মাশরাফি-সাকিব বানাবেন সাবিনা-কৃষ্ণাদেরও?

মোস্তফা কামাল : কাছাকাছি সময়ের দুই ঘটনা। সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা চাম্পিয়ন। আন্তর্জাতিক কেরাত প্রতিযোগিতায় কিশোর হাফেজের তৃতীয় পজিশন। ঘটনা ভিন্ন। ভ্যানুও ভিন্ন। নেপাল আর সৌদি আরব। কোথায় ফুটবলার সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মণিকা! আর কোথায় হাফেজ তাকরিন! তারা কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নন? চেনেও না কেউ কাউকে। এরপরও কেন গুলিয়ে ফেলা? এক ঘটনার
সঙ্গে আরেক ঘটনার সামান্যতম মিল নেই। বিরোধও নেই। এরপরও এমন গোলমালের প্রবণতা আমাদের জাতীয় চরিত্রের অংশ হয়ে পড়ছে। চিন্তার এ নোংরামি আজ সর্বস্তরে। কেউ সুযোগ পেলেই প্রগতির চেতনায় মোল্লা-মৌলভীদের খোঁচান। আবার কেউ কোনো ছুঁতা না পেলেও নারীবিদ্বেষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ কোন ব্যারাম?
জাতে জাতে খেসির মতো এরা আসলে একই গোত্রের। একদল মত্ত প্রগতির নামে বিভ্রান্তিতে। আরেক দল ইসলামকে ভিত্তি করে আগুয়ান। সাফ ফুটবলে নারীদের জেতার পরে উল্লাসে মাতোয়ারা। এর কাউন্টার দিতে আরেক দল কিশোরের কেরাত প্রতিযোগিতায় জেতার গর্বে উন্মাদ। একজন খেলার সাফল্য উদযাপন করছেন বলে আরেকজনকে কোরআন তেলাওয়াতের সাফল্যও উদযাপন করতে হবে? আবার কিশোরের কোরআন তেলাওয়াতের সাফল্যের সমান্তরালে খেলার সাফল্যও উদযাপন করে ভারসাম্য আনতে হবে?
আমাদের প্রায় সব কিছুতেই এই বিতিকিচ্ছিরি দশা। এসব করে দেশের জন্যে সম্মান বয়ে আনা সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মণিকাদের দলটিকে মাশরাফি-সাকিবের কাতারে টেনে সর্বনাশ করবেন? আইকনকে বাটপারে রূপান্তরের অনেক কাণ্ডকীর্তি রয়েছে বাংলাদেশে। সাবিনা-কৃষ্ণা-মণিকাদের কৃতিত্ব কোনো রাজনীতির নয়। শুধু তাদেরই, তাদের প্রশিক্ষকদেরই। তাদের এটা-ওটা দিয়ে নিউজ আইটেম বানিয়ে রাক্ষস বানাবেন? আদিখ্যেতা দেখাতে তাদের মাথায় তোলা জরুরি?
পারলে সহযোগিতা দিন। নইলে শুধু মর্যাদা, নিরাপত্তা, স্বীকৃতি দিলেই হবে। নইলে খেলাটা হয়ে যাবে সেকেন্ড প্রায়োরিটি। টার্গেট চলে যাবে টাকা কামাইয়ের দিকে। দেশে সেই উদাহরণ কম? নমুনাটা কিন্তু ভালো ঠেকছে না। সাইড আইটেম করে ফেলা হচ্ছে তাদের। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বিমানবন্দরে নেমে বাফুফে ভবনে আসতে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে কৃষ্ণা-সানজিদাদের সঙ্গে। রাতে নিজেদের রুমে লাগেজ খুলতেই দেখেন নিজেদের ডলার ও টাকা গায়েব! এ নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চললেও অর্থের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। কিন্তু, হারানোর চেয়ে বেশি দিয়ে কী বার্তা দেয়া হলো?
শামসুন্নাহার সিনিয়রের ৪০০ ডলার হারালেও তিনি পেয়েছেন ১ লাখ টাকা। কৃষ্ণা রানী সরকার ৫০০ ডলার ও ৫০ হাজার টাকা হারিয়েছেন। তিনি পেয়েছেন দেড় লাখ টাকা। আর সানজিদার ৪০০ ডলার হারালেও তাকে লাখ টাকা মূল্যের আইফোন দেওয়া হয়েছে। বাফুফের নারী উইং কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানান, দায়িত্ববোধ, কর্তব্য ও ভালোবাসা থেকে ওদের আমি অর্থ দিয়েছি। এসব কথা ও ঘটনার নিউজ ভ্যালু আছে সত্য। কিন্তু, মর্যাদা কতোটা? প্রগতিতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র ও নারীতন্ত্র ইত্যাদিকে নাচাচ্ছে কারা? সব তন্ত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং একের বিরুদ্ধে অপরকে লেলিয়ে দিয়ে কে এগোচ্ছে নিরাপদে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।