মাহমুদ রেজা চৌধুরী
বর্তমান শতাব্দীতে এসে মানুষের নানান চিন্তার রূপ এবং রূপান্তরে কোনটা সত্য, কোনটা সত্যের বিপরীত বা বিপরীত সত্য, কোনটা কেবল তথ্যের সত্য, কোনটা অবিনশ্বর সত্য, কোনটা আদর্শিক সত্য, কোনটা কেবল দলীয় সত্য, কোনটা অধিকার, কোনটা অনধিকার, কোনটা মানবাধিকার, কোনটা সন্ত্রাস, কোনটা ভয়, কোনটা ভয়ের সংস্কৃতি-এসব নানান প্রশ্ন মনে দুশ্চিন্তা জোগায়।
মনে পড়ে, আজ থেকে বহু বছর আগে ভারত উপমহাদেশের অন্যতম সমাজচিন্তক শ্রী অম্লান দত্তের একটি রচনার কথা ‘মানুষ মানুষ!!’ সেই লেখায় লেখক বলেছিলেন তার জীবনের স্মৃতিচারণের একটি প্রসঙ্গ। ১৩ মার্চ ১৯৬৯ সালের কথা। ওই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর সত্যেন্দ্রনাথ সেনকে একদল যুবক তার অফিসকক্ষে বন্দী করে রাখে। ডক্টর সেনের সাথে তখন শ্রী অম্লান দত্ত একই অবস্থায় যুবকদের হাতে বন্দী হন। যদিও বিক্ষুব্ধ যুবকদের সমস্যা ছিল উপাচার্য ডক্টর সেনের সাথে, তবু বিদ্রোহীদের কণ্ঠে শ্রী অম্লান দত্তের নামও উঠে আসছিল। লেখকের মতে, মার্কস, লেনিন ও গান্ধীজির ব্যাপারে লেখকের মতামতের ব্যাপারে বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদীরা তাদের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লেখক শ্রী অম্লান দত্তকেও পুড়িয়ে মারার ভয় দেখান।

একসময় ইউরোপের ইতিহাসে এ রকম হিংস্র অধ্যায় ছিল। এক ধর্মমতের মানুষ সেদিন পরম উৎসাহ নিয়ে অপর মতের মানুষকে পুড়িয়ে মারত। তারপর সে যুগের পরিবর্তন হয়েছে অনেক। ভলতেয়র থেকে জন স্টুয়ার্ট মিল পর্যন্ত অনেকেই অবিস্মরণীয় ভাষায় পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু মানবপ্রকৃতির আমূল পরিবর্তন এখনো সেভাবে হয়েছে কি? বিপ্লবের নামে অথবা ব্যক্তি ও দলীয় প্রভাবের কারণে আজও সভ্যতায় আমাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা যেটুকু থাকার প্রয়োজন, সেটাও বোধ করি চ্যালেঞ্জের মুখে।
শ্রী অম্লান তার উল্লেখিত লেখায় লিখেছিলেন, ‘যে যুবকেরা সেই সন্ধ্যায় আমাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুবাক্য উচ্চারণ করেছিলেন, তারা যে আদর্শবাদী, এতে আমার সন্দেহ নেই। প্রেমই এদের হিংসাকে এমন কুণ্ঠাহীন করেছে। ইউরোপে যে ধর্মান্ধ মানুষেরা একদিন বিধর্মীকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন, তারাও নিঃসন্দেহে আদর্শনিষ্ঠ ছিলেন। প্রবল হিংসা ও আদর্শ প্রেমের এই সংমিশ্রণে মানুষ অন্যান্য জীবের চেয়ে রহস্যময় ও ভয়ংকর। মানুষের মনে হিংসা ও প্রেমের এই মিশ্রণকে যদি না বুঝি তো মানুষকে বোঝা সহজ হবে না।’
এ কথা সত্য যে, জীবনধারণের জন্য যতখানি হিংসার প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেকটা বেশি পরিমাণ হিংসাই মানুষের প্রকৃতিতে আছে। মানুষের মনের গভীরে জমা আছে এক দীর্ঘ প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্ধকার, যখন মানুষ ছিল অজ্ঞ, ভীত, মারণাস্ত্র দুর্বল। অনেক সমাজবিজ্ঞানীর মতে, সেই বিপৎসংকুল গণনাতীত দীর্ঘ যুগের উত্তরাধিকারী আজকের পৃথিবীর মানুষ। যে বর্বর অতীতকে আমরা বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় পেছনে ফেলে এসেছি, আমাদের অন্তঃপ্রকৃতিতে তার আধিপত্য আজও অব্যাহত আছে। এই যুগ আমাদেরকে শিখিয়েছে নতুন ভাষা। পুরোনো হিংসাকে আমরা প্রকাশ করছি আজকে নতুন ভাষায়। আমাদের এই নতুন ভাষায় মানুষের আদিম প্রকৃতি হিংসা-প্রতিহিংসাকে এখনো আমরা লালন করছি জ্ঞাতার্থে কিংবা অজ্ঞাতে।
আমরা এখন প্রায়ই মানবাধিকার বিষয় নিয়ে বেশ উঁচু গলায় কথা বলি। মানবাধিকারের এই বিষয়টা এখন অনেকটাই দলীয় সম্পদ, ব্যক্তিগত সম্পদ, শাসকের সম্পদ, পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যের অন্তর্গত। মানবতা নিয়ে আজ যতটা মানবতার সপক্ষে কাজ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে এর বাণিজ্য এবং প্রচার-প্রসারণের বল্গাহীন প্রতিযোগিতা।
১৯৪৮ সালের সম্ভবত ১০ ডিসেম্বর, বিশ্বের মানবাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিন। ৪৮টি দেশের মধ্যে ৪০টি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। কোনো দেশ তখন এর বিরোধিতা করেনি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ দুটি সমাজতান্ত্রিক দেশ সনদের কেবল ১৭ নাম্বার ধারায় আপত্তি জানিয়েছিল। যুক্তি ছিল, যেহেতু ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার সমাজতান্ত্রিক দেশে নেই, সেহেতু তাদের দেশে নাগরিকদের সম্পত্তির অধিকার তারা প্রদান করতে পারবে না। সৌদি আরব আপত্তি জানিয়েছিল ব্যক্তির ধর্ম পরিবর্তনের ধারার জন্য। তৎকালীন শ্বেতাঙ্গ শাসনের দক্ষিণ আফ্রিকা আপত্তি করেছিল বর্ণবৈষম্যবিরোধী ধারার জন্য। আজ যদি সুযোগ থাকত, তাহলে হয়তো-বা বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল এবং শাসক দল মানবাধিকারের ধারা থেকে, বিশেষ করে সরকারের ভূমিকাকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চেষ্টা করতেন। তারা তখন বলতেন, মানবাধিকারের বিষয়টি বিশ্বজনীন না, এটাকে দেখতে হবে দেশকাল, স্থান, শাসক এবং তাদের মতো করে।
যা-ই হোক, সর্বমোট প্রায় ৩০টি ধারা-সংবলিত মানবাধিকার ঘোষণাকে আজ ‘The Magna Carta of Mankind’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উল্লেখিত ঘোষণার অধিকারকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটিকে বলা হয় নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অপরটি নাগরিকের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। তবে মানবাধিকার আন্দোলনে অভিঘাত, গুরুত্ব পেয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, যেমন অত্যাচারিত না হওয়ার অধিকার, বিনা বিচারে আটক না থাকার অধিকার, নারী-পুরুষের সমানাধিকার, দাসত্বে বা অন্য কোনো ধরনের অবৈধ বন্ধনে না থাকার অধিকার ইত্যাদিতে।
সময় ও কালের পরিবর্তনে নাগরিক অধিকার বা মানবাধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বীকৃত হয়েছে।
যেমন রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার-সংক্রান্ত সনদের ধারা ৪-এ জরুরি অবস্থা জারি করার ও নাগরিক অধিকার হরণের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে স্বীকার করে নেওয়া আছে। দ্বিতীয়ত, এই একই সনদের ধারা ২৯(২) অনুসারে নাগরিকের অধিকারের ওপর ‘নির্দিষ্ট’ সীমাবদ্ধতা জারি করা আছে, যাকে অধ্যাপক হিগিন্স অথবা অধ্যাপক রিচর্ড ইলিচের মতো বিশেষজ্ঞরা ‘Claw back’ ধারা বলে চিহ্নিত করেন। জরুরি অবস্থা জারি করার পরও নাগরিক অধিকারগুলো সেই দেশে যাতে কোনোভাবেই নস্যাৎ না করা হয়, তার জন্য বিশ্ব আইনজীবী সংঘ ১৬টি নাগরিক অধিকারকে চিহ্নিতভাবে ‘Non- derogable’ বলে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে, যেমন জীবনের অধিকার, অত্যাচারী না হওয়ার অধিকার, ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তি, কালাকানুন জারি না করা, চিন্তা ও মতামতের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখা, নাগরিকের সব ধরনের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক মুক্তির অধিকার সুনিশ্চিত রাখা। এগুলোকে অনেকে ‘emergency proof’ অধিকার বলেও আখ্যায়িত করেন।
উল্লিখিত চিন্তা ও যুক্তির আলোকে মানবাধিকার বিষয়টিকে আজকে যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখি, এককথায় পৃথিবীর সর্বত্রই এই অধিকার আজ শাসকের বুটের নিচে অথবা শাসক শ্রেণি ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দখলে। এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন তো পদে পদে আপনার বিপদের আশঙ্কা লোহার শিকলের মতো হাতে বা গলায় এসে পড়বে।
আপনি গায়েব হয়ে যাবেন, অথবা ক্রসফায়ারে লাশও হতে পারেন। পরিবার তখন মানবাধিকারের কথা বলবে, শাসক বলবে রাষ্ট্রদ্রোহের কথা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যক্তি তখন দুর্বল শক্তি মাত্র। তখন শাসকশ্রেণি হাজারো যুক্তি উপস্থাপন করবে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি বা করলেও অমুকে সেটা করেছে তমুকে সেটা করে। তথাকথিত রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নামে এ ধরনের অধিকারগুলো শাসকশ্রেণি তখন নিয়ন্ত্রণ করতে উৎসাহ বোধ করে। একই শ্রেণিশক্তি যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে, তখন তাদের কাছে মানবাধিকারের সংজ্ঞা এবং চরিত্র যা হয়, সেটা তারা ক্ষমতায় গেলেই বদলে যায়। তখন মানবাধিকার বলতে শাসকের অধিকার, দলের বা দলীয় অধিকার, ব্যক্তি বা শ্রেণির অধিকার ইত্যাদির পরে আসবে আপনার মানবাধিকার।
কোনো একটি নির্দিষ্ট সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকে নিয়ে মানবাধিকারের বাস্তবতা আলোচনা করা আজ খুব কঠিন। কারণ বিষয়টা ক্যানসারের মতো মানবসভ্যতার দেহের কোষে কোষে পৌঁছে গেছে। এখানে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যক্তি তার একক শক্তি এবং আধিপত্যকে সুযোগ পেলেই অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে প্রবৃত্ত হয়। মানবাধিকার বলতে অনেক ব্যক্তি তখন কেবল তার বা তাদের দলীয় অধিকারকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
তবু আমরা যেহেতু রাজনৈতিকভাবেও অনেক সংবেদনশীল মানুষ, তাই ইচ্ছা না করলেও নির্দিষ্ট দেশ ও সমাজে মানবাধিকারের বাস্তবতা নিয়ে একেবারে কথা না বলে পারি না। সে কারণে আজ বাংলাদেশ মানবাধিকারের অবস্থান আমাদের অনেককেই ভাবায় বৈকি। পৃথিবীর অনেক দেশে যেমন মানবাধিকার চর্চা হচ্ছে না, একইভাবে বাংলাদেশেও হচ্ছে বলার কোনো যুক্তি নেই। আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর সময় থেকেই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পাঠে মানবাধিকার বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে নিগৃহীত হয়েছে এবং এখনো একই অবস্থানে আছে।
এর বহুবিধ কারণ আছে, যার সমাধান হলো গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম, আন্দোলন, প্রতিবাদী উচ্চারণ, লেখা এবং মতামত প্রকাশ করাকে অব্যাহত রাখা। এতে বাধা আসবে, বিপদ আসবে, চ্যালেঞ্জ আসবে। তবু যেন দমে না যাই। প্রতিহিংসার ভেতরেও যে আদর্শ থাকতে পারে, সেটাকে অস্বীকার না করেও আমরা বলতে পারি, মানুষে মানুষের ভ্রাতৃত্বের প্রশ্নে, মানুষের প্রতি মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কেবল একার হিসাবটা কিংবা একার চিন্তাটাই প্রধান নয়। একজন ব্যক্তির প্রতিহিংসা যেমন তার প্রচারের অধিকার আছে, একইভাবে যেকোনো মানুষ কারোর দ্বারা আক্রান্ত হলে তার আক্রান্ত হওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে কি না, এটাকেও ভেবে দেখা জরুরি।
কোনো মানুষকে বোঝার ব্যাপারে তার হিংসার আদর্শবোধকে অস্বীকার না করেও বলা যায়, নির্দিষ্ট হিংসা-প্রতিহিংসা যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন নির্দিষ্ট শ্রেণির হিংসাকে কেবল আদর্শবাদী বলে ধরে নিতে পারি না। মানবাধিকার একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ব্যক্তি ও সামাজিক অধিকার। একে লঙ্ঘন করে কোনো রাষ্ট্র, কোনো সরকার বা সমাজ যদি ভিন্ন পথে অগ্রসর হতে চেষ্টা করে, সেটাকে এককথায় সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসবাদ বলা যুক্তিসংগত। মানবাধিকার প্রশ্নে এর কোনো অল্টারনেটিভ ট্রুথ বলে কিছু নেই।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রে আজ মানবাধিকারের ডাকনাম ফ্যাসিজম বা সন্ত্রাসবাদ হয়ে গেছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তায়নের কারণে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং হিসাব-নিকাশে বলতে গেলে প্রতি ঘণ্টায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরতিহীন তৎপরতার মধ্য দিয়ে। বিচার বলে কিছু নেই এখন। বিচারের নামে যা চলছে, সেটাও একধরনের একক আধিপত্যবাদ এবং দলীয় সন্ত্রাসী তৎপরতা। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই বাংলাদেশে লঙ্ঘিত মানবাধিকারের দৃশ্য চোখে পড়ে, টেলিভিশনে খবর শুনলে এক কথা কানে আসে। আজকে এই সমস্যার কোনো সরল সমাধানের পথ খোলা নেই।
স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকে একটু একটু করে আমাদের মানবাধিকার চিন্তা এবং মানবতাবোধকেও আমরা হত্যা করেছি যখন যার সেটা প্রয়োজন হয়েছে। ব্যক্তিমানুষ হিসেবেও আমরা এখন অনেকটাই ‘রোবট’। ব্যক্তিজীবনেও তাই আমাদের একে অন্যের প্রতি মানবিক অনুভূতিগুলো কাজ করে না আর আগের মতো। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের অনেকের ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকেও দূরে সরে গেছি। অথবা এখানেও ধর্মকে ব্যবহার করছি শ্রেণি বা দলীয় স্বার্থে। নীতিনৈতিকতা বোধ তাই আজকে অরণ্যে কাঁদে।
এসব অনেক কারণে বিশ্বের অনেক জায়গায় যেমন, তেমনি বাংলাদেশেও মানবতাবোধ দলীয় সন্ত্রাসীদের দখলে। সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের একাংশ এই মানবতাবোধ নিয়ে, মানবতার চিন্তা নিয়ে দলীয় বক্তব্য দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এটাও আমাদের আরেক দুর্ভাগ্য।
বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস লগি-বইঠা সন্ত্রাসের চাইতেও ভয়াবহ। বন্দুকের চাইতেও ভয়াবহ। আমরা এই ধরনের একটি সংকটের মুখোমুখি এখন। আজ পৃথিবীর অনেক দেশ ও সমাজে দলীয় সন্ত্রাস এমনভাবে জালের মতো বিস্তৃত হয়ে পড়ছে, মানবাধিকার সেখান থেকে মুক্তির চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে নির্ভয়চিত্তে।
অধ্যাপক ডক্টর আলী রীয়াজের প্রকাশিত ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ বইটির কথাও বারবার মনে পড়ে। এই বই থেকেও জানতে পারি কী কী এবং কোন কোন কারণে বাংলাদেশে মানবাধিকার বহু বছর থেকেই ভূলুণ্ঠিত।
লেখক : সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক
১২ মার্চ ২০২১