বিশ্বচরাচর ডেস্ক : রোহিঙ্গা সঙ্কটের জেরে মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য অবরোধ আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ক্ষেত্রে ইইউতে মিয়ানমারের শুল্ক-মুক্ত সুবিধা কেড়ে নেওয়া হতে পারে। তিনজন ইউরোপিয়ান কর্মকর্তার বরাতে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিবেচনাধীন রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে মিয়ানমারের বৃহৎ পোশাক শিল্প। ফলে সেখানে হাজার হাজার কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। অবশ্য এখনই এই অবরোধ কার্যকর হবে না। বরং, অবরোধের বিষয়টিকে ব্যবহার করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে চাপ দিতে চায় ইইউ।
প্রথমত, ছয় মাসের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সময়ের মধ্যে মিয়ানমার যদি নির্ধারিত মানবিক ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে, তবেই অবরোধের সিদ্ধান্ত বাতিল হবে।
তা সত্ত্বেও লঘু হলেও এই সিদ্ধান্ত হবে ইইউ জোটের নীতিমালায় বড় পরিবর্তন। এই অবরোধের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আগস্টের একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়েছে ইইউ। এই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘গণহত্যা চালানোর প্রয়াসে’ রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে সামরিক বাহিনী। এরপর যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের দু’টি সামরিক ইউনিটের ওপর অবরোধ আরোপ করে। এরপরই ইইউ নিজের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার তাড়না অনুভব করে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এখন পর্যন্ত ইইউ কেবল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হাইংয়ের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। যদিও জাতিসংঘ বলছে, তিনি সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করা উচিত।
ইইউ কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইইউর বাজারে মিয়ানমারের তৈরি পোশাক খাতের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার স্থগিত করার আনুষ্ঠানিক হুমকি আসলে এই শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুতই বাধাপ্রাপ্ত হবে। অ্যাডিডাস, সিঅ্যান্ডঅ্যা, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, নেক্সট ও প্রিমার্কের মতো বৃহৎ ইউরোপিয় পোশাক ব্রান্ডের কারখানা রয়েছে মিয়ানমারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের পণ্যের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারক। ২০১৭ ইইউভুক্ত দেশগুলো মিয়ানমার থেকে ১৫৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই পোশাক সম্পর্কিত পণ্য। সেই হিসাবে ইইউ হলো মিয়ানমারের ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্যিক আংশীদার ও দেশটির সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ ছাড়া মিয়ানমারের তেল ও গ্যাসের পর পোশাক শিল্প থেকেই রপ্তানির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আয় হয়। প্রতি বছর ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে দেশটি। এই খাতে ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ কাজ করে।