ভূতে ধরা বা কোনো অশুভ শক্তির ভর হওয়া, যাকে ইংরেজিতে বলে ‘পজেশন’, তা আসলে কোনো না কোনো মনোরোগ— এই কথাই বার বার বলে আসছেন মনোশ্চিকিৎসকরা।
পশ্চিমে এই নিয়ে তর্ক আরও বেশি কেন না, খ্রিস্টীয় জগতে শয়তানের আবেশ একটি সিদ্ধি বিষয়। এবং সেই ‘পজেশন’ থেকে মুক্তির এক সিদ্ধ পথ হলো এগজরসিজম। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমি মনোবদিরা এ বিষয়ে ভিন্নমতই ব্যক্ত করে এসেছেন এতকাল।
মনোবিজ্ঞানের পিতা সিগমুন্ড ফ্রয়েড স্বয়ং বিষয়টিকে দেখে ছিলেন নৈর্ব্যক্তিকভাবে। ফ্রয়েডীয় মনোবিদ্যা শয়তানের ভরকে মনোবিকার হিসেবেই দেখে এবং তার আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা পেশ করে। এতদিনের এই ঐতিহ্যকে হঠাৎই ধাক্কা দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক মেডিক্যাল কলেজ ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনশ্চিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড গ্যালাঘার।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রিন্সটন ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মনশ্চিকিৎসায় অভিজ্ঞ রিচার্ড সম্প্রতি জানিয়েছেন, এগজরসিজম বা ঝাড়ফুঁকের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।
সারা জীবনে শতাধিক ‘ভূতে ধরা’ বা ‘শয়তানে ভর করা’ রোগী দেখেছেন রিচার্ড গ্যালাঘার। তার মতে এটি কোনও মনোরোগ নয়। এর পিছনে সত্যিই শয়তান বা বিদাহী আত্মার কারসাজি রয়েছে। ২০১৮-এর এপ্রিল মাসে ভ্যাটিকানে ধর্মযাজকদের জন্য এগজরসিজম-এর বিশেষ ট্রেনিং কোর্স করানো হয়।
সেখানে অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, খ্রিস্টধর্মে আস্থা কমার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট মারফৎ কালো জাদুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। ফলে এগজরসিজমের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে বই কমছে না। এই ট্রেনিং সেশনেই রিচার্ড জানান, শয়তানকে কিংবদন্তি বা গালগল্প বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। জীবনের অর্থই শয়তানের সঙ্গে নিরন্তর সংঘাত।
সেই কারণে, এগজরসিজম এক জরুরি বিষয়। পজেশন ঘটলে এগজরসিস্টদের পরামর্শ শোনা অবশ্যকর্তব্য। কোনো ব্যক্তি মনোরোগের শিকার, নাকি তাঁর উপরে ভূত বা শয়তান ভর করেছে, তা বোঝা যাবে এগজরসিজম করতে গেলেই।
প্রসঙ্গত, পোপ ফ্রান্সিসও এই মতের ধারক বাহক। তিনিও সম্প্রতি পোপতান্ত্রিক ঝাড়ফুঁকের স্বপক্ষে বিস্তারিত মত ব্যক্ত করেছেন।