ঠিকানা ডেস্ক : রাশিয়া কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার তথাকথিত হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলেছেন। এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। রাশিয়া কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। ১৬ জুলাই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুতিন। এতে ট্রাম্প উভয় দেশের মধ্যে আরো জোরদার সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনলাইন সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ১৬ জুলাই দুপুরের কিছু পরে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে দুই নেতার মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। সেখানকার প্রেসিডেন্ট ভবনে হাসিমুখে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করেন তারা। পরে বৈঠকের বিষয়ে অল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প ও পুতিন। এরপরই তাদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ সময় ওই কক্ষে দোভাষী ছাড়া আর কাউকে রাখেননি তারা। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তারা পরস্পরের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে সরাসরি লাঞ্চের জন্য নির্ধারিত টেবিলে বসেন দুই নেতা। ট্রাম্প ও পুতিন একেবারেই মুখোমুখি হয়ে বসেন। এ সময় দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খাবারের টেবিলে বসার আগে একজন সংবাদকর্মী চিৎকার করে ট্রাম্পের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চান। এতে সাড়া দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবার জন্য এটা খুবই ভালো সূচনা।’ এরপরই তিনি লাঞ্চের টেবিলে বসেন। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তার সঙ্গে ছিলেন। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বৈঠক শুরুর পূর্বে ট্রাম্প ও পুতিন অল্প সময়ের জন্য হাজির হন সাংবাদিকদের সামনে। এ সময় সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করায় পুতিনকে অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তার ভাষায়, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দুই পারমাণবিক শক্তি। আমি মনে করি, বিশ্ব আমাদের একসঙ্গে দেখতে চায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমি এখানে আসি না। তা প্রায় ২ বছরের কাছাকাছি। কিন্তু আশা করি, আমাদের মধ্যে অসাধারণ সম্পর্ক তৈরি হবে।’ জবাবে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান পুতিন। সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, আমাদের সম্পর্ক ও গোটা বিশ্বের সমস্যা নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা করার সময় এসেছে।
এছাড়া বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাস বলেছে, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন, ইউক্রেন, সিরিয়া, কোরিয়া উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে বৈঠক-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার বক্তৃতায় এসব বিষয় উল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, বাণিজ্য, চীন, পারমাণবিক বিস্তার রোধ ও সামরিক বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার পথে নিজের পূর্বসূরিদের নিয়ে বিষোদ্্গার করেছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমান তিক্ত সম্পর্কের জন্য তার পূর্বসূরিরা দায়ী। তার মতে, পূর্বসূরিদের বোকামির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নিজ দেশে কঠোর সমালোচনার মুখে ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলায় নিজ দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬-র নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন, ‘রাশিয়ার মাথা ঘামানোর কোনো কারণ নেই।’ ১৬ জুলাই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক শীর্ষ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তার এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের বিপরীত।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সমর্থনের পাল্লা হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নেওয়ার একটি উদ্যোগের পেছনে রাশিয়ার ভূমিকা ছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো সাইবার হামলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এ কাজ করেছিল তারা।
ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান সদস্য হাউস স্পিকার পল রায়ান বলেছেন, ‘রাশিয়া আমাদের মিত্র নয়, ট্রাম্পকে এটি বিবেচনায় রাখতে হবে।’ রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে ‘অশোভন কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থা না রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করবেন। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া এটি কেন করবে তার কোনো কারণ দেখি না আমি। রাশিয়া এটি করেনি বলে জোরালোভাবেই জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।’ ক্রেমলিনের নেতাকে বিশ্বাস না করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই বলে জানান ট্রাম্প।
ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। এক টুইটে গ্রাহাম বলেছেন, ‘২০১৬ সালে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে রাশিয়াকে শক্তভাবে দায়ী করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল।’ সিআইএর সাবেক পরিচালক জন ব্রেনান ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ থেকে কোনো অংশে কম নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এসব সমালোচনা সত্ত্বেও পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠককে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপে অভিযুক্ত ১২ রাশিয়ান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগে ১২ রুশ নাগরিককে অভিযুক্ত করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। স্পেশাল কাউন্সেলর রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত প্রতিবেদনে ডেমোক্রেট নেতাদের ই-মেইল ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকের জন্য তাদের অভিযুক্ত করা হয়। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। খবরে বলা হয়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া, এমন অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিজয়ী করার পক্ষ নিয়েছিল রাশিয়া। যদিও তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অভিযুক্ত ১২ জনই রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। এই গ্রুপটি রাশিয়া সেনাবাহিনী দ্বারাই পরিচালিত। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তার ই-মেইল হ্যাক ও ফাঁসসহ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখনই এই অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল হিলারি ক্লিনটন, ডেমোক্রেটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটি, ডেমোক্রেটিক কংগ্রেশনাল ক্যাম্পেইন কমিটির প্রচারণার তথ্য ফাঁস করা। হ্যাকের পর তারা প্রাপ্ত তথ্য ডিসি লিকস ও গুসিফার ২০-সহ অন্যান্য ইন্টারনেট প্রচারমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোড রসেনস্টাইন বলেন, অভিযুক্তদের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক নেই। তবে অভিযুক্তরা হ্যাকিং ও তথ্য ফাঁসের জন্য বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সাহায্য নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, নির্বাচনের ভোট গণনা কিংবা নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি লিন্ডসে ওয়াল্টার জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় হ্যাকিংয়ের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী প্রায় ৫ লাখ ভোটারের তথ্য চুরি করেছে। ১১ রুশ নাগরিকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। কম্পিউটার হ্যাকের জন্য আরো ২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।