মিয়ানমারে ফিরতে ৭ শর্ত রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজার : নাগরিকত্ব ফেরত, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ সাতটি শর্ত পূরণ না হলে ফিরে যাবে না বলে জানিয়েছে প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তারা মনে করছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার তাদের রাখাইন রাজ্যে নিয়ে আগের কায়দায় হত্যা করবে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দেশ রূপান্তরকে এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তাদের একজন সৌদল আমিন। তিনি বলেন, ‘জান্তা-সুচি সরকার আমাদের দেশে ফেরত নিয়ে আগের কায়দাই মেরে ফেলবে। ওই দেশে আমাদের কিছুই নেই। তার পরও কে না চায় নিজ দেশে থাকতে। ধন-সম্পদ সবই ছিল আমাদের। ওরা সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। এখন আমরা বাংলাদেশেই অনেক ভালো আছি।’

আনোয়ারা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, বার্মিজ এক হাজার মুদ্রা বাংলাদেশে ৭৫ টাকা। সারা দিন পাহাড়ে লাকড়ি সংগ্রহের পর মুংডুর পরীরঢাল হাটে তা বিক্রি করে তিন হাজার টাকা আয় করতেন। মিয়ানমারে চাল, মাছ, ডালের দাম হাতের নাগালে।

তাই স্বল্প আয়ের মধ্যে দিয়েই সংসার জীবনের দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। তার স্বামী এখনো নিখোঁজ। প্রাণ বাঁচাতে তিনি এ দেশে এসেছেন।

ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা জানায়, মিয়ানমার সরকার হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে দেশ রোহিঙ্গাশূন্য করতেই। এখন প্রাণ হাতে নিয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার সুযোগ হলে তারা অর্থনৈতিকভাবে আগের মতো উঠে দাঁড়াতে পারবে না। অন্য দিকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে অনেক আগেই। নতুন করে আবার নিজ বাসভূমিতে শরণার্থী করে নিলে যে পরিমাণ জমিজমা ছিল, তাতে অধিকার ফিরে পাওয়ার বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই সাত শর্তের কথা বলে। এগুলো হলোÑ মিয়ানমারে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া, সবাইকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অন্য নাগরিকদের মতো সুবিধা দেওয়া, স্থানীয় বৌদ্ধ ও সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, গৃহপালিত পশু ফেরত দেওয়া, সবুজ রঙের পরিচয়পত্র ফেরত ও নতুন করে কার্ড তৈরি করে দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের ওপর কোনো অত্যাচার না করা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু করে সেনাসদস্যরা। তারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, বিভিন্ন বয়সীদের ওপর নির্যাতন করে। এতে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে দিন কাটাচ্ছে।