নিজস্ব প্রতিনিধি : হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল জেলখানা থেকেই জামিনে মুক্তিলাভের প্রক্রিয়া করছেন। সরকারের সর্বাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার প্রতিনিধি। জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও এ সময় সঙ্গে ছিলেন।
হেফাজত ও জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়। হেফাজতের বিএনপিঘেঁষা নেতা মামুনুল সরকারবিরোধী তীব্র আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেওয়ার পর সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার হন। এক বছরের বেশি সময় জেলে থাকার পর মুচলেকা দিয়ে তিনি জামিনে অলিখিত শর্তে মুক্তিলাভের চেষ্টা করছেন। একটি মামলায় জামিন পেলেও দুটি মামলায় জেলে আছেন।
আল্লামা শফী প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিএনপির পক্ষে, সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে শরিক করার চেষ্টা করছিলেন মামুনুল। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পাশাপাশি বিদেশিদের কাছে সরকারবিরোধী প্রচারণার অভিযোগও রয়েছে। হেফাজতের হাটহাজারীর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও হেফাজতভুক্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে শামিল করার চেষ্টা করছিলেন মামুনুল ও তার সহযোগীরা। এ নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ ছিল। আল্লামা শফীর পুত্রকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে মাদ্রাসার যাবতীয় কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নেওয়ার প্রক্রিয়া করছিলেন মামুনুল। গ্রেফতার হওয়ার পর মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আসে বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা দাবি করছেন। সরকার আল্লামা শফীর পুত্র ও তার প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী মাদ্রাসার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। পরিস্থিতির বিপাকে পড়ে মাওলানা মামুনুল আল্লামা শফীর পুত্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসেন যে, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি আর মাথা ঘামাবেন না। সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় এসে তার মুক্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে জেলখানায়ই মামুনুলের সঙ্গে আল্লামা শফীর পুত্রের একাধিক বৈঠক হয়। এদিকে বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারে মামুনুল ও তার সহযোগীরা হতাশা প্রকাশ করলেও ভেতরে ভেতরে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তাদের বন্ধন রয়েছে।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও সরকারের সঙ্গে আল্লামা শফীর মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদেরের বিশেষ ভূমিকা ছিল। মামুনুল হকের পরম বিশ্বস্ত এক হেফাজত নেতা ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবদুল্লাহ আবু তাহের ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হন। মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তা কোনো মহল থেকেই প্রকাশ করা হয়নি। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের চিঠিও দেওয়া হয়, যাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও নির্বাচন এবং সরকারবিরোধী কোনো ভূমিকায় না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বিএনপির সঙ্গে হেফাজত, জামায়াতের সম্পর্ক, সরকারবিরোধী ও নির্বাচন বানচাল করার ব্যাপারে বিএনপির আন্দোলনে তাদের সম্ভাব্য ভূমিকা এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সরকারকে উৎখাত ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির দাবির সঙ্গে তারা একাত্ম নন বলে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়। তবে প্রভাবমুক্ত, হস্তক্ষেপমুক্ত, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্ণ নিশ্চয়তা চান তারা। সরকারের স্বার্থেই তা করা জরুরি বলেও তারা মন্তব্য করেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার স্বার্থে বিরোধীদের প্রয়োজনীয় ছাড় দেওয়ার কথাও বলেন। সরকারের সঙ্গে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনার বিষয়টি বিএনপি শিবিরেও সন্দেহ, শঙ্কার জন্ম দিয়েছে এবং ক্রমে তা তীব্র আকার নিচ্ছে। সমান্তরাল কর্মসূচিতে মাঠে নামার পর জামায়াত, হেফাজত ও অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে তাতে বিএনপির আন্দোলন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপি দুর্ভাবনায় পড়েছে।
এদিকে জামায়াতের শীর্ষ নেতা কুমিল্লার তাহের নির্বাচনে অংশ নেবেন। চৌদ্দগ্রাম থেকে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এখানে তিনি ইতিপূর্বে বিজয়ী হন। এখানে বিএনপির প্রার্থী নেই। রয়েছেন কাজী জাফরের কন্যা কাজী জয়া। জামায়াতের কমপক্ষে সাত-আটজন নেতাকে বিজয়ী করে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেই জানা যায়।