মুহাম্মদ (সা:) শান্তি ও রহমতের দূত : মুনা কনভেনশনে বক্তারা

ঠিকানা রিপোর্ট: চলমান সংকটপূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানবতার নবী সর্বকালের সেরা মানব হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আদর্শ অনুসরণের আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে গত ৭ ও ৮ জুলাই ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত পেনসিলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টারে সম্পন্ন হলো মুনা ন্যাশনাল কনভেনশন ২০১৮। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে শান্তির ধর্ম ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়াই ছিল কনভেনশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মুহাম্মদ (সা:) শান্তি ও রহমতের দূত’। কনভেনশনে যোগদানকারী দেশী-বিদেশী ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে ফুটে উঠে মুহাম্মদ (সা:)-এর সার্বজনীনতা। তারা বলেন, মুহাম্মদ (সা:) শুধুমাত্র মুসলিম জাতির জন্য বিশ্বে আসেননি। তিনি এসেছিলেন সমগ্র মানবজাতির নেতা হিসেবে। একজন সর্বজনীন আদর্শ নেতা হিসেবে। আর তাই মুহাম্মদ (সা:) এর আদর্শ সবার কাছে পৌঁছে দেয়া আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। বক্তরা বলেন, ইসলামকে মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ইসলামের শান্তি বার্তা সবার মাঝে পৌঁছৈ দিতে হবে। তবে কনভেনশনে মুসলিম নতুন প্রজন্মদের জন্য দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা থাকলেও বাংলাদেশ বিষয়ে ছিলো না কোন সেমিনার সিম্পোজিয়াম।
দু’দিনব্যাপী আয়োজিত কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে ১০ হাজারের মতো নর-নারী যোগ দেন। এদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। ফলে ব্যতিক্রমী এই কনভেনশন ঘিরে ফিলাডেলফিয়া সিটির কনভেনশন সেন্টার ও তার আশপাশের এলাকা বাংলাদেশী কমিউনিটির পাশাপাশি এক খন্ড মুসলিম কমিউনিটিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে এবারের কনভেনশন আয়োজক কমিটির চমৎকার আয়োজন, ব্যবস্থাপনা, সুশৃংখল পরিবেশসহ নানা আয়োজন অংশগ্রহণকারীদের মুগ্ধ করে।
মুনা কনভেনশন ঘিরে মূলত: ৬ জুলাই শুক্রবার থেকেই জমে উঠতে থাকে পেনসেলভেনিয়া কনভেনশন সেন্টার সহ আশপাশের এলাকা আর হোটেল। নিউইয়র্ক থেকে বাস ছাড়াও প্রাইভেট কার যোগে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহনকারী সপরিবারে এবারের কনভেনশনে অংশ নেন। এছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলিম নরনারী প্রাইভেট কারযোগে পরিবার-পরিজন নিয়ে অংশ নেন।


মুনা কনভেনশনে অংশগ্রহণকারীরা শুক্রবার দুপুর থেকেই ফিলাডেলফিয়ায় সমবেত হতে থাকেন এবং আগে থেকে বুকিং দেয়া স্থানীয় ম্যারিয়ট, শেরাটন প্রভৃতি হোটেলে রুম নেয়ার পর কনভেনশন সেন্টারে এসে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেন বা পূর্বে রেজিষ্ট্রেশন করা তথ্যাদি কনফার্ম করেন। এদিন সন্ধ্যায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়। এর আগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। ফলে পেনসেলভেনিয়া কনভেনশন বিশাল হল রুমসহ পুরো ভবন জনার্কীণ হয়ে উঠে। সেই সাথে সাজানো-গোছানো সেন্টারে তথ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে অংশগ্রহনকারীদের সুবিধার্থে সকল কেন্দ্র এবং নানা রকম স্টোরের দোকান বসানা হয়।
গত ৭ জুলাই শনিবার সকাল ১০টায় মূল মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম। ‘প্রফেট মুহাম্মদ (সা:) : দ্যা বেস্ট রোল মডেল’ শীর্ষক আলোচনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কনভেশন অনুষ্ঠানের প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ নজরুল ইসলাম। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবারের কনভেনশন কমিটির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ নূরুজ্জামান। দলগত সঙ্গীত পরিবেশন করেন উম্মাহ শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা। এই পর্বে আলোচক ছিলেন মুনার ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমাম দেলোয়ার হোসেন, ইমাম শাদিদ মোহাম্মদ, ড. মাজিন মুক্তার, ইমাম আব্দুল্লাহ জাবের ও ড. মোহাম্ম, রুহুল আমীন। মডারেটর ছিলেন হারুন অর রশীদ। এরপর ‘মানবতার পথ প্রদর্শক : মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সা:)’ শীর্ষক আলোচনা। এই আলোচনায় ‘আল-কুরআন : হৃদয় উন্মোচনের চাবিকাঠি’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ইমাম মোহাম্মদ জাকারিয়া, ‘সৃষ্টির সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ব্যারিষ্টার হামিদ এইচ. আজাদ, ‘কোরআনের আলোকে দাওয়াতি দ্বীনের পদ্ধতি’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন এবং ‘বহু মাত্রিক সমাজে মুসলমাদের করনীয়’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ মুহাম্মদ হাসান। এই পর্বে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল্লাহ আল আরীফ।
এরপর ‘প্রফেটিক ইন্টারেকশন : ওভারকামিং দ্য এডভারসিটি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ড. মির্জা গালিব, উসামা জামাল, নাইম বেগ ও শেখ ইয়াসির বীরজাস। এই পর্বে মডারেটর ছিলেন আনিসুর রহমান। পরবর্তীতে ‘ইবাদাহ : আন্ড্রাস্টুড এন্ড প্র্যাক্টিসিড বাই আর্লি মুসলিমস’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম ফায়েক উদ্দীন, জাভেদ সিদ্দিকী, ইমাম হাসান আকবর ও ইমাম আসিফ হাইরামী। মডারেটর ছিলেন আহমেদ আবু ওবায়েদ। এরপর অনুষ্ঠিত ‘প্রফেট মুহাম্মদ (সা:) দ্যা ম্যাসেজ অব পিস এন্ড মার্সি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আজহার আজিজ, ইমাম দেলোয়ার হোসেন, ড. আলতাফ হোসাইন, ইমাম সুহাব ওয়েব ও ইমাম সিরাজ ওহাজ। মডারেটর ছিলেন আবু সামীহা সিরাজুল ইসলাম।


এছাড়াও সন্ধ্যায় ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে উম্মাহ শিল্পী গোষ্ঠী ছাড়াও ইসলামিক গানের জনপ্রিয় শিল্পী ইকবালসহ অতুল ওসমানী ও মুনার শিশু শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবশেন করেন। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন যুক্তরাজ্যের লাব্বায়েক নাসিদ গ্রুপের শিল্পী এহসান তাহমিদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন ড. আতাউল ওসমানী।
শনিবার মূল পর্বের আলোচনা ছাড়াও ইয়্যুথ কনফারেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য কনফারেন্স রুমে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ‘দ্যা এসেন্স অব ইসলাম : আন্ডাস্টান্ডিং প্রফেটিক ল্যাগাসী’ শীর্ষক আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুনা’র ইয়্যুথ গ্রুপের আহমেদ খালিদ এবং ইয়্যুথ সিস্টার্সদের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাসুমা সুলতানা মিলি। আলোচনায় অংশ নেন ইমাম সিরাজ ওহাজ, শেখ ওয়াসী বিরজাস ও ড. সুজি ইসমাইল। মডারেটর ছিলেন মশিউর রহমান ও তামজিদুল ইসলাম। ‘ব্যাটলিং দ্যা উইশপার্স ফ্রম উইদিন (ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স) শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন শেখ মাজেদ মোহাম্মদ, শেখ ইয়াসির বিরজাস ও শেখ হাসান আকবর। মডারেটর ছিলেন পয়সাল আজাদ ও শহীদ আহমেদ। ‘ক্রাইং দ্যা লেগাসী অব ইসলাম’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন হাফেজ জাকির আহমেদ, ড. আলতাফ হোসাইন ও ড. মিজান মুক্তার। মডারেটর ছিলেন মশিউর রহমান ও শহীদ আহমেদ। ‘পিউড়িফিকশন অব হার্ট : ইলেভেটিং দ্যা ফেইথ’ শীর্ষক আলোনাং অংশ নেন শেখ মাজেদ মাহমুদ, ইমাম আসিফ হাইরামী ও ইয়াসমীন মুজাহেদ। মডারেটর ছিলেন শামীমা সিরাজুল ইসলাম ও মালিহা গুল। শুধুমাত্র নারীদের জন্য নির্ধারিত ‘ইন পারস্যুইট অব প্রটেক্টটিং দ্যা ডিগনিটি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন দানিয়া সুয়েব, ড. সুজু ইসলাম ও ইয়াসমীন মুজাহেদ। মডারেটর ছিলেন রোকেয়া বেগম রিনা। ‘প্রফেট মুহাম্মদ (সা:) : দ্যা লিভিং কোরআন’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম আসিফ হাইরামী, আবু সামিহা সিরাজুল ইসলাম, দানিয়া সুয়েব ও ড. জাহিদ বুখারী। ‘সার্ভিস অব হিউম্যানিটি : দ্যা প্রফেটিক ট্রেডিশন’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন মাকসুদ আহমেদ, মুহাম্মদ হাসান, ড. শরিফুল ইসলাম ও এস এম রাশেদুজ্জামান। ‘ইন পারস্যুইট অব ফ্রিডম : জাস্টিস এন্ড ডিগনিটি’ শীর্ষক আলোচনাং অংশ নেন ড. জাহিদ বুখারী, নিহাদ আওয়াদ, খলিল মিক ও উসামা জামিল। মডারেটর ছিলেন ড. নকিবুর রহমান।


৮ জুলাই রোববার মূল হলে অনুষ্ঠিত ‘এম্পাওয়ারিং ফ্যামিলিস থ্রো ডিভাইন গাইডেন্স’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম রফিক আহসেদ, মুফতি ইসমাইল, শেখ মুহাম্মদ হাসান, ড. মোহাম্মদ ইউস্যুফ আলী ও ড. সুজি ইসমাইল। মডারেটর ছিলেন মোহাম্মদ জয়নুল ইসলাম। ‘প্রফেটিক মেথডস, অব ওভারকামিং দ্যা চ্যালেঞ্জস’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম হাসান আকবর, ড. মির্জা গালিব ও ড. আলতাফ হোসেন। মডারেটর ছিলেন ফাতেমা সিদ্দিকা স্বর্নালী ও কাওলা রহমান। ‘ফেইথ এন্ড অ্যাকশন : দ্যা রোড টু সাকসেস’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন হাফেজ জাকের আহমেদ, ড. নকিবুর রহমান, হামিদ হোসেন আজাদ, আবু সামিহা সিরাজুল ইসলাম ও শেখ মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন। মডারেটর ছিলেন নাসির উদ্দিন। ‘টুডে’স ইয়্যুথ : টুমোরো’স লীডার্স’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম আব্দুল্লাহ জাবের, ইমাম সুহিব ওয়েব, ইমাম সিরাজ ওহাজ ও ড. সায়েদুর রহমান চৌধুরী। মডারেটর ছিলেন শহীদ আহমেদ ও তামজিদুর ইসলাম। ‘ইনক্রেজিং লাভ এন্ড গেটিং ক্লোজার টু আল্লাহ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ইমাম আবু ফয়জুল্লাহ, ড. আলতাফ হোসেন, ইমাম সিরাজ ওহাজ। এই পর্বে মাডারেটর ছিলেন আরমান চৌধুরী। কনভেনশনের শেষ দিনের শেষ আলাচনার বিষয় ছিলো ‘টু ডে ইয্যুথ : টুমোরো’স লীডার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন এটর্নী আহমেদ মোস্তফা, এটর্নী এ আজিজ ও এটর্নী সুমাইয়া খালিক। মডারেটর ছিলেন এটর্নী মোহাম্মদ মোস্তফা।
মুনা কনভেনশন উপলক্ষ্যে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। স্মরণিকাটি সম্পাদনা করেন হারুন অর রশীদ। প্রকাশনায় ছিলেন নিয়াজ মাখদুম ও মমিন মজুমদার। মিডিয়ার জন্য বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন মাহবুবুর রহমান ও রশীদ আহমদ।