ভালোয় ভালোয় বিদায় নিন, সরকারকে জামায়াতের আমির

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৯২ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে এখন দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিচারের নামে অবিচার মানুষের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। মানুষের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এককথায় জাতি এখন সর্বহারা জাতি। এই রকম অবস্থা সৃষ্টি করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, ক্ষমতা কারও চিরদিন থাকে না, যাওয়ার পালা এসেছে। ভালোয় ভালোয় জাতির কোনো ক্ষতি না করে বিদায় নিন। সেটি হবে আপনাদের জন্য বুদ্ধিমানের পরিচয়। আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। তারা যেমন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি, তেমনি আমাদের এই প্রিয় সংগঠন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না।

২৮ অক্টোবর শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নির্মমভাবে নিহতদের স্মরণে’ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিক এসব কথা বলেন।

তিনি জাতির প্রতি, বিশেষ করে মজলুমবিরোধী দল ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর, বিভেদ সৃষ্টিকারী কোনো বক্তব্য যেন আমরা না রাখি। সবকিছু থেকে বিরত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যাই। অপশক্তির পরাজয়, ধ্বংস অনিবার্য।

শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আমরা দেখেছি, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। মানুষের বাঁচার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারাই মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। তারা শেষ পেরেকটা মেরেছিলেন বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে।

তিনি বলেন, হিমালয়সম ব্যর্থতা ঢাকতে মানুষের কণ্ঠরোধ করতে তারা দুইটা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। একটা ছিল রাষ্ট্রীয় জল্লাদ বাহিনী গঠন, যার নাম ছিল রক্ষীবাহিনী। তাদের হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল, তারা যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা তুলে নিয়ে আসতে পারত। যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারত। তাদের আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, সংবিধান বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহির বিষয় ছিল না। তাদের হাতে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ৩২ হাজার যুবক বিনা বিচারে সেদিন নিহত হয়েছিল। এটা লজ্জার, এটা কলঙ্কের। সে সময় চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবার এই চারটিকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়েছিল। সরকারের ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছু লেখা বা প্রকাশ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না।

শফিকুর রহমান বলেন, ক্ষমতা এমন এক জিনিস, যা চিরদিন কারও কাছে থাকে না। আজকে মানুষের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মেধা বিকাশ ও মেধাবীদের সমাজে ভূমিকা রাখার অধিকার- সব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এককথায়, জাতি এখন সর্বহারা জাতি। এ রকম অবস্থা সৃষ্টি করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, সেদিন তারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু মানুষকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য এ কাজ করেনি। তারা এ কাজ করেছিল এই দুই সংগঠনে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদেরকে নির্মমভাবে, পাশবিক কায়দায় দুনিয়া থেকে বিদায় করার মাধ্যমে গোটা জাতির অন্তরে ভয় ধরিয়ে দিতে।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে তারা বেছে নিয়েছিল, কারণ তাদের কাছে স্পষ্ট ছিল এই সংগঠন বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ, দেশপ্রেম ও দ্বীনের ব্যাপারে কারও সঙ্গে আপস করে না। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির শেষ হয়ে যায়নি। এখন এই সংগঠনগুলোকে ঘিরেই দেশের মজলুম মানুষ স্বপ্ন দেখে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন, দুঃসহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার স্বপ্ন দেখে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নিহত হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের বাবা মু. তাজুল ইসলাম ও সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুমের বাবা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, আবদুস সবুর ফকির, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. হেলাল উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান। উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য হাফিজুর রহমান, শাহীন আহমদ খান, আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মহানগর শিল্পীগোষ্ঠী শহীদী গান পরিবেশন করে।

ঠিকানা/এনআই