নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছ। বিএনপি ও তার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি অপূর্ণ রেখে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ যেমনি নেই, নির্বাচন প্রতিহত করা ও নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশ ন্যূনতম সুযোগে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সমীচীন ও রাজনৈতিকভাবে প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করে। তফসিল ঘোষণার পর এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে, পরিণামে যা বিএনপির ক্ষতির বোঝা বাড়াবে। অনেকেই মনে করছেন, বিএনপির জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন ফাঁদ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করেন, নিতান্ত নিরুপায় হয়েই বিএনপিকে নেতাসর্বস্ব কর্মী ও সমর্থকবিহীন দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। বিএনপি বাদে তিন দলের আট নেতার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনের ঘোষণা এখনো নেতাদের মুখের কথায়ই সীমিত রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারাও শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে শামিল হয়নি। বিএনপি তাদের প্রধান শক্তি। বিএনপিকে সঙ্গী করেই তারা জাতীয় ঐক্য গড়েছে। একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করা হয়েছে সরকারবিরোধী অপরাপর দলের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতায় আসার জন্য। এক মাস আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যের কমিটি করা হবে। এক মাসেও তারা কোনো একটি কমিটিও করতে পারেনি। এ কাজে এখনো হাতই দেয়নি। বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা না চাইলে এ কমিটি করাও সম্ভব নয়। কারণ, বিএনপি ছাড়া কারোই উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি নেই; অফিস, কর্মী-সমর্থক নেই।
ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপি মহল গোড়ার দিকে আগ্রহী হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তাতে ভাটা পড়ে। ড. কামাল হোসেনের ওপর বিএনপির বিশ্বাস ও নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বি চৌধুরীকে হতাশ করে। রব, মান্না, বিএনপির কতিপয় নেতা ছাড়াও মহল বিশেষের প্রচেষ্টায় ঐক্যফ্রন্ট হলেও এই ঐক্য কত দিন টিকে থাকে, তফসিল ঘোষণার পর তাদের কার কী অবস্থান হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তার পুত্র মাহী এবং মেজর (অব.) মান্নান নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপি মোটামুটি সম্মানজনক আসনে ছাড় দিলে বিকল্পধারা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করার পক্ষে ছিল। কিন্তু ড. কামালকে প্রাধান্য দেওয়ায় এবং রাজনৈতিক কয়েকটি প্রশ্নে তিনি সটকে পড়েছেন।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম কর্নেল (অব.) ড. অলির এলডিপি জোটে না-ও থাকতে পারে। ড. কামাল বা বি চৌধুরীর নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে রাজি নন তিনি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ কর্নেল অলির কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যা প্রকাশিত হলে বি চৌধুরীকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে কর্নেল অলির ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করেন। বি চৌধুরীকে সঙ্গে করে বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করে আসছিলেন। ড. কামাল হোসেনকে নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। সামনের সংকটে তার অবস্থান দেশে না বিদেশে হয়, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কর্নেল অলি জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে দলগতভাবেও নির্বাচন করতে পারেন। যদিও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যাপারেই তার আগ্রহ বেশি। কর্নেল অলি নির্বাচনে অংশ নেবেন বিএনপি না নিলেও।
২০ দলীয় জোটের শরিক প্রয়াত নাজিউর রহমানের পুত্র ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের বিজেপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। তিনি এবং তার ছোট ভাই দুটি আসনে ভোলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এলাকায় তাদের যোগাযোগ বরাবরই ছিল। যোগাযোগ সাম্প্রতিককালে অনেক বাড়িয়েছেন। মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে। সরকারি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগও রয়েছে বলে শোনা যায়। জামায়াত ছাড়াও ২০ দলভুক্ত দুটি ইসলামি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। আন্দোলনের পাশাপাশি এদের সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে গেছে।
বিএনপিতে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। প্রকাশ্যে তারা তেমন একটা মুখ খোলেন না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে কৌশলে প্রভাবিত করে আসছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গেলে দেশের মানুষ বিএনপিকে বেছে নেবে বলে তাদের বিশ্বাস। বিরোধী দলে থাকলেও দল ও দলের মাঠের নেতা-কর্মীদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে প্রভাবিত করার ফলে দেড় শতাধিক নির্বাচনী এলাকায় দলের সাবেক এমপিসহ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে নেমে পড়তে বলা হয়েছে। অপরদিকে দলের মধ্যে এর বিপক্ষের মতও যথেষ্ট জোরালো। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সরকারকে আরো পাঁচ বছরের জন্য বৈধতা দেওয়া হবে বলে তারা মনে করেন।