
রাজশাহী : রাজশাহী অঞ্চলে বাড়ছে মানসিক রোগীর সংখ্যা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রাইভেট চেম্বার লক্ষ্য করলে দেখা যায় ভিড়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যে দেখা যায় বিগত ২০১৮ সালে বহিঃবিভাগের মানসিক বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন পনের হাজারের বেশি মানুষ। এর বাইরেও রয়েছে চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা করতে আসা বিপুলসংখ্যক রোগী। যার পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা বলে দেয় অবস্থার ভয়াবহতার কথা। রাজশাহী ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে মানসিক রোগী আসে। চিকিৎসার জন্য রয়েছেন চারজন চিকিৎসক। এর মধ্যে তিনজন বিশেষজ্ঞ আর একজন মেডিকেল অফিসার।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন বহিঃবিভাগে গড়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেয়। যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভালো তারা যান চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় গুরুতর রোগীদের পাবনার মানসিক হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। যারা নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব যাচ্ছেনা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন জানান, মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা বেশি। যা উদ্বেগজনক বটে। সাধারণত চৌদ্দ বছর থেকে পঞ্চাশ বছর বয়েসীরা মানসিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন। এদের বেশীর ভাগই সামাজিক, পারিবারিক ও মাদকাসক্ত সমস্যায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ও চেম্বারে আসাদের বেশীর ভাগের মধ্যে রয়েছে মাদকাসক্তি, বিষণœতা, উদাসীনতা, অস্থিরতা, হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা, বিরক্তিবোধ, অমনোযোগীতা, অতিচঞ্চলতা, মনোব্যাধি, নিজের ক্ষতি ও আত্মহত্যা, অবাধ যৌনাচার ও ভায়ালেন্সের প্রস্তুতি। যারা মানসিক বিষন্নতায় ভুগছেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কাজ করে। ফলে দেখা যাচ্ছে এ অঞ্চলে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। যা উদ্বেগজনক বটে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিত আকাশ সংস্কৃতি, পর্ণ, পারিবারিক বন্ধন আলগা হওয়া চরম বেকারত্ব, মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, মাদকের সহজলভ্যতা সর্বোপরি ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য চার দিকে ভর করেছে অস্থিরতা, হতাশা, বিষণœতা। আইনের শাসন না থাকা, নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সামাজিক অর্থনৈতিক বৈষম্য মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এখন দেশে দুটো শ্রেণী এক দরিদ্র আর অতি ধনী। এদের মধ্যে ফারাক আকাশ পাতাল। দেশে ৮০ লাখেরও বেশি মানসিক রোগী রয়েছে।