স্পোর্টস রিপোর্ট : পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে মাশরাফি যাওয়ামাত্র সঞ্চালক ড্যানি মরিসন কিছুটা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলেন, আগে বলো তোমার হাঁটুর অবস্থা কেমন? স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে মাশরাফি জানান, ভালোই আছে আসলে কি তাই? ভালো হলে তো হাঁটুতে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামতেন না। মাশরাফি আসলে খেলেন মনের জোর দিয়ে। দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচারের পর খেলা তো দূরের বিষয়, হাঁটাচলা করাই তো ভাগ্যের বিষয় তবে মাশরাফি শুধু মাঠেই নামেন না, এই ৩৪ বছর বয়সেও পারফরম্যান্সে ছাপিয়ে যান সবাইকে। এই যেমন গত ২২ জুলাই রাতে গায়ানায় ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের মেরুদ- ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
এভিন লুইস, জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল, অ্যাশলে নার্স- প্রথম ওয়ানডেতে এই চারজন মাশরাফির শিকার। তাদের মধ্যে এক নার্স ছাড়া বাকি তিনজনের একা ম্যাচ বের করে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। অথচ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। তার পরও বিশ্ব ক্রিকেটের দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বোলিংয়ে সূচনাও করেন তিনিই। আঁটসাঁট বোলিংয়ে দুই দানবকে উইকেটে রীতিমতো বেঁধে রাখেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পুরস্কার হলো লুইসের উইকেট। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে ফেরান তিনি গতির বৈচিত্র্য দিয়ে। মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের কারণেই হোল্ডার ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। আড়াই বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা আন্দ্রে রাসেল ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ক্যারিবিয়ান এ অলরাউন্ডার যে একা কী করতে পারেন, সেটা সবাই জানে। এক প্রান্তে যখন আসা-যাওয়া চলছে তখনই হাত খুলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন রাসেল। মুস্তাফিজকে বিশাল ছক্কা ও চার মেরে নিজের মনোভাবটা তিনি বুঝিয়ে দেন। মুস্তাফিজেরই এমন অসহায় অবস্থা, তাহলে অন্যদের কী হবে দলের মধ্যে যখন এমন ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে, তখনই বল হাতে তুলে নিলেন মাশরাফি। মিড উইকেট দিয়ে রাসেলের মারার প্রবণতা দেখে একটু টেনে অফ-কাটার দেন মাশরাফি। কৌশলে সফল বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছয় মারতে গিয়ে বিশ্বের অন্যতম ভয়ানক ব্যাটসম্যান আকাশে তুলে দেন বল। রাসেলের মতো ব্যাটসম্যান যখন মেজাজে থাকেন, তখন তাতে এভাবে ফাঁদ পেতে আউট করা শুধু বুদ্ধি দিয়ে সম্ভব নয়, অনেক সাহসেরও প্রয়োজন।
এক কথায় দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে ঠিকমতো অনুশীলনই করতে পারেননি। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে গত ছয় মাস ধরেই তিনি তেমন অনুশীলন করেননি। গত জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর থেকে প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটই খেলেননি। কিন্তু এর কোনো ছাপই দেখা যায়নি। লাইন-লেন্থ ছিল দুন্দান্ত। কাটার, সেøায়ার, বাউন্সার দিয়ে ক্যারিবীয়দের রীতিমতো পর্যুদস্ত করেছেন তিনি। অনুশীলনে ঘাটতি ছিল বলেই হয়তো শেষ স্পেলে বোলিং করেছেন শর্ট রানআপে। দশম ওভারের শেষ ডেলিভারিটি তো স্পিন করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে শর্ট রানআপে অনেকবারই বোলিং করেছেন মাশরাফি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি। হয়তো সে কারণেই প্রথম ওয়ানডেতে নিজের পারফরম্যান্সে খুশি অধিনায়ক। এ বিষয়টি চোখ এড়ায়নি ধারাভাষ্যকারদের। সে কারণেই হয়তো ড্যানি মরিসনের প্রশ্নের উত্তর দেন তার প্রস্তুতি নিয়ে, গত দু-তিন মাস সেভাবে বোলিং করতে পারিনি। লম্বা রানআপে সেভাবে অনুশীলনও করতে পারিনি। তবে এমন সময় আসতেই পারে। ম্যাচে কাজটা এমনিতেই সব সময় কঠিন। তবে মাঠে আমি উপভোগ করেছি। এই ৩৪ বছর বয়সে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এমন দাপুটে বোলিং আসলে মাশরাফির পক্ষেই সম্ভব। হৃদয় দিয়ে খেলেন বলেই হয়তো তিনি সবার চেয়ে আলাদা।