মিত্রবাহিনীর সম্মানে আশুগঞ্জে নির্মিত হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : একাত্তর সালে বাঙালির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যরাও মিত্র বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন সশস্ত্র প্রতিরোধ। যার ধারাবাহিকতায় ৯ মাসে স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্য শহীদ হন। মিত্র বাহিনীর সেই শহীদদের সম্মানে তাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এক দশমিক ২০ একর জায়গাজুড়ে এই স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের শূন্য দশমিক ৯ হাজার ৬৫০ একর, ব্যক্তিমালিকানাধীন শূন্য দশমিক দুই হাজার ৫০ একর এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসনের দশমিক শূন্য তিন একর জমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দের পাশাপাশি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসককে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীরও অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনীর লড়াইয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনারাও শহীদ হয়েছিলেন। সরকার সেই মিত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এটি নির্মিত হবে। চলতি অর্থবছরে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি এমনভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেখানে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। বর্তমানে স্থাপত্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা নকশা প্রণয়নের কাজ করছেন। প্রকল্প এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বিভিন্ন স্থাপনাও তৈরি করা হবে। তবে এর নকশা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ভারত সরকার সেনাসদস্য দিয়ে লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রায় দুই কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়ে গড়েছিল অনন্য নজির। এর স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর সর্বপ্রথম বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর প্রথম পর্যায়ে ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার। দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ৮৩ জন বিদেশিকে ২০১২ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা এবং একই বছরের অক্টোবরে ৬১ জনকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় বাহিনীর সাত পরিবারের সদস্যদের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন। পর্যায়ক্রমে মিত্র বাহিনীর শহীদ সব সদস্যকেই এই সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।