কাজী রুহুল আমীন
নিঃসন্দেহে ক্বাদরের রাতেই আমি পবিত্র কুরআন নাযিল করেছি! আপনি কি জানেন, ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রাত সহস্র রজনী থেকেও শ্রেষ্ঠ। ২০ রোযার পরবর্তী বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদরের রজনী অনুসন্ধানের জন্য আমাদের প্রিয় নবী (স) নিজ উম্মতদের নির্দেশ দিয়েছেন। এতদসত্ত্বেও অনেক ধর্মপ্রাণ ও বিজ্ঞ আলেম ২৬ রোযার দিবাগত রাতকে ক্বদরের রাত হিসেবে জ্ঞান করে থাকেন। ক্বাদরের রাতেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক ফেরেস্তাদের সর্দার জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণী সর্বপ্রথম বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর নিকট অবতীর্ণ করেন। পরবর্তীতে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে আল্লাহ পাক তাঁর অমর, অদ্বিতীয়, অপরিবর্তিত, চিরন্তনী সত্য বাণী জিব্রাইল (আ) এর মাধ্যমে মহানবী (স) এর নিকট পৌঁছে দিয়েছিলেন। প্রতি ক্বাদরের রাতে ফেরেস্তা জিব্রাইল (আ.) বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর নিকট হাজির হতেন। পরিশুদ্ধ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতেন, যেন বিশ্বনবী (সা.) তাকে ধারণ করতে পারেন। পবিত্র কুরআন সকল গ্রন্থের জননী! তাই পবিত্র কুরআন ভুল উচ্চারণে তেলাওয়াত করলে অর্থ বিকৃত হয়ে যায় যা অমার্জনীয় এবং পাপ কার্য! বিশ্বনবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পূর্বে ক্বাদরের রাতে জিব্রাইল (আ.) দু’বার ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে সমগ্র পাক কুরআন পরিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করেছিলেন। একমাত্র পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করা সম্ভব। অন্যকোন ধর্ম বা ঐশী গ্রন্থ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা সম্ভব নয়।
পবিত্র কুরআন জ্ঞানের আধার। একমাত্র পবিত্র কুরআনেই ‘পড়-! সেই প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ উল্লেখ রয়েছে। অন্য কোন ঐশী গ্রন্থের ক্ষেত্রে এ ধরনের শব্দ উল্লেখ করা হয়নি। পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে কুরআনে। আল কুরআনে আরও বলা হয়েছে ‘আমার সৃষ্টি রহস্যকে জানতে চেষ্টা করলেই সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারবে।’ পবিত্র কুরআন কেবল জ্ঞান ভা-ারেই পরিপূর্ণ নয় বরং বিজ্ঞানভিত্তিক, ছন্দময়, গতিময়, কাব্যময়, ঐশ্বরিক এবং শক্তিশালী গ্রন্থ। পবিত্র কুরআনের প্রাচীন পা-ুলিপি নিখুঁত, নিপুণ, এবং শৈল্পিক ও কারুকার্যমন্ডিত। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য তাজমহলের অভ্যন্তরে পবিত্র কুরআনের অতি কারুকার্যময় প্রাচীন লেখক পদ্ধতি তার জ্বলন্ত স্বাক্ষর! রাণী এলিজাবেথ (দ্বিতীয়) এবং রাজকুমারী ডায়না তাজমহল দর্শনে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েন! ফরাসী মনীষী মরিস বুকাইলী পবিত্র কুরআন সম্পর্কে বলেন: পবিত্র কুরআন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রন্থশালা বিজ্ঞানীদের জন্য,নিখুঁত ব্যাকরণ বৈয়াকরণদের জন্য, কাব্যগ্রন্থ কবিদের জন্য এবং একটি প্রতিষ্ঠান, আইন এবং আইন প্রণেতাদের জন্য। নিঃসন্দেহে পবিত্র কুরআন অন্য সকল গ্রন্থের জননী!
পবিত্র কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আদি ভিত্তি। একুশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা প্যারালাল ইউনিভার্স অর্থাৎ একাধিক বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের অস্তিত্বের সন্ধান দিচ্ছেন। অথচ প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে অবতীর্ণ পবিত্র কুরআনে ১৮০০০ মাখলুকাতের বর্ণনা রয়েছে। আর প্রতিনিয়ত প্রতিটি মাখলুকাত পরিবর্তিত ও সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটি ধ্বংস হবার পর, সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে নতুন গ্রহ, তারকা, সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব ভ্রমা- প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল!…আলোর গতি প্রতি সেকেন্ড এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। বিশাল তারকারাজির প্রবল মহাকর্ষ শক্তির কারণে আলোর গতি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। ব্ল্যাক হোল প্রচ- শক্তির আধার। এর আকর্ষণ শক্তি কল্পনাতীত! এর নিকটস্থ হলেই ব্ল্যাক হোল তাকে গ্রাস করে। নভোমন্ডলে অগণিত ব্ল্যাক হোল রয়েছে। বৃহৎ ব্ল্যাক হোল অপেক্ষাকৃত ছোট ব্ল্যাক হোলকে গ্রাস করে এবং আকারে আয়তনে আরো বৃহৎ ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়।
বিশ্বনবী (সা.) বোরাক নামক নভোযানযোগে সপ্ত আসমান ভেদ করে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করেছিলেন। কোনো ব্ল্যাক হোলের প্রবল আকর্ষণ শক্তি বোরাকের উর্ধযাত্রা রোধ করতে পারেনি! আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ শেসে বিশ্ব নবী (সা.) যখন মর্ত্যরে বুকে ফিরে এসেছিলেন তখন জাগতিক হিসাব অনুসারে ২৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল। অথচ পবিত্র কুরআনে মিরাজ বা ঊর্ধগমনকে এক রাতের ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুযায়ী আল্লাহ পাকের এক ঘণ্টার সমতুল্য পৃথিবীর ৫০ হাজার বছর। এমতাবস্থায় বোরাকের গতিবেগ বৈজ্ঞানিক সমীকরণের আওতায় আসেনা। বিজ্ঞানীরা বোরাকের সময়কে ‘টাইম র্যাপচারিং’ অর্থাৎ সময় খারিজ বলে উল্লেখ করেন! মিরাজের ঘটনাকে একুশ শতকের বিজ্ঞানীরা শাশ্বত সত্য হিসেবে স্বীকার করেন! তাই পবিত্র কুরআন বিজ্ঞানভিত্তিক সত্য দলিল এটি অনস্বীকার্য।
অমুসলিমদের চোখে ইসলাম বিজ্ঞানভিত্তিক। এ কথা স্বীকার করেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত ব্রাহ্মণ প-িত সাবেক ভারত প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু। নেহেরু বলেন, প্রাচীন মিশর কিংবা চীন অথবা ভারতের মাঝে আমরা বিজ্ঞানের উৎকর্ষের উৎস খুঁজে পাইনি। প্রাচীন গ্রীকদের মাঝে আমরা কিছুটা খুঁজে পাই। আবার রোমের মধ্যে তা অনুপস্থিত! কিন্তু আরবদের মাঝে আছে সেই বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী শক্তির উৎস। সুতরাং তাদেরকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা যেতে পারে। -পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু ‘গ্লিমস অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি। লন্ডন, ১৯৩১ সাল।
পবিত্র কুরআন ছন্দময়, গতিময়, কাব্যময় এবং ঐশ্বরিক গ্রন্থ। মনীষী বুখনট বলেছেন,‘সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র কুরআন অর্ধেক গদ্য এবং অর্ধেক পদ্যের ছন্দে পরিশুদ্ধ আরবি ভাষায় পরিস্ফুটিত! এমন বলা হয়ে থাকে, বৈয়াকরণগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের নিয়মে কুরআন শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে সমতুল্য প্রতিশব্দ বহুবার প্রয়োগ করেও অবিকল অনুভূতি প্রকাশের প্রয়াস চালিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের মাধুরীসিক্ত অনুপম প্রকাশভঙ্গির অনুরূপ প্রকাশের সমকক্ষ রচনাশৈলী অদ্যাবধি কেউ করতে সফল হয়নি!’- এফ এফ আর বুখনট, দ্য কনস্ট্রাকশন অব দ্য বাইবেল এন্ড দ্য কুরআন। লন্ডন ১৮৮৫ সাল। ইসলাম বিশ্ব গৌরবের প্রতীক। বিশ্বনন্দিত নেতা এবং অহিংসানীতির জনক মহত্মাগান্ধী ইসলাম সম্পর্কে বলেন, ‘এটি (ইসলাম) গোটা বিশ্বে গৌরবের জ্বলন্ত প্রতীক। যখন পাশ্চাত্যবিশ্ব অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন প্রাচ্যের নভোমন্ডলে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র উদিত হলো এবং এই বিদগ্ধ পৃথিবীতে ইসলাম আলোকিত এবং সান্ত¦না দিচ্ছে। ইসলাম সত্য ধর্ম। হিন্দুরা অতি ভক্তি সহকারে বার বার পাঠ করুন, তারা কুরআন ভালোবাসবেন যেমন আমি ভালোবাসি। যখন, বিশ্বনবী (সা.)-এর দ্বিতীয় খণ্ড জীবনাদর্শ পাঠ শেষ করেছি, আমি ব্যথিত হয়েছি। আমার জীবনে এই মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে পাঠের আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। -মহাত্মা গান্ধী।
ইসলাম বিশ্ব সভ্যতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর! ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের মনীষী এইচ এ আর গিবস্ বলেন, ইসলাম নিঃসন্দেহে পদ্ধতিগত ধর্মতত্ত্বের বহু উচ্চ আসনে আসীন। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতা! অন্য কোনো ধর্ম বৃহত্তর অগ্রগতির সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। পরিশুদ্ধ অথবা প্রগতির সঙ্গে সংগতি রেখে মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণ ইসলাম ব্যতীত আর কেউ করতে সক্ষম হয়নি। -এইচ. এ. আর গিবস।
স্যার রাধা কৃষ্ণ বলেন, ‘ ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের যে অস্তিত্ব তাকে আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না। ইসলামিক ভ্রাতৃত্ববোধ সকল জাতি এবং দেশের বাধাকে অতিক্রম করেছে, এমন একটি কাঠামো আর কোনো ধর্মে গড়ে তুলতে পারেনি!’ স্যার রাধা কৃষ্ণ। ‘ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট ইন রিলিজিয়ন।
সরোজীনি নাইডু ইসলামকে গণতন্ত্রের বির্মূত প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি ছিল প্রথম ধর্ম যা ধর্মের বাণী প্রচারের পাশাপাশি গণতন্ত্রের ভিত রচনা করে। মসজিদের মিনার থেকে আজানের ধ্বনী ভেসে আসে এবং ইবাদতকারীরা একত্রে মিলিত হয়। মুসলমানদের কর্মকান্ডে গণতন্ত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে! প্রতিদিন পাঁচবার কৃষক এবং বাদশাহ একত্রে পাশাপাশি নতজানু হয়ে এক সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করে এবং ঘোষণা করতে থাকে ‘এক আল্লাহপাক মহান!’ তিনি আরও বলেন, আমি বারবার বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যাই ইসলামের এই অদৃশ্য একতা যা মানব জাতিকে অটুট ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে পরিণত করেছে! বিচারের আদর্শ ইসলামের সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম বিষয়। কারণ, আমি যখন পবিত্র কুরআন পাঠ করি, আমি জীবনের ঐ গতিশীল নীতিমালাগুলো খুঁজে পাই। রহস্যপূর্ণ নয় বরং বাস্তবভিত্তিক তত্ত্ব যা গোটা বিশ্বে প্রতিদিন মানব আচরণের পরিপূরক। সরোজীনি নাইডু। মাদ্রাজ, ১৯১৮ সাল।
স্যার সিপি রামস্বামী অ্যায়ারের ভাষায় ইসলাম চিরন্তনী অনাদর্শ, বৈষম্য, শ্রেণী প্রথা, বর্ণ প্রথার ও কবর রচনা করেছে। অ্যায়ার আরও বলেন, একজন গোঁড়া হিন্দু হয়েও আমি ইসলামের আদর্শে অভিভূত হয়েছি। হিন্দু ধর্মের গোঁড়া দর্শন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত ব্যতীত, আমার নিজস্ব হিন্দু ধর্ম একক মানবতাবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি! অন্য কোনো ধর্মে, তাদের ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন, অত্যাবশ্যকীয় একক সৃষ্টিকর্তার নিকট সকল মানুষ সমান, এ্ বাস্তব কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, যা একমাত্র ইসলামই বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়েছে! যদি আপনি ধ্যানমগ্ন মুসলমানদের ধর্মীয় আচরণ, মসজিদে কাতারবন্দী হয়ে নামাজ আদায়, কিংবা কোন গতানুগতিক, অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাধারণ পরিবেশে খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন তবে দেখতে পাবেন যে সর্বনিম্ন ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ ব্যক্তি সকলে ইসলামে সমান। শত ছিন্নবস্ত্র পরিধানকারী একজন ভিখারি যখন ইবাদতের জন্য আজান দেন, তখন সম্রাট তাকে অনুসরণ করেন। মুহম্মদ (সা.) ব্যতীত আর কোনো ধর্ম প্রচারকারী বাস্তবে এত বেশি বাস্তব নিদর্শন স্থাপন করতে পারেনি! আমি ধর্মতত্ত্বের কথা বলছি না। জাতি প্রথা, শ্বেতাঙ্গ, পীতবর্ণ এবং কৃষ্ণাঙ্গের ভেদাভেদ একমাত্র ইসলাম ধর্মে নেই। -স্যার সিপি রামস্বামী।
সুবহে সাদেক অর্থাৎ রাতের বিদায় এবং দিনের সূচনার পূর্ব মুহূর্তে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের মিনারা থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠ থেকে ধ্বনিত হয় “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর!/আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাহ্,/আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাহ্!/আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ্!/আল্লাহ আকবর, আল্লাহ আকবর/লা ইলাহা ইল্লাহ্…”।
উপরোক্ত কথাগুলোর কোনো বিকল্প নেই। এই চিরন্তনী শাশ্বত বাণীর সমকক্ষ আর কোনো শব্দ নেই। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে, মৃত্যু সংবাদ শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গেই অপর মুসলমানকে উচ্চারণ করতে হয়, ‘ইন্না লিল্লাহি, ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’! এই চিরন্তন বাণীর কোনো বিকল্প শব্দ নেই!… হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয় আল্লাহ মুহম্মদ রসুল (মুহম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রসূল)
সুস্থ সবল ও অবস্থাপন্ন মুসলমানদের জন্য জীবদ্দশায় অন্তত : একবার হজ্ব পালন করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ । হজ্ব পালনকালে সারা পৃথিবীর মুসলমান মক্কায় সমবেত হলে জনসমুদ্র রচিত হয়। যেখানে বিশ্ব নবী (সা.) শেষ বিদায় ভাষণ দিয়েছিলেন সেই পবিত্র আরাফাত ময়দানে হজ্বের তারিখে লাখ লাখ মুসলমান ঊর্ধ্বাকাশে মুখ তুলে লক্ষ ফরিয়াদ করতে থাকেন-“লাব্বায়েক!/আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক/ লাব্বায়েক লাশারিকা লাকা, লাব্বায়েক/ ইন্নাল হামদি ওয়া নেই মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারিকা লাকা।
বিশ্ব ভ্রমা-ের মালিক এবং বান্দার মধ্যবর্তী আর কেউ নাই। এখানে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু, কোন ভেদাভেদ নেই। কোন পার্থক্য নেই। এখানে সকল মানুষ সমান!
জার্মানীর মহাকবি গ্যাটে বলেন, বিশ্ব ব্রক্ষ্মা-ের মালিকের কাছে নিরঙ্কুশভাবে আত্মসমর্পণই যদি ইসলাম হয়, তাহলে আমরা সকলে কি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নই? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একেশ্বরবাদীর পূজারী ছিলেন। একেশ্বরবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন: ‘রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম/ ভিক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম// পথভাবে আমি দেব, রথভাবে আমি/ মূর্তিভাবে আমি দেব, হাসে অর্ন্তযামী!’ তিনি আরও বলেন, যদি মহৎ উদ্দেশ্য, সীমিত সম্পদ এবং কালজয়ী স্বাক্ষর- এ তিনটি সর্বোচ্চ গুণ মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা নির্ধারণের মানদন্ড হয়, তাহলে আধুনিক ইতিহাসে কার স্পর্ধা আছে যিনি মুহম্মদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে পারেন? জগত বিখ্যাত ব্যক্তিগণ অস্ত্র নির্মাণ, আইন সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যই তৈরি করেছেন। অনেকে বস্তুবাদী শক্তি প্রতিষ্ঠা করলে প্রায়শ তাদের চোখের সম্মুখেই সব কিছু ধুলিসাত হয়ে গেছে!
অন্যদিকে মুহম্মদ (স) এর নিকট অবতীর্ণ পবিত্র কুরআনের প্রতিটি বাণী আইনে পরিণত হয়েছে। মুহম্মদ (স) মানব জাতিকে ঐশ্বরিক পথের সন্ধান দিয়েছেন যেখানে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন জাতি, মিলে মিশে একাকার হয়েছে। দার্শনিক অনলবর্ষী বক্তা, বার্তা বাহক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, বিভিন্ন আদর্শের উদ্ভাবক, ন্যায়পরায়ণতার রক্ষক, মূর্তিহীন ধর্মের প্রচারক, বিশটি পার্থিব এবং একটি ঐশ্বরিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মুহম্মদ (স)। যে সমস্ত গুণাবলীর মানদ-ে একজন ব্যক্তির মহত্বকে পরিমাপ করা হয়ে থাকে, তাহলে মুহম্মদ (স) এর সমতুল্য গুণাবলী কার রয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছে ল্যামারটাইন ‘হিস্টোরি ডিলা টারকুই,’ প্যারিস ১৮৫৪ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের সংরক্ষণে পবিত্র কুরআনের একটি কপি ছিল আমরা অনেকেই হয়ত বা তা জানিনা। প্রায় ২,৫০০ বছর পূর্বে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেনÑ পরিপূর্ণ মানবের মহান দায়িত্ব হচ্ছে সমগ্র মানব জাতিকে একত্রিত করা। কারণ সমষ্টিগত মানবগোষ্ঠীই মানব জাতির পরিপূর্ণতা আনয়ন করতে পারে। সেই বিচারে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে একমাত্র ইসলাম। ইসলামের ছায়াতলে কোনো শ্রেণি প্রথা, জাতি প্রথা, বর্ণ প্রথা, পুরুষ, মহিলা, কোনো ভেদাভেদ নেই। এখানে সকলে সমান। মুসলমানদের মসজিদে কারুর জন্য কোনো আসন নির্দিষ্ট নেই।
ঐতিহাসিক তথ্যানুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪ অব্দে যীশু (ঈশা আ.) বেথেলহামে জন্মগ্রহণ করেন। আর ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব নবী (সা.) মক্কাতে । তিনিই সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসূল। হযরত ইশা বা যীশুও বিশ্ব নবী (সা.) পৃথিবীতে আগমনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যাহোক তিনি যখন সত্যের বাহক আসবেন, সত্য পথে পরিচালিত করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছু বলবেন না কিন্তু সৃষ্টিকর্তা দ্বারা যা আদিষ্ট হবেন, তাই তিনি বলবেন। তিনি তোমাদের অনাগত ভবিষ্যতের পদনির্দেশ করবেন।
হযরত মুসা (স) এর অবতীর্ণ পবিত্র তাওরাত গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে,-(এবং ইসমাইলের জন্য, আমি তার প্রার্থনা শ্রবণ করেছি : ধৈর্য ধারণ কর, আমি তাকে রহমত দান করেছি এবং তাকে সফলকামী করব এবং অতিদ্রুত বহুগুণে বৃদ্ধি করব, বাবাজন যুবরাজ জন্মগ্রহণ করবে এবং তাকে মহান জাতিকে পরিণত করব)। বলা বাহুল্য, মুসলিম সৃষ্টিকে ইবাদত করে না। স্রষ্টাকে ইবাদত করে!…
ইহুদি ধর্মাবলম্বী নোয়া ফেল্ডম্যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন রোডস স্কলার হিসেবে ইসলাম তত্ত্বের উপরে ডক্টরেট করেন। তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিষয়ক অধ্যাপক এবং সুপ্রিম কোর্টের সাবেক কর্মকর্তা। একদা তিনি চার্লি রোজ টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেন। চার্লি রোজ তাকে প্রশ্ন করেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভকারী ধর্ম কোনটি?’ বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে তিনি উত্তর দেন, ‘ইসলাম!’ বিশ্বনন্দিত নেতা মহত্মা গান্ধীর পুত্র ব্যারিস্টার হীরা লাল গান্ধী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং আবদুল্লাহ হীরা লাল গান্ধী নাম ধারণ করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনী শর্মিলা ঠাকুর পাতৌদি নবাবের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারী হন। ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা প্রখ্যাত সাংবাদিক স্যার জোনাখান বুথ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিতা হন। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাশীয় ক্লে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং মুহম্মদ আলী নামে পরিচিত হন। রাজনীতিক ম্যালকম এক্স এবং মুক্তিযোদ্ধা, মাইক টাইসন ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। দীন নাথ সেন দেবালয় আশ্রমের মহারাজা (স্বামীজি) অক্সফের্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ে ডক্টরেট করেন। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ও পাণ্ডিত্য দেখে ভারত তাকে সর্বোচ্চ ‘ভগবান’ উপাধীতে অলংকৃত করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং ইসলামুল হক নাম ধারণ করেন। ইতালির সাবেক এমপি ফ্র্যাংকো বারবাতোর কন্যা ম্যানুয়েলা ফ্র্যাংকো ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং আয়েশা নামে পরিচিতা হন। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর কীথ এালসুন ছাত্রাবস্থায় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। মার্কিন অন্যতম প্রধান রাজনীতিক ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান পদে আসীন হন। ইসলামকে আমরা চিনতে পারিনি। যারা চিনতে পেরেছেন, তাদেরকে আমরা কেবল বুঝতে পারি। নজরুল বলেছেন,“ইসলাম সে তো পরশমণি/ কে পেয়েছে তাঁরে খুঁজি/ পরশে তাহার সোনা হল যারা/ তাদেরই মোরা বুঝি।”
স্মর্তব্য, সিনেটর কীথ এলিসন লাইব্রেরী অব কংগ্রেসে রক্ষিত সহস্র বছরের প্রাচীন কুরআন স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করেন।
ভার্জিনিয়া।