মন্ত্রীদের এক-তৃতীয়াংশই মনোনয়নবঞ্চিত হবেন!

নিজস্ব প্রতিনিধি : ক্ষমতার সিংহাসনে থেকে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সব সুবিধা ভোগ করার পরও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের অনেকেরই সুখবোধ নেই। মানসিক নিদারুণ যন্ত্রণায় দিন কাটছে তাদের। কেন, কী কারণে তাদের এ অবস্থা? কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছে ঠিকানা। কিন্তু তারা প্রকাশ করেননি, বাহ্যিকভাবে বুঝতেও দিচ্ছেন না কাউকে। পারিবারিক ও একান্ত ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তাতে আঁচ করা যায় তাদের দুশ্চিন্তা ও মনোবেদনার কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটকীয়ভাবে নতুন ও অনভিজ্ঞদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে চমক দেখিয়েছিলেন। অভিজ্ঞ ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত এমন কাউকে রাখা হয়নি, দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া। নবীনরা ব্যাপক উদ্যাগে কাজ করবেন, গতানুগতিক ধারায় কাজের পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রশংসনীয় নতুন কিছু করে দেখাবেন, এমনই আশা ছিল উচ্চ পর্যায়ের। কিন্তু তা হয়নি, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব ক্ষেত্রেই। পুরোনো ধারায় আমলানির্ভর হয়ে তারা মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে আসছেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। চার বছরের বেশি সময় পেলেও পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। তারা মন্ত্রণালয়, দেশের কল্যাণে চোখে পড়ার মতো কোনো কাজ করতে পারেননি। নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গেও তেমন একটা যোগাযোগ রাখেননি। এ ক্ষেত্রেও দু-তিনজন ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যরা রাজধানীকেন্দ্রিক জীবনযাপন করছেন।
যত দূর আভাস পাওয়া যায়, অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কার্যক্রমে সরকারের উপরমহল খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। ঈদে যাতে শহর ছেড়ে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, দপ্তরসমূহের শীর্ষস্থানীয়দের কঠোর নির্দেশ দিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়। মূলত সে কারণেই এবারের ঈদযাত্রায় ও ফিরে আসার ক্ষেত্রে যাত্রীদের দুর্ভোগ তেমন একটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রেল, সড়ক পরিবহন, নৌ পরিবহনমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রয়াস নেন। কিন্তু এটা সাধারণ চিত্র নয়। প্রয়োজনীয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করার পরও কার্যক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। চার বছর এমনই দুঃখজনক চিত্র দেশবাসী অবলোকন করেছে। এখন শেষ সময়ে এসে মন্ত্রীরা জোর তৎপরতা দেখাচ্ছেন। তা-ও মূলত প্রধানমন্ত্রীর ভয়ে, তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
সরকার ও সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের উল্লেখযোগ্যরা দলীয় মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। মন্ত্রী হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে তাদের অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সরকারি কাজে নিজ জেলায় কদাচিৎ গেলেও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করেননি, করার সুযোগও করে নেননি। তাদের এই মন-মানসিকতা ভোটার সাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট হলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই যে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন না, সে সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়েও তথ্য রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। দলীয়ভাবেও প্রায় অভিন্ন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে আট হতে নয়জন সর্বাধিক ১০ জন মনোনয়ন পাবেন। অন্যরা মনোনয়নবঞ্চিত থেকে যাবেন। তাদের স্থলে নতুন মুখ বেছে নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে অধিকাংশ বঞ্চিত হলে গোটা জেলায় এবং সারা দেশেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। আবার ভিন্নমতও রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, কাজেও তেমন কিছু করতে পারেননি এমন মন্ত্রীদের মনোনয়ন না দেওয়া হলে নির্বাচনী এলাকাসহ সারা দেশেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে বলে দলের অনেকেই মনে করেন।