মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবেই জনজীবনে বিরূপ প্রভাব : বাড়ছে ট্যাক্সি ভাড়া, বেসামাল দ্রব্যমূল্য, অস্বস্তিতে ভাড়াটিয়ারা

ঠিকানা রিপোর্ট : বাজারে নিত্যপণের দাম এখন বেসামাল। দাম বাড়েনি এমন জিনিস বাজারে খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মজুরি বাড়ার সুখবর দিল নিউইয়র্ক সিটি। কিন্তু এই সুখবরই এখন অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তের। অর্থাৎ প্রস্তাবিত মজুরি বৃদ্ধির খবরেই জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম।
এক ডজন ডিমের দাম কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল এক থেকে দুই ডলার, সেই ডিম এখন কিনতে ৫ থেকে ৮ ডলারে। বেড়েছে চাল-ডাল ও তেলের দাম। আর এসব পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির স্বল্প আয়ের মানুষেরা। বিশেষ করে মধ্যবিত্তের জন্য নিত্যপণ্যের দাম সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক সিটিতে ন্যুনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫ ডলার করার প্রস্তাব গৃহীত হলে তা বাস্তবায়নের আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। বাড়ে গণপরিবহনের ভাড়াও। নিউইয়র্ক সিটির বাসা ভাড়াও বাড়ে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ন্যুনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫ ডলার বাস্তবায়িত হয়। এরপর আরো এক দফা জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। অর্থাৎ যতটুকু আয় বেড়েছিল, বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচ ও বাজার খরচে। ঠিক ২০২২ সালেও একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। নিউইয়র্ক এই প্রথম অ্যাপভিত্তিক রেস্টুরেন্ট বা ফুড ডেলিভারি কর্মীদের জন্য সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে ঘণ্টায় ২৩ ডলার ৮২ সেন্টস। গত ১৬ নভেম্বর বুধবার ভোক্তা ও কর্মী সুরক্ষা বিভাগ প্রতি ঘণ্টায় নতুন মজুরি হারের প্রস্তাব করেছে।
নিউইয়র্ক সিটি জানায়, রেস্টুরেন্ট ডেলিভারি কর্মীরা কোনো টিপস ছাড়া এখন প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৭ ডলার আয় করে থাকেন। তারা ন্যুনতম মজুরিও পায় না। কারণ অ্যাপগুলো তাদের ইনডিপেন্ডেন্ট কর্মী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে, যা কর্মচারির আওতায় পড়ে না। শুধু নিউইয়র্ক সিটিতেই নয়, গোটা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরেই অ্যাপভিত্তিক রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে ডেলিভারি কর্মীর সংখ্যা। অনেককেই এই ডেলিভারি করে সংসার চালাতে হয়। অনেক তরুণ এর পাশাপাশি নিজ পকেট খরচ বা টিউশন ফি যোগান দেন। রোদ, বৃষ্টি, বরফে ৮/১০ ঘণ্টা কাজ করেও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
২০২১ সালের একটি স্থানীয় আইন দ্বারা ফুড ডেলিভারি কর্মীদের জন্য অত্যন্ত প্রত্যাশিত একটি বেতন স্কেল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যাতে ডোরড্যাশ এবং উবার ইটসের মতো অ্যাপ ব্যবহার করা কর্মীদের জন্য ন্যুনতম মজুরি প্রয়োজন বলে উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত হিসেবে ১ জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে তাদের জন্য ন্যুনতম মজুরি ১৭ ডলার ৮৭ সেন্টস করে শুরু হবে। ১ এপ্রিল ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২৩ ডলার ৮২ সেন্টস বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে মুজরি হার বৃদ্ধির পর্যায়ক্রমে ৬০ হাজারেরও বেশি কর্মী এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিটি কাউন্সিল আগামী ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার এ নিয়ে একটি গণশুনানি করবে।
শুধুমাত্র ডেলিভারি কর্মীদের বেতন বাড়বে এই খবরে নিউইয়র্ক সিটিতে নিত্যপণ্যের বাজার চড়া অবস্থা বিরাজ করছে। আর এই হুজুগের শিকার হচ্ছে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে ২৩ শতাংশ বাড়বে নিউইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি ভাড়া। যারা ট্যাক্সির ওপর নির্ভরশীল তাদের গুণতে হবে বাড়তি ভাড়াদিও গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে না বলে আভাস দিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে জ্বালানির চড়া মুল্যের স্থিতিশীল অবস্থা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এদিকে ডেলিভারি কর্মীদের মজুরি বাড়লে নিউইয়র্ক সিটির বাসা ভাড়াও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমান বাসা ভাড়া আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। তবুও সন্তানের লেখাপড়া ও স্বাস্থ্যবীমা সুবিধার কারণে বহু পরিবার কষ্ট হলেও নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করছেন। অনেকে না পেরে অন্য শহরে বা অন্য রাজ্যে স্থানান্তর হচ্ছেন। তাদের কাছে স্বপ্নের আমেরিকা অধরাই রয়ে যাচ্ছে।