খলকু কামাল
ছোটবেলা থেকেই আমি একজন সিরিয়াস পাঠক, বিশেষ করে পত্র-পত্রিকার। ৮০’র দশকে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাক, খ্যাতিমান ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং সিলেটের সাপ্তাহিক যুগভেরীসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-প্রত্রিকা ও সাময়িকীই ছিল আমার নিত্যদিনের পড়ার সাথী। ইত্তেফাকের চিঠিপত্র কলামে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথা ও বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ও পাঠকের পাতা এবং প্রবাস থেকে পাতায় নিয়মিত চোখ বুলাতাম। ৮২ সালে ক’জন বন্ধুর সাথে মাধবকুন্ডে পিকনিক করতে গিয়ে মাইল খানেক ভাঙাচোরা রাস্তাকে সংস্কারের দাবি জানিয়ে ইত্তেফাকের চিঠিপত্র কলামে একটি ছোট লেখা প্রেরণ করি। সপ্তাহদিন পর সেটি ছাপা হলে নিজের মধ্যে দারুণ উৎসাহ চেপে বসে। ৮৪ সালের শেষ দিন পর্যন্ত দেশে থাকা অবস্থায় দেশ ও জাতির উন্নয়নে যা চিন্তা করেছি তা ছোট আকারের অনেক তথ্যবহুল লেখা ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে পাঠক ও সরকারের সামনে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও চিত্রবাংলায় ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে নিজের মনের কথা, সমাজের কথা, দেশের কথা অহরহ লিখেছি। ৮২ সালে শুরু করেছিলাম মাধবকুন্ডের হাজারো মানুষের জনদাবির সমস্যা নিয়ে, আর আল্লাহপাক ২০১৯ সালে এনে পৌছালেন এখনও কলম বন্ধ হয়নি বরং গতি অনেকটাই বেড়েছে। মুসলিম বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষের অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যাতে সমাধান হয়, তার জন্য, ওআইসি ও আরব লীগের শীর্ষ মহলের সুদৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করে চলেছি, এখনও শেষ হয়নি । ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এ প্রিয় দেশের নানা সমস্যা, বিশেষ করে যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তিন যুগ থেকে এ পর্যন্ত অজস্র লেখালেখি করে পুস্তিকার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে নিউইয়র্কে আসা মন্ত্রী, এমপি ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের হাতে স্মারকলিপি আকারে তুলে ধরেছি। ১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কে পাড়ি দেওয়ার পর দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় দেশের ছোট বড় যে সমস্ত লেখা ছাপা হয়েছে এর মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো নিয়ে ছোট্ট আকারে পুস্তিকার মাধ্যমে মহান জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন মাননীয় এমপি’র বরাবরে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করেছি যাতে তারা দেশের বিশেষ করে প্রতিটি উপজেলার বাস্তব সমস্যার ব্যাপারে অবগত হন এবং সংসদে তুলে ধরেন তাহলে আমি মনে করি আমার শ্রম সফল ও সার্থক হয়েছে। পাশাপাশি সিলেট-এর একজন সন্তান হিসাবে অত্র বিভাগের ৩৮টি উপজেলার সমস্যাকে চিহ্নিত করে লিফলেট আকারে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর সিলেটের ৩৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৯ জন সংসদ সদস্য বরাবরে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, বৃটেন, জার্মানী, ফ্রান্স, ইটালী, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, আরব আমিরাত, বাহরাইন, মালেশিয়ায় বসবাসকারী সিলেটিদের এবং তাদের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কাছে দাবিগুলো প্রেরণ করেছি। আমার একান্ত বিশ্বাস যেহেতু আমার দাবিগুলো যুক্তিসঙ্গত তাই তারাও আমার প্রতি সমর্থন জানিয়ে দাবি আদায়ের সংগ্রামে আমার সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করবেন। আমার বিশ্বাস আমরা যদি এক হয়ে আন্তরিকতার সাথে কর্তৃপক্ষ বরাবরে দাবি আদায়ে সোচ্চার হই তাহলে আমাদের প্রয়াস ব্যর্থ হবেনা, আমরা সফল হবোই। আর এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আমার এ প্রয়াস। আমার মতে, সারা বিশ্বের ৫৫টি মুসলিম দেশের ভবিষ্যত কল্যাণে স্ব-স্ব- দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা তাদেরকে উন্নতি ও অগ্রগতির স্বার্থে, প্রতিটি সেক্টরে পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তি ও উচ্চ মেধাসম্পন্ন জনবল বিশেষ করে পাইলট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, নার্স অবশ্যই তৈরি করবেন, যাতে তাদের দেশের অবকাঠামো মজবুত হয়। কোনোও দেশের পক্ষে একক ভাবে এ কাজ সম্ভব না হলে অন্য উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন মুসলিম দেশের সাহায্য সহযোগিতা নিতে পারেন। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখে আমি মুসলিম বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সমস্যাগুলো ইংরেজি ও আরবী ভাষায় অনুবাদ করে নিউইয়র্কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের দেশের প্রধানদের স্মারকলিপি আকারে প্রস্তুত করে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ সংগঠন ওআইসিসহ ২২ জাতি আরব লীগের মহাসচিবের বরাবরে ই-মেইল করার ব্যবস্থা করেছি। পৃথিবীতে বেচে থাকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহ পাকের দেয়া ক্ষুদ্র সামর্থ কাজে লাগিয়ে শতভাগ আন্তরিকতার সাথে মুসলিম উম্মাহর খেদমত করার শপথ নিয়েছি। আমাদের নায্য দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত যতটুকু প্রয়োজন লবিং ও জোরালো তদবির করেই যাবো। পত্র পত্রিকায় লিখেও সমস্যাগুলো সমাধানে স্মারকলিপি আর লিফলেট বিলি করে বসে থাকবো না। প্রয়োজনে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে যে কোন স্থানে বা দেশে যেকোন সময় ডাক পেলেই উপস্থিত হতে দ্বিধাবোধ করবোনা, ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ। জীবনের ৬০টি বছরের মধ্যে ৩৫টি বসন্ত কাটিয়ে দিলাম মার্কিন মুল্লুকে। মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে নগণ্য খাদেম, লেখক, গবেষক ও সমাজসেবক। আমার স্থায়ী নিবাস বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত বিভাগীয় শহর সিলেট-এর পশ্চিম প্রান্তে শেখঘাট এলাকায়। ১৯৮৪ সাল থেকে আমি স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বসবাসরত। ২ ছেলে ১ কন্যা সন্তানের জনক । আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সারা বিশ্বের নির্যাতিত,
নিপীড়িত মানুষের খেদমত করা। এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই নিবেদিত প্রাণ হয়ে লেখালেখি ও সমাজ সেবায় নিয়োজিত রেখেছি নিজেকে। অবশেষে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসে যারা আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক বহুগ্রন্থ, প্রণেতা আফতাব চৌধুরীর নাম উল্লেখ করতেই হয়। যার লেখা প্রতিনিয়তই দেশ-বিদেশের নামী-দামী পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়ে থাকে। আল্লাহ্ যেন এ গোনাহগার বান্দার ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবুল করেন, আমিন।
নিইউয়র্ক ।