপস।
মাসুদ দেখছে মেক্সিকান ক্যাশিয়ার বেজায় খুশি, দশ ডলার বিল, আর চল্লিশ ডলার টিপস! মাসুদের সামনা-সামনি বসে মহিলা ব্যাগে রাখা বাকি ডলারগুলো গুণে তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
– এখানে নয়শ পঞ্চাশ ডলার আছে। সারাদিন তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি! সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করে দিও! আসলে সন্তানদের জন্যে মনটা খুব উতলা হয়ে গিয়েছিলো।
মাসুদের মনে হচ্ছে খাঁচায় বন্দি পাখি যেনো তার প্রিয়জনের সংস্পর্শের জন্যে, ভালবাসার জন্যে ছটফট করছে। টাকা নিতে রাজি নয় সে, আমার কোনো টাকা লাগবে না। মনে হলো কি রকম এক অস্বস্তি যেনো মহিলার সাদা চেহারায় ভর করেছে।
পরক্ষণেই মাসুদ বলল- ঠিক আছে, যদি দিতেই হয়, তবে সারাদিনের ভাড়া দুশো ডলার আর রেস্টুরেন্টের বিল বাবদ দুশো ডলার দিলেই হবে। এ মুহূর্তে টাকার প্রতি মাসুদের কোন টান নেই। মায়ের মমত্বের কাছে যেনো সবকিছু ম্লান!
– মনে করো, একজন মা হিসেবে কিছু টাকা না হয় তোমাকে বেশিই দিলাম।
মহিলার কাতরতায় মাসুদ আর কথা বাড়ায় না। টাকা নিতে নিতে বলে- আমিও না বুঝে তোমার সম্পর্কে অনেক ভুল চিন্তাভাবনা করেছি, তোমার মতো মায়ের ভালবাসাকে অপমানিত করেছি, আমাকেও ক্ষমা করে দিও! চলো তোমাকে হাসপাতাল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
– না, আর না। এবার তুমি যাও, আর মন খুলে আমার জন্যে দোয়া কর!
বেদনার নোনা জলে যেনো মহিলার সমস্ত চেহারা একাকার। এ তো বিদায় নয়, এ ধরণী হতে চির বিদায়ের করুণ মহড়া! ভালোবাসাহীন, আপনজনের সান্নিধ্যহীন জীবনের শেষ মুহূর্ত, অন্তিম সময়ে প্রিয়জনকে কাছে না পাওয়ার হাহাকার! পৃথিবী হতে চিরবিদায় নেবে, অথচ ভালোবাসার মানুষগুলোর স্পর্শ পাবে না, শেষবারের মতো একবার দেখা হবে কি না- সেটাও অনিশ্চিত! জেনেশুনে নিজের বিদায়ের জন্যে অসহায়ভাবে প্রস্তুত হওয়া যে কতটা বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক, বেদনায় মোড়ানো- সেটা কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য!
মাসুদ আর কথা বাড়ায় না। নিজের অজান্তেই চোখ দুটো কখন যে ভিজে একাকার, আর স্থির থাকতে পারছে না সে! মহিলার দিকে ফিরে তাকাবার মতো মানসিক শক্তিও এ মুহূর্তে তার নেই। মায়ের জাতটাই এমন, অন্তিম মুহূর্তেও নিজের কথা চিন্তা না করে সন্তানের চিন্তায় উতলা! সন্তানকে কাছে পাওয়ার জন্যে আকুলতা, কাছে রেখে ভালোবাসতে না পারার হাহাকার… যেটা সন্তানের পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব।
মাসুদ ধীরগতিতে মাথা নিচু করে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। মনটা তার প্রবলভাবে আন্দোলিত…! পৃথিবীর সব মায়েদের জন্যে ভালোবাসা নিরন্তর।
– নিউইয়র্ক।