ভালোবাসা আর সেবায় অনন্য

অসংখ্য নারীর স্পর্শকাতর ও স্মরণীয় সময়গুলোতে পাশে থেকেছেন তিনি। সবচেয়ে সংকটপূর্ণ অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের সময় তিনি রোগীকে সাহস যুগিয়েছেন, মনোবল বাড়িয়েছেন। তার জীবনের সেরা অর্জনই হচ্ছে হাজারো গর্ভধারিণী মা ও নারীর ভালোবাসা। গর্ভে থাকা সন্তান ও গর্ভধারিণী মাকে যাবতীয় চিকিৎসা পরামর্শ ও সেবা দিয়ে তিনি পেয়েছেন এই ভালোবাসা, অর্জন করেছেন মায়ের সম্মান। তিনিও তার কাছে আসা রোগীদের কাছে টেনে নিয়েছেন মায়ের মমতা দিয়ে। সে কারণেই অনেক নবজাতকের মা তাকে মর্যাদা দিয়েছে মায়ের মতো। তিনি যেন মায়েদের মা। বলছিলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হাসিনা আখতারের কথা।
দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে আজও চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ডা. হাসিনা। মানুষের ভালোবাসার টানে স্বামী-সন্তানকে ঢাকায় রেখেই তিনি রাজশাহীতে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ এত বছরের কর্মজীবনে কী পেলেন? জানতে চেয়েছিলাম মমতাময়ী এই চিকিৎসকের কাছে। একদম সরলভাবে মুচকি হেসে জানালেন, ‘মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা, যা কখনো ভোলার নয়। একদম সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি, তাদের সঙ্গে মিশতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে’ এ ভালোবাসাই তার অনুপ্রেরণা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা ডা. হাসিনা ১৯৮০ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তারপর তিনি দীর্ঘ ১২ বছর স্বামীর এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জে চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। বদরগঞ্জ থেকে তিনি চলে এলেও এলাকার মানুষ তার ভালোবাসার পরশ ভুলতে পারেনি। এখনো সকলের পরিচিত সেই নাম Ñডা. হাসিনাকে সবাই খুব মিস করে। বদরগঞ্জ ও রাজশাহীতে চিকিৎসক হাসিনাকে এক নামেই চেনেন সবাই।
২০১৪ সালে পেশাগত জীবন থেকে অবসর নিলেও চিকিৎসাসেবায় থেকে গেছেন এখনও। প্রায় সব মানুষই পেশাগত জীবন থেকে অবসর নিয়ে নিজের মতো করে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চায়। আপনি? জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে। ডা. হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ কর্মক্ষম থাকব মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাবো। এই সেবা কার্যক্রম থেকে অবসর নিতে চাই না। ডাক্তারি কাজের ফাঁকে যতটুকু বিশ্রাম নিতে পারি তাতেই হয়ে যায়। আলাদা করে আর বাড়তি বিশ্রামের দরকার হয় না।’ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বাইরে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজের এলাকা বদরগঞ্জে একটি হাসপাতাল করতে চাই। সেই হাসপাতালে নারীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে চাই।’দেশের চিকিৎসাসেবা উন্নত হচ্ছে। আগের চেয়ে এখন প্রচুর ছাত্রছাত্রী চিকিৎসাসেবায় আসছে। নতুন চিকিৎসক এবং এই পেশায় আসতে আগ্রহীদের উদ্দেশ্যে ডা. হাসিনার পরামর্শ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবার আগে আমাদের মানবিক ডাক্তার হতে হবে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ তো ভালো ভালো জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে। গ্রামের গরিব রোগীদের জন্য মানবিক পেশাজীবী চিকিৎসক দরকার। মানুষ তো মানুষের জন্যই, আর ডাক্তারদের জন্য এই কথাটি আরও বেশি করে সত্য।’ ডা. হাসিনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ে বিদেশে থাকেন। স্বামী অধ্যাপক ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষাবিদ ড. শাহ্ নওয়াজ এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।