বিশ্বচরাচর ডেস্ক : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, তার দেশের সার্বভৌমত্বে নাক গলানোর কোনো অধিকার জাতিসংঘের নেই। এমনকি মিয়ানমারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোনো দেশ, সংস্থা বা গোষ্ঠীর নেই।
জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের সুপারিশ করার এক সপ্তাহের মাথায় সংস্থাটির বিরুদ্ধে এমন তোপ দাগলেন জেনারেল মিন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নেপিদোতে সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে কড়া ভাষায় এ কথা বলেন তিনি। খবর এএফপি ও বিবিসির।
গত সপ্তাহে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রাথমিক তদন্ত শুরুর পর এই প্রথম জেনারেল মিন প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা মায়াবতির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। জেনারেল মিন বলেন, বিশ্বের একেক দেশের গণতন্ত্র চর্চার ধরন একেক রকম। একটি দেশ সেই ধরনের গণতন্ত্রের চর্চা করে, যা তার জন্য উপযুক্ত। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারও স্বাধীন একটি পররাষ্ট্রনীতির চর্চা করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ একটি অবস্থান বজায় রেখে চলে।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার যেসব চুক্তিতে সই করেছে, সেগুলো প্রতিপালন করে। প্রতিটি দেশ যেহেতু নিজের মতো করে আলাদা মানদ- ও আদর্শ নির্ধারণ করে, সেহেতু তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার বা তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কোনো দেশ, সংস্থা বা গোষ্ঠীর নেই।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন। সেখানে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে আইসিসি বা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর পরই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে আইসিসি। মিয়ানমার সেনাপ্রধান বলেন, জনগণের ইচ্ছায় মিয়ানমার বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে রয়েছে। সে জন্য রাজনৈতিক, জাতিগত ও প্রশাসনিক পর্যায়ে সমন্বিত আলোচনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার এ চেষ্টা তাতমাদো (সেনাবাহিনী) অব্যাহত রাখবে। রাখাইনের বুথিডং ও মংডু এলাকায় যা ঘটেছে, সে জন্য অগ্রহণযোগ্য কোনো দাবি তাতমাদো মেনে নিতে পারে না। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী সব কাজ আমরা এগিয়ে নেবো।’
রাখাইনে কয়েকশ’ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালের ওই আইনের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করে বোঝাতে চায় যে, ওই নামে কোনো জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারে নেই। এর বদলে রোহিঙ্গাদের তারা বর্ণনা করে ‘বাঙালি’ বা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে। জেনারেল মিন বলেন, ‘বাঙালিসহ’ সবার ক্ষেত্রেই ওই আইন প্রযোজ্য। মিয়ানমারে থাকতে হলে ওই আইন মেনেই চলতে হবে।