খোরশেদ চৌধুরী
দুটি মোরগের রক্তক্ষয়ী কনটেস্টকে বলা হয় কক ফাইট যা বাংলা ভাষায় মোরগের লড়াই নামে পরিচিত। মোরগ-মুরগি দু ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন বন মোরগ (এ প্রজাতির মোরগ বন জঙ্গলে থাকে এবং ওয়াইল্ড লাইফ উপভোগ করে), রেইজিং ফাউল বা গৃহপালিত মোরগ। মোরগ লড়াই ইতিহাসে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে থেকেই প্রচলিত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ভারত, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, তুর্কি, ইউরোপ, আমেরিকা, কিউবা, মেক্সিকো, পেরু ইত্যাদিসহ পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় মোরগ লড়াইয়ের প্রচলন আছে।
ভারত আক্রমণকালে মহাবীর আলেকজান্ডার সদলবলে মধ্য এশিয়া হয়ে রোম পর্যন্ত গমন করেছিলেন। খ্রিস্টের জন্মের আগেই পশ্চিমা দেশগুলোতে মোরগ লড়াইয়ের প্রচলন দেখা যায়। মোরগের লড়াই বহু আগ থেকেই, চীন, প্রাচীন ভারত, পারশিয়া প্রভৃতি জায়গায় প্রসিদ্ধ ছিলো। খ্রিস্টপূর্ব ৫২০-৪৬০ অব্দের দিকে গেইম কক্ পুরাতন গ্রিসে প্রবেবশ করে। লড়াকু মোরগকে আদি সিরিয়ানরা দেবতা হিসাবে পূজা করত। মোরগের লড়াই সিজনাল গেইম, শীতকাল (নভেম্বরÑএপ্রিল) মোরগের লড়াইর উপযুক্ত সময়। গরমের সময় (মে-অক্টোবর) ফাইটিং কক্্ ফাইট থেকে বিরত থাকে।
বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কক্ ্ফাইট গ্যামলিং ও অ্যানিমেল ক্রুয়েলিটি আইনের আওতায় নিষিদ্ধ। আমেরিকার সব কয়টি স্টেটে বেআইনী।
একদিন বাবা এবং সমসু (ভাই) গিয়ে সীতাকু- সরকারি খামার হতে চার/পাঁচটা সাদা ব্রয়লার লেইং জাতীয় মুরগির সাথে একটা লেগ হর্ন সাদা মোরগ নিয়ে আসলো। ঘরে আগ থেকেই ছিল ক’টি পাঁতিহাঁস, প্লেমাউত, সসেক্স ও মিশ্র মোরগ-মুরগির মধ্যে একটি জাইন্ট ফিগার রোড আইল্যান্ড রেড আর ব্ল্যাক অস্ট্রালোল্প (কালো মুরগি), যাকে নবীনরা ‘কালী’ নামে ডাকতো। উল্লেখ্য, কালী বাচ্চা ফুটিয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। সে যখন ডিমে তা দিচ্ছিলো, নবীনরা পড়ালেখার অবসরে গিয়ে দেখতো বাচ্চা ফুটেছে কিনা। নবীন একবার এ কাজ করতে গিয়ে কালীর ঠোঁকর খেয়ে পরবর্তীতে ঐ কাজ হতে বিরত ছিলো। কালী বাচ্চা ফুটিয়েছে। মা নবীনদের কাছে জানতে চাইলো- কে বলতে পারবে, কোনটা মোরগ আর কোনটা মুরগি হবে? নবীনরা বোকা দৃষ্টি নিয়ে মার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। অপূর্ব বাচ্চাগুলো নিরীক্ষণ করতে করতে আবিষ্কার করলো- একটি বাচ্চার চারটি পা!
সংবাদটি দ্রুত পাড়াময় ছড়ালো। কেউ বা কেয়ামতের আলামত বলে মন্তব্য করলো। লোকজনের আগ্রহকে উপেক্ষা করা যায় না। একদল যাচ্ছে, আরেক দল আসছে, যা দাদিমার খুবই অপছন্দ।
একদিন কাক ঐ বাচ্চাটা নিয়ে উড়াল দিতেই কালীও কাককে উড়াল দিয়ে ধাওয়া করে পেয়ারা গাছটায় উঠে গিয়েছিলো।
বাহ্ কালীও কম যায় না, মনে হচ্ছে কালী বাচ্চাগুলো রক্ষা করতে পারবে!
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কালীর বাচ্চাদের বন্ধন, মার সাথে হাল্কা হয়ে আসতে লাগলো। সাদা লেগ হর্ন জাতীয় মোরগটির গঠন প্রকৃতি ব্যতিক্রমধর্মী। রোড আইল্যান্ড রেডও গঠন প্রকৃতির বিচারে অনন্য। সাদা মোরগটির গঠনও দৃষ্টি কাড়ার মত।
আমাদের সমসু (ভাই)-এর একটা ক্রেজি স্বভাব ছিল। সে মোরগের লড়াই (কক্ ফাইট) বেশ উপভোগ করতো। নবীনরাও উপভোগ করতো না, তা নয়। তবে ব্যাপারটাকে (কক্ ফাইটকে) হেইট করতো। সে একদিন সকাল বেলায় পাঠ সমাপনান্তে ঐ কোহিনূরদের বাসার পেছনে খালি জায়গায় সাদা লেগ হর্ন এবং রোড আইল্যান্ড রেডকে নিয়ে গিয়ে কক ফাইট লাগিয়ে দিয়েছে। সেকি ফাটাফাটি, রক্তারক্তি ব্যাপার! সাদা/লাল কোনটা কম যায় না।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দুটিরই অবস্থা কাহিল। বড়দের বকা খেয়ে সমসু (ভাই) মোরগ দুটিকে দুদিকে তাড়া দিয়ে ফাইটিংয়ে বিরত দিলো। মোরগ দুটি দুদিকে সরে গিয়ে আবারো ফাইটে জড়ানোর অপেক্ষায় আছে!
কালীও বাচ্চাগুলো নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের পাশেই চরে বেড়াচ্ছে। কালীর একটি বাচ্চা হঠাৎ গিয়ে ঐ অপেক্ষমান সাদা মোরগটাকে দুই/তিনটা ঠোঁকর মেরে দিলো! ব্যাপারটা এমন যেনো- এই হাঁগা তুমি আমার বাবার সাথে যুদ্ধ করছো কেনো? সাদা মোরগটা রাগ-গোস্বা-আক্রোশে ফেটে পড়ার উপক্রম। কালীর বাচ্চার আচরণ অশোভনীয় ও বেয়াদপি মনে হলো! কালবিলম্ব না করে সাদা মোরগটি কালীর বাচ্চাটিকে একটা ফ্লায়িং কিক দিয়ে এমনভাবে দাঁড়িয়ে রইলো যেনো কিছুই হয়নি! ঐদিকে ফ্লায়িং কিক খেয়ে কালীর বাচ্চার অবস্থা কাহিল! নবীনরা কি কক্ফাইট দেখবে, সবার নজর গিয়ে পড়লো ঐ বাচ্চার দিকে! বাচ্চাটা এমন করছে কেনো? এটার হয়েছেটা কি? কাঁটা মোরগ-মুরগির মতো আছার-পাছার ডিগবাজি খেয়ে আর সোজা হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারছে না! একজন বাচ্চাটিকে ঝাপটে ধরে দেখলো কি হয়েছে? এ কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার? বাচ্চাটার ক্রপ থলি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্রপদানি হতে সব খাদ্যদ্রব্য বেরিয়ে গেছে। যা মেরামতযোগ্য নয়, বাচ্চাকে আর বাঁচানো যাবে না! বাচ্চাটাকে তাড়াতাড়ি হালাল করার ব্যবস্থা করো। একজন দৌঁড়ে গিয়ে কিচেন থেকে ছুরি নিয়ে আসলো। আর একজন বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলে বাচ্চাটাকে হালাল করে নিলো। কেউবা বললো বড়দের যুদ্ধক্ষেত্রে তুমি কেনো বলির পাঁঠা হতে গেলে বাছা! কেউবা বলল শোল নাচে, বোয়াল নাচে মলাপুটিও নাচে? উচিত শিক্ষা হয়েছে! মা বললো, হয়েছেটা কি? সবাই বাবা-মাকে মোরগ লড়াইয়ের ফিরিস্তি দিল।
নিইউয়র্ক।