নেত্রকোনা : প্রসবকালে ভীষণ বেদনায় চোখে জল চলে আসে প্রতিটি মায়ের। কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যখন নবজাতককে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়, তখন অশ্রু ছাপিয়ে হাসি ফুটে ওঠে মায়ের মুখে। বেদনার সাগরে আনন্দের থৈ-থৈ স্রোত জাগে। একেই বলে মাতৃত্বের স্বাদ। কিন্তু সেই সন্তান বড় হয়ে মায়ের ১০ মাস ১০ দিনের জঠরজ্বালার কথা ভুলে যাবে; জন্মদাত্রীকে বন্দী করে রাখবে গোয়ালঘরে; চালাবে শারীরিক নির্যাতন; এমনকি বিবস্ত্র করে রাখবে এমনটি পৃথিবীর কোনও মা-ই বোধ করি কল্পনাও করতে পারেন না। কিন্তু অকল্পনীয়, নিন্দনীয় সেই ঘটনাই ঘটেছে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে।
জমি না লিখে দেওয়ায় বৃদ্ধা মাকে গোয়ালঘরে বন্দী করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সবুজ মিয়া নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, গর্ভধারিণী মাকে বিবস্ত্রও করে রাখা হয়েছে। এ প্রতিনিধির কাছে এমন কিছু স্থিরচিত্রও পাঠানো হয়েছে অসহায় সেই বৃদ্ধার। তার নাম ফসর বানু। ৮৫ বছর বয়সী ওই নারীর দেহের স্থানে স্থানে নির্যাতনের চিহ্নও রয়েছে। পরের উপকার যিনি করেন না, তার সম্পর্কে কবি বলেছেন, ‘কে বলে মানুষ তারে, পশু সেই জন।’ এ কথাটিই একটু অন্যভাবে বলা যায় সবুজ মিয়ার বেলায়ও কে বলে সন্তান তারে, পশু সেই জন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুর্লভপুর গ্রামের আমজাদ আলী মৃত্যুর আগে তার স্ত্রীকে কিছু জমি লিখে দেন। সেই জমি ভুয়া দলিল করে দখলের চেষ্টা করেন ছেলে সবুজ। এ নিয়ে আদালতে মামলাও রয়েছে। মায়ের নামে থাকা জমি জোর করে লিখিয়ে নিতে চান সবুজ।
ফসর বানুর মেয়ে মিনা আক্তার বলেন, সবুজ মায়ের জমিটুকু লিখে নিতে চান। মা লিখে দিতে না চাইলে সবুজ ও তার স্ত্রী সাহেদা আক্তার মিলে মাকে গোয়ালঘরে বন্দী করে দফায় দফায় নির্যাতন করেন। সর্বশেষ গত ২৭ মে তাকে বেত দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। প্রতিবেশীরা বৃদ্ধাকে রক্ষা করতে এলে তাদেরও খুন-জখমের হুমকি দেন সবুজ।
প্রতিবেশী জরিনা খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে মাকে প্রায়ই মারপিট করেন ছেলে। রাতে গোয়ালঘরে তালাবদ্ধ করে সকালে তালা খুলে দেন।
বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন, সবুজ এলাকার কোনো মানুষকেই তোয়াক্কা করছেন না। ছেলের হাতে ওই বৃদ্ধার নির্যাতনের কথা এলাকার সবাই জানে।
ফসর বানুর বড় ছেলে আবদুল হান্নান বলেন, মাকে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আমার স্ত্রী সাজেদা খাতুনকেও মারপিট করে হাত ভেঙে দেয় সবুজ।
ফসর বানুর কাছে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জমির জন্য ওরা আমারে মারধর পর্যন্ত করে এবং আটকে রাখে। আমি এর বিচার চাই।’
এ দিকে সবুজ মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সত্য নয়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমরা খতিয়ে দেখছি।