ঠিকানা রিপোর্ট : এক সময় শুধু ঢাকা শহরে ঈদের আগের রাতে মেহেদী সন্ধ্যা খুবই আলোচিত ছিলো। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে চাঁদ রাত পালন করা হতো। চাঁদ রাত মানেই শেষ কেনাকাটা এবং হাতে মেহেদী লাগানো। গ্রামাঞ্চলে মেহেদীর তেমন চল না থাকলেও ঈদের চাঁদ নিয়ে সবাই উল্লসিত থাকতো কিন্তু ঢাকা শহর চাঁদ রাত মেহেদী রাতে পরিণত হতো। একই অবস্থা গত কয়ক বছর ধরে নিউইয়র্কেও লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা এবং ব্রঙ্কসে চাঁদ রাত ঢাকার চাঁদ রাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। নিউইয়র্কে চাঁদ রাত পালন শুরু হয় জ্যাকসন হাইটস থেকে। প্রথম বছর কোনভাবে পালন হলেও দ্বিতীয় বছর থেকে জ্যাকসন হাইটসে চাঁদ রাতে মানুষের ঢল নামে। জ্যাকসন হাইটসে ড্রাইভার সিটি প্লাজা, ৭৩ স্ট্রিট, ৭৪ স্ট্রিট এবং ৩৭ এভিনিউ মানুষের মেলায় পরিণত হয়। নতুন প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীরা চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে যায় হাতে মেহেদী লাগাতে। একহাতে মেহেদী ৫ ডলার, দুই হাতে ১০ ডলার। অনেক সময় ক্রেতাদের ভিড়ানোর জন্য কেউ কেউ দুই হাতে মেহেদী ৫ ডলারেও লাগিয়েছেন। জ্যাকসন হাইটসে নিউইয়র্কসহ আশেপাশের স্টেটের লোকজনও চাঁদ রাতে আনন্দে শামিল হতে আসে। জোরে জোরে বাজানো হয় ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এ ছাড়াও অন্যান্য গানও বাজানো হয়। বিশেষ কওে নতুন প্রজন্মের কিশোর- কিশোরিদের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগও যেন তাজ্জব। এবারের চাঁদ রাতে জাকসন হাইটসে মানুষের ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি ছাড়া যেন হাঁটাই যাচ্ছিলো না। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত জ্যাকসন হাইটস ঈদ আনন্দে রঙ্গিন ছিলো।
অন্যদিকে বাংলাদেশী অধ্যুষিত আরেকটি এলাকা ছিলো জ্যামাইকা। জ্যামাইকা যেন জ্যাকসন হাইটসকে ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। এখানেও মানুষের ঢল নামে। ১৬৯ স্ট্রিটে অনেকেই মেহেদীর চেয়ার টেবিল নিয়ে বসেছিলেন। জ্যাকসন হাইটসের মতই এখানে হাতে মেহেদী লাগানো হয় ৫/১০ ডালারের বিনিময়ে।
খলিল বিরিয়ানী হাউজের সামনে
নিউইয়র্কে বাঙালী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকার ১৪৪৫ ওলমাস্টেড এভিনিউর খলিল বিরিয়ানী হাউজের সামনে গত ১৫ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে জমজমাট চাঁদ রাত মেহেদী উৎসব। এ মেহেদী উৎসব আরো জমজমাট করে তুলে খলিল বিরিয়ানী হাউজের ঐতিহ্যবাহী খাবারের বিপুল সমাহার।
খলিল বিরিয়ানী হাউজের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পী মোঃ খলিলুর রহমানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং তার মেয়ে টেনথ গ্রেডে পড়–য়া সাকিয়া আফ্রিন শ্রাবণীর পরিচালনায় এ মেহেদী উৎসব বিকেল থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। বিপুল সংখ্যক তরুণীসহ নানা বয়সী মহিলারা যোগ দেন এ মেহেদী হাত রাঙানোর উৎসবে। মেহেদী উৎসবকে ভিন্নআমেজ দেয় খলিল বিরিয়ানী হাউজের মজাদার সব খাবার-দাবার।
তানিয়া বিউটি সেলুনের সামনে
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে স্টার্লিং-বাংলাবাজার এভিনিউর তানিয়া বিউটি সেলুন ও এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুলের দেয়ালে অঙ্কিত বাংলাদেশের শহীদ মিনার ও জাতীয় স্মুতিসৌধের বিশাল প্রতিকৃতির সামনে গত ১৫ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে চাঁদ রাত মেহেদী মেলা। তানিয়া বিউটি সেলুন এ মেহেদী উৎসবের আয়োজন করে। জমজমাট এ মেলায় মেহেদী উৎসবের পাশাপশি কাপড়, গয়নাগাটি এবং খাবারের স্টলও বসে। এশিয়ান মাল্টি সার্ভিস ইনক’র প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও সাইদুর রহমান লিংকনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং তানিয়া বিউটি সেলুনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কন্ঠশিল্পী শারমিন রহমান তানিয়ার পরিচালনায় এ উৎসব বিকেল থেকে শুরু হয়ে চলে মধ্য রাত পর্যন্ত।
স্টার্লিং-বাংলাবাজার এভিনিউ এলাকায়
ব্রঙ্কসে স্টার্লিং-বাংলাবাজার এভিনিউ এলাকায় আল আকসা রেস্টুরেন্টের সামনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে চাঁদ রাত মেহেদী উৎসব। ঈদ উপলক্ষে আগের দিন ১৪ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জমজমাট এ মেহেদী উৎসবের আয়োজন করেন নারী নেত্রী মাকসুদা আহমদ। তিনি বেশ ক’বছর ধরেই চাঁদ রাতে মেহেদী মেলা করে আসছেন এ এলাকায়। মাকসুদা আহমদ জানান, বিনা ফি’তে চাঁদ রাতে মেহেদী উৎসবের একমাত্র সেবাটি তিনিই দিয়ে যাচ্ছেন নিউইয়র্কে। মেহেদী রাঙানোর বর্ণিল এ আয়োজনে প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম সহ মূলধারায় বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচারকে তুলে ধরতেই তার এ আয়োজন। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী মেহেদী উৎসবে মেতে ওঠেন।
আল আকসা রেস্টুরেন্টের জেনারেল ম্যানেজার আলী হায়দার জানান, মেলা উপলক্ষে তাদের বেচা-বিক্রি হয়েছে অনেক ভাল। তাদের মজাদার সব খাবারের স্বাদ নেন মেলায় আসা লোকজন। মেলায় আসা সবাইকে ঈদ শুভেচ্ছা জানান আয়োজক মাকসুদা আহমদ।
লস এঞ্জেলেসে বর্ণাঢ্য আয়োজনে চাঁদ রাত
লস এঞ্জেলেস প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে লস এঞ্জেলেসে দ্বিতীয় বারের মতো চাঁদ রাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত ভার্জিল মিডল স্কুলে গত ১৪ জুন এই চাঁদ রাত অনুষ্ঠিত হয়। অযানের পর সকলে একত্রে ইফতার করে। মাঠেই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শিশু / কিশোররা ঈদের কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। শিশু/কিশোরদের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাজী মনোয়ার হোসেন। স্থানীয় স্বরাজ ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করে। এছাড়াও প্রবাসী শিল্পী শহিদ আলম, উপমা সাহা মজুমদার, সোনিয়া বডুয়া খুকু আরো অনেকে গান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন। লিটল বাংলাদেশ কমিটির পক্ষ থেকে আফজাল হোসেনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি লস এঞ্জেলেস প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান। ঈদের স্মৃতিচারণ করেন আফজাল হোসেন। এ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রকার পণ্যের স্টল বসে এবং প্রচুর বেচাকেনা হয়। চাঁদ রাতের অনুষ্ঠান আয়োজনে যারা বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মমিনুল হক বাচ্চু, শফিউল আলম ফেন্ড বাবু, মোহাম্মদ শামীম হোসেন, শফি আহমেদ, মাসুদ হাসান, আবুল ইব্রাহীম প্রমুখ। লিটল বাংলাদেশ কমিটির পক্ষ থেকে মমিনুল হক বাচ্চু আগত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন লস এঞ্জেলেসের জনপ্রিয় উপস্থাপক মিঠুন চৌধুরী ও জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সাাজিয়া হক মিমি। অনুষ্ঠানে প্রচুর লোক সমাগম হয়।