ঠিকানা রিপোর্ট : গত ৭ নভেম্বর পুরো আমেরিকা ছিল উৎসব-আনন্দের দেশ। জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের জয়ে এই আনন্দ-উৎসব। এই আনন্দে বাংলাদেশিরাও অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত স্টেটগুলোতে বাংলাদেশিরা আনন্দ- উৎসব করেছেন। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসসহ অন্যান্য এলাকায় আনন্দ-উৎসব হয়েছে এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। বাইডেন- কমলার জয়ে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল বাংলাদেশিদের মধ্যে। আবার কোনো কোনো বাঙালির দ্বৈত চরিত্রও লক্ষ্য করা যায়। এমন অনেককে দেখা গেছে যারা ট্রাম্পের ঘোরতর সাপোর্টার ছিলেন, তারাই বোল পাল্টিয়ে আনন্দ সমাবেশে বাইডেন-কমলার পোস্টার হাতে দাঁত কেলিয়ে হেসেছেন। বাইডেন-কমলার জয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দের কারণ হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম এবং ইমিগ্র্যান্টবিরোধী অবস্থান।
জেবিবিএ ও জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী
জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিসের জয়ে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন এবং জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী আনন্দউৎসব এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে। গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় খাবার বাড়ি রেস্টুরেন্টের সামনে আনন্দউৎসব এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেবিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, পরিচালক ফাহাদ সোলায়মান, জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর সভাপতি শাকিল মিয়া, শো টাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি আমিন খান জাকির, এলাকাবাসীর সদস্য শাখাওয়াত বিশ্বাস, আইন বিশেষজ্ঞ ড. রফিক আহমেদ, বক্সার সেলিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে তারা বাইডেনের পক্ষে স্লোগান দেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিদায়ের আহ্বান জানান।
জ্যামাইকা
বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকায় গত ৬ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি ডেমোক্র্যাটরা তাৎক্ষণিক বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে। নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি আহনাফ আলমের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় উৎসবে বক্তারা ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানান। বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুল্যবোধ বিসর্জন, করোনাকালীন দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ফেলাসহ নানা কারণে প্রেসিডেন্টের উপর ক্ষিপ্ত জনগণ ব্যালটের মাধ্যেম জবাব দিয়েছে। তারা বলেন, যত টালবাহানাই করুন না কেন হোয়াইট হাউস আপনাকে ছাড়তেই হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউ আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম মোস্তফা মিরাজ খান, বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ আলী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব জ্যামাইকার সভাপতি সৈয়দ বাহালুল উজ্জল, নিউ আমেরিকান উইমেন ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট রীনা সাহা, ডালিয়া চৌধুরী, নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আহনাফ আলম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আল আমিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ ফারুক রহমান, মাসুদুর রহমান প্রমুখ। পরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
ডেলওয়ারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণার পর ডেলাওয়ার স্টেটে জো বাইডেনের জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম বিজয়ীভাষণ অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।
গত ৩ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা জটিলতা দেখা দেয়ায় বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণায় অনেক বিলম্ব হয়। প্রথম বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয় গত ৮ নভেম্বর সকালে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রথা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিজয়ী ভাষণ দিয়ে থাকেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যে স্টেটে থাকেন, সেই স্টেটেই এই ভাষণের আয়োজন করা হয়। এবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেহেতু দেলওয়ার স্টেটে থাকেন সেহেতু এবারো বিজয়ী ভাষণের আয়োজন করা হয় দেলওয়ার স্টেটের উইমিংটনে। ৮ নভেম্বর রাত ৯টার সময় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার রানিংমেট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া এনাম, প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী, কার্যকরী সদস্য সাহানারা রহমান, কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন চৌধুরী, পেনসিলভানিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তাহের, ফিলাডেলফিয়া ট্রাই কাউন্টি আওয়ামী লীগ সভাপতি খায়ের মোহাম্মদ মিয়া, যুবলীগ নেতা শাহ সেলিম।
বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, বিএনপি নেতা ফিরোজ আহমেদ, শাহ নেওয়াজ, আলী ইমাম শিকদার প্রমুখ।
বিজয়ের উল্লাসে ব্রঙ্কস-
ছন্দা বিনতে সুলতান : ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই চলছে আনন্দোল্লাস। এ যেন সাধারণ মানুষেরই বিজয়। পতাকা হাতে, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে, জানালায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে যে যেভাবে পারে মেতেছে উৎসবে। বাদ যায়নি বাংলাদেশি কমিউনিটিও।
নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের বাংলাবাজারের এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুলের সামনে গত ৭ নভেম্বর, শনিবার, সন্ধ্যায় জো বাইডেনের বিজয়ে এমনই এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিজয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট এটর্নি মোহাম্মদ এন. মজুমদার।
তিনি বলেন, এ বিজয় গোটা অভিবাসী সমাজের বিজয়। খেটে খাওয়া মানুষেরই বিজয়।
যুবনেতা জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেনÑ স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাইদুর রহমান লিংকন, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মঞ্জুর চৌধুরী জগলু, তোফায়েল চৌধুরী, জাকির চৌধুরী, এন. ইসলাম মামুন প্রমুখ।
তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত উক্ত বিজয় সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতস্ফূর্ত।
আটলানটিক সিটির প্রবাসী বাংলাদেশিরা জো বাইডেনের বিজয়ে উল্লসিত
আটলান্টিক সিটি প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসের জয়ের সংবাদে উল্লসিত হয়েছেন আটলান্টিক সিটির প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ইলেকটোরাল ভোটে জো বাইডেন জয়ী হওয়ার সংবাদ পেয়েই তাঁরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
বিগত ক’দিন পেন্ডুলামের মতো দুলছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল, আর তার সাথে তাল মিলিয়ে উত্তেজনার পারদ ওঠানামা করছিল প্রবাসীদের মনোজগতে। আজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইলেকটোরাল ভোটে জো বাইডেনের বিজয়ী হওয়ার সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উল্লাসে মেতে ওঠেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম খোকা বলেন, জো বাইডেনের বিজয়ে আমরা খুব খুশি, সাউথ জার্সির প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তাঁদের গতিশীল নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সুখ ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে যাবে এই শুভ কামনা করছি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির সভাপতি শহীদ খান ও সাধারন সম্পাদক সোহেল আহমেদ জানান, আটলান্টিক কাউন্টির প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতো তাঁরাও জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসের বিজয়ে খুশি। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, নতুন নেতৃত্বের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছবে। তাঁরা জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানান।
সাউথ জারসি মেট্রো আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম শাহজাহান জো বাইডেনের বিজয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁর নেতৃত্বে আগামীতে যে সরকার গঠিত হবে তা আগের চেয়ে অনেক বেশি অভিবাসী বান্ধব হবে এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কও আরো বেশি জোরদার হবে।
বিএনপি অব নিউ জারসি স্টেটের (দক্ষিণ) সদস্য সচিব মো. দিদার জো বাইডেনের বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং আশা করেন তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমেরিকানরা বিশ্বে তাদের হারানো গৌরব খুঁজে পাবে।
‘বাংলাদেশিস ফর বাইডেন’ নিউজারসি রাজ্যের পরিচালক ও আসাল নিউজারসি চ্যাপটারের সভাপতি ফারুক হোসেন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, বিগত চার বছর পর্যন্ত আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম, আজ আমাদের অপেক্ষার অবসান হলো। ট্রামপের শাসনামলে বিভক্তির যে রাজনীতি চালু হয়েছিল তার অবসান হবে এবং অভিবাসীদের কল্যাণে এই সরকার আরো বেশি আন্তরিক হবেÑ এটাই আশা করি।
কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও বীর মুক্তিযাদ্ধা জাহাংগীর হোসেন ভূঁইয়া জো বাইডেনের বিজয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করেন এবং আগামীতে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের সাফল্য কামনা করেন।
আটলান্টিক সিটি স্কুল বোর্ড সদস্য ও লেখক-সাংবাদিক
সুব্রত চৌধুরী জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে বিশ্ব মানবতা ও সভ্যতার কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র আরো সক্রিয় এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া তিনি আরো আশা প্রকাশ করেন, সমগ্র বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।