সেতারা কবীর সেতু :
নিউইয়র্কের অন্যতম জনপ্রিয় ও বহুল পঠিত বাংলা পত্রিকা সাপ্তাহিক ঠিকানা এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ৩৩ পেরিয়ে ৩৪ বছরে পদার্পণ করল। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে এই পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করেছিল। প্রবাসের সফল ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য এম এম শাহীন দূরদৃষ্টি, উদ্যোগ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ঠিকানা পত্রিকাটি। এম এম শাহীন সুসম্পাদনায় সংবাদপত্রটি সফলভাবে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ যাত্রায় বহু চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে সাফল্যের ৩৩ বছর পেরিয়ে চারাগাছ থেকে আজ এক মহিরুহে পরিণত হয়েছে ঠিকানা।
সাপ্তাহিক ঠিকানা এম এম শাহীনের একটি অনন্য সৃষ্টি। তিনি এই প্রবাসের একজন গুণী ব্যক্তি। বহু সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বিভিন্নভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটবাসীর গর্বের সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ও লীগ অব আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি। ঠিকানা পত্রিকা আজ উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী লাখ লাখ বাঙালির কাছে জনপ্রিয়। বাংলাদেশের পাঠকদের কাছেও এই পত্রিকা সমান জনপ্রিয়। সত্যিকার অর্থে ঠিকানা স্বদেশ ও প্রবাসের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করেছে। ৩৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ঠিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য রইল শুভকামনা।
২১ ফেব্রুয়ারির ভাষাসংগ্রাম বাঙালি জাতির আত্মদর্শনের প্রথম অগ্নিপরীক্ষা। মাথা উঁচু করে অস্তিত্ব ঘোষণার প্রথম অ্যাসিড টেস্ট। একুশ আমাদের দিগ্্দর্শন। সঠিক পথে চলার নির্দেশনা। একুশ বাঙালি জাতিকে শিখিয়ে গিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে। কোনো রক্ষচক্ষুকে ভয় না করতে। পেশিশক্তিকে প্রশ্রয় না দিতে। অর্থাৎ সত্য ও সততার যে শিক্ষা, শৃঙ্খলার যে শিক্ষা এবং দেশপ্রেমের যে শিক্ষা, সে শিক্ষাই শিখিয়ে যায় একুশ।
সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেক ভাষাশহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে পেয়েছি। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন শুরু করা হয়। ১৮৮টি দেশ একত্রে পালন করে প্রথমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি। এই মহান দিনেই যাত্রা শুরু করেছিল ঠিকানা পত্রিকা। ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনাকে ধারণ করেই নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে ঠিকানা।
ঠিকানার যখন জন্ম, তার ঠিক এক বছর আগে আমি পৃথিবীতে আসি। ঠিকানায় লেখালেখির দিক থেকে আমি নবীন। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমি পুরোনো ও সচেতন। এতে অনেক জ্ঞানী ও দক্ষ ব্যক্তিরা লেখেন। এসব জ্ঞানী ব্যক্তির পাশাপাশি আমিও নিয়মিত ঠিকানা পত্রিকায় লিখছি অনেক দিন থেকে। কলাম, গল্প, সাহিত্য নিয়মিত লিখি এই পত্রিকায়। দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়ও আমি লেখালেখি করি। কিন্তু আমি বারবার বলি, ঠিকানায় লিখতে আমার বেশি ভালো লাগে। ঠিকানায় কোনো লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকা থেকে আমার পরিচিত অনেকেই ফোন করে বলে, ঠিকানায় তোমার লেখা পড়লাম! অনেক ভালো লাগে তোমার লেখা পড়তে। তখন আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। আমার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। এই হচ্ছে ঠিকানার প্রতি আমার ভালোবাসা।
দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়মিত প্রকাশ করছে ঠিকানা। এ ছাড়া প্রবাসী লেখকদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সাহিত্য, বিনোদন এবং বিশ্বের আলোচিত ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণসহকারে তুলে ধরা হচ্ছে এই পত্রিকায়। এর ফলে ঠিকানার অধিকাংশ লেখাই সুখপাঠ্য ও উপভোগ্য। পাঠক ঠিকানা পড়ে সন্তুষ্ট হয়। এখানেই ঠিকানার সার্থকতা, এই পত্রিকা পাঠকদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
সংবাদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্রকে অনেকেই ফোর্থ এস্টেট বা চতুর্থ রাষ্ট্র নামে অভিহিত করে থাকেন। কারণ, সংবাদপত্রই বিভিন্ন দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মকে জনগণের কাছে তুলে ধরে। অন্যায়কারীকে আইনের আওতায় আনতে সংবাদপত্র সহায়তা করে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ক্ষমতাধর হয়, তবে তাদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ভূমিকা রাখে। ঠিকানা এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। ঠিকানা যেমন অন্যায়ের চিত্র নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরে, তেমনি ভালো কাজের প্রশংসাও করে।
জন্মের সূচনাকাল থেকেই ঠিকানাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। পাঠকের মমতায়, লেখকের উদার সহমর্মিতায় এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও সুহৃদদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঠিকানা প্রত্যেক শ্রেণি-গোষ্ঠীর নির্ভরতার প্রতীক হয়ে সব প্রতিবন্ধকতার সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে থাকে। ঠিকানার ৩৪ বছর পদার্পণ উপলক্ষে এই পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য রইল শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে ঠিকানার জন্য রইল অনেক দোয়া ও শুভকামনা। দীর্ঘজীবী হও ঠিকানা। অভিনন্দন ঠিকানা পত্রিকাকে।
লেখক : প্রভাষক।