এম এস হক : গত কয়েক সপ্তাহের মতো চলতি সপ্তাহেও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা, নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত এবং হাসপাতালগুলোতে নতুন করোনা রোগীর চাপ বৃদ্ধির শ্বাসরুদ্ধকর
বাস্তবতাকে শিরোধার্য করে বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমেরিকানরা ইংরেজি ২০২৩ সালে পদার্পণ করেছে। বিদায়ী বছরের শেষ দিনের তুলনায় নববর্ষের প্রতিদিনই গড়ে কমপক্ষে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর ছয়-সাত হাজার, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর এক থেকে দেড় হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৭ থেকে ১০ জন বাড়ছে। ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৬৪ হাজার হারে পুরো সপ্তাহে সর্বমোট সাড়ে চার লাখ আমেরিকান নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর হাসপাতালে প্রতিদিন সাড়ে ৪৫ হাজার হারে পুরো সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখ ১৯ হাজার করোনা রোগী পরিষেবা গ্রহণ করেছেন এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে পাঁচ হাজার হারে পুরো সপ্তাহে সর্বমোট ৩৯ হাজার করোনা রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আর প্রতি চার ঘণ্টায় ৩২৫ হারে প্রায় ২ হাজার ৩০০ আমেরিকান করোনা-সংশ্লিষ্ট জটিলতায় ইহলোক ত্যাগ করেছেন। এদিকে নিউইয়র্কে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ১০০ জন হারে পুরো সপ্তাহে ৪৯ হাজার ৭০০ জন নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং দৈনিক ৪ হাজার ৭৫০ জন হারে পুরো সপ্তাহে ৩৩ সহস্রাধিক নিউইয়র্কবাসী হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। নিউইয়র্কে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন হারে পুরো সপ্তাহে ২২৪ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭৯.৫ শতাংশ নিউইয়র্কবাসী পুরোপুরি ভ্যাক্সিনেটেড বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ৩৭ সহস্রাধিক করোনা রোগী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে ইউনাইটেড হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস জানিয়েছে।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা গেছেন ১১ লাখ ১৬ হাজার ২৫৭ জন। বস্টন চিলড্রেন হসপিটালের মহামারি বিশেষজ্ঞ ও চিফ ইনোভেশন অফিসার এবং এবিসি নিউজ কন্ট্রিবিউটর ড. জন ব্রাউনস্টিন এবং অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। সিডিসির অপর এক পরিসংখ্যান অনুসারে করোনায় সর্বমোট ১৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার আমেরিকান আক্রান্ত হয়েছেন।
মূলত এবারের অবকাশ মৌসুমের প্রারম্ভিক পর্ব থেকে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ভাইরাসে আক্রান্ত আমেরিকানদের দুর্ভোগ অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সিডিসির বর্ণনা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ শতাংশ কাউন্টিই চলতি সপ্তাহে মিডিয়াম থেকে হাই কোভিড-১৯ কমিউনিটি লেভেলে রয়েছে। সিডিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
অন্যদিকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরো আমেরিকায় ৬৭ কোটি ৭৯ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। প্রায় ২৩ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান বা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০.৮৫ শতাংশ প্রাইমারি সিরিজ এবং ৮৩.৮ শতাংশ বা ২৯ কোটি ১০ লাখ আমেরিকানকে কমপক্ষে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ প্রদান করা হয়েছে। সিডিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সর্বমোট প্রথম বুস্টার দেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ডোজ। ৫ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার ৫১.৩ শতাংশকে প্রথম বুস্টার দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ১১ লাখ ডোজ। ৫০ থেকে ঊর্ধ্ব বয়সী মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৮.৬ শতাংশকে প্রায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। আপডেটেড বুস্টার দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ ১৩ হাজার জনকে, যা মোট জনসংখ্যার ১৪.৪ শতাংশ।