উইলি মুক্তি :
মনোবিজ্ঞান কীভাবে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে?
মূলত মনোবিজ্ঞান মানুষের মস্তিষ্কে বড় একটি ভূমিকা রাখতে সাহায্য করতে পারে। এ ধরনের পেশাদার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে একজন মনোবিজ্ঞানী ভবিষ্যতের আচরণকে আরও ভালোভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। অতীতের আচরণকে বোঝার ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। মানসিক চাপ এবং আচরণ উন্নত করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার গুরুত্ব যে পরিমাণ একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, মানুষের মনোভাব, জ্ঞান, বিশ্বাস এবং আচরণের সঙ্গে সেটা প্রাসঙ্গিক। উদাহরণস্বরূপ মানুষের চাহিদার পাঁচটি বিভাগ একজন ব্যক্তির আচরণকে নির্দেশ করে। এই চাহিদাগুলো হলো শারীরবৃত্তীয় চাহিদা, নিরাপত্তার প্রয়োজন, ভালোবাসা সম্বন্ধীয় চাহিদা, সম্মানের চাহিদা এবং স্ব-বাস্তবকরণের প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞান হলো মন ও আচরণের অধ্যয়ন। এটি জৈবিক প্রভাব, সামাজিক চাপ এবং পরিবেশগত কারণগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। মানুষ কীভাবে চিন্তা করে, কাজ করে এবং অনুভব করে, তা প্রভাবিত করে। এর মধ্যে চারটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে, যেমন সংযুক্তির প্রয়োজন, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, আনন্দ/বেদনা পরিহারের প্রয়োজন। নিজ নিজ উন্নতির প্রয়োজন।
মানুষের জীবনের ভালোবাসা এতটা জটিল এবং বর্ণনাতীত হওয়ার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে, একের ভেতরে তিন রকমের অনুভূতি।
বিখ্যাত জৈবিক নৃতত্ত্ববিদ হেলেন ফিশারের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের মতে, রোমান্টিক প্রেম তিনটি সংবেদনে বিভক্ত করা হয়েছে-অনুরাগ, আকর্ষণ ও লালসা। প্রত্যেক মানুষের অনুভূতি মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত হয়। হরমোন তার নিজস্ব প্রক্রিয়া দ্বারা চিহ্নিত করেছে, লালসা ভালোবাসার চেয়ে আলাদা। লালসা হচ্ছে বিবর্তনীয় ভিত্তি। একধরনের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন লালসার সৃষ্টি করে, যা আকর্ষণ ও আবেগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ কারণেই ওয়ান-নাইট স্ট্যান্ড হুকআপগুলো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের গভীরতা সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ, ভালোবাসা ও আবেগ দীর্ঘস্থায়ী প্রেমের উপাদান। ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন লালসাকে চালিত করে। যখন কোনো মানুষ আকর্ষণ অনুভব করে, তখন ডোপামিন ও নোরপাইনফ্রিন নিঃসৃত হয়। আবার বিস্তৃত গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের মস্তিষ্কের এলাকায় এমন একধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি করে, যা আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কারো চেহারা অথবা ছবি দেখার পর মানুষের মস্তিষ্কের প্রাথমিক কেন্দ্রগুলো আলোকিত হয় এবং তৎক্ষণাৎ প্রেমে পড়ে যায়। মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে, তারা তীব্রভাবে আকৃষ্ট হয় এবং প্রেমের আকর্ষণের উপাদানটি আবেশের অনুভূতিতে রূপান্তরিত হয়।
কেন রোমান্টিক সম্পর্কের প্রথম দিনগুলো আনন্দদায়ক হয়?
তৃতীয় শ্রেণির প্রেম, সংযুক্তি, মোহ ও আকাক্সক্ষার বিপরীতে স্বাচ্ছন্দ্য এবং লালন-পালনের অনুভূতি যুক্ত। অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোনগুলো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই কারণগুলোর জন্য জ্বালানি। যদিও লালসা ও আকর্ষণ রোমান্টিক প্রেমের জন্য একচেটিয়া বন্ধুত্ব, পিতামাতা, শিশুর বন্ধন এমনকি মালিকেরা তাদের পোষা প্রাণীর প্রতি কেমন অনুভব করে, তার মাধ্যমেও আবেগ অনুভূত হয়। ভালোবাসায় আকৃষ্ট হলে মানুষ কেন তাদের নিজের মতো করে আচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে? এটি ব্যাখ্যা করতে হলে দেখা যায়, আপনি যখন প্রেমে পড়েন, তখন আপনার মস্তিষ্ক ফেনাইলথাইলামাইন নামের একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা প্রেমের ওষুধ নামে পরিচিত।
আর হরমোন হলো, যা অংশীদারদের একে অপরের প্রেমে পাগলবোধ করার জন্য কাজ করে। একটি মেটা-বিশ্লেষণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রেমে পড়তে এক সেকেন্ডের এক-পঞ্চমাংশ সময় লাগে। ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক মনোবিজ্ঞানের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেমে পড়া মানুষ তাদের নিজ নিজ সম্পর্কে প্রবেশ করার পরে প্রায়ই ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। কয়েক দশক ধরে প্রেমের বিবর্তন নিয়ে অধ্যয়ন করে জানা গেছে, ‘ভালোবাসা অন্ধ।’ তার মধ্যে সবচেয়ে আবেগপ্রবণ হলো, কে কত দ্রুত প্রেমে পড়তে পারে। প্রেমে পড়ার পরে মানুষের মধ্যে আরও বৈচিত্র্যময় আত্মবোধ এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। প্রেমের অনুভূতি ভয় এবং সামাজিক বিচারের মতো নেতিবাচক আবেগের জন্য দায়ী। স্নায়বিক পথকে নিষ্ক্রিয় করে। সুতরাং, আপনি যখন প্রেমে পড়েন, তখন পারিপার্শ্বিকতা এবং সমালোচনার মূল্যায়ন করা আপনার ক্ষমতায় বন্ধ হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে দম্পতি তাদের সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য সময় নিয়েছে, তারা অন্য ব্যক্তির প্রতিও ইতিবাচক বোধ করে না বরং তাদের সম্পর্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ছোট্ট একটি কৃতজ্ঞতা সম্পর্ককে কতটা উন্নত করতে পারে, সেটা বোঝার ক্ষমতা অনেকেরই থাকে না। সম্পর্ক সুস্থভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রত্যেকেরই একে অন্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে প্রশংসা করা উচিত। কিন্তু আমরা সেটা করি না। বরাবরই আমরা আমিত্বের সঙ্গে সন্ধি করে থাকি।