যারা নবীকে সম্মান করে না তারাই শবে মেরাজের বিরোধিতা করে

ঠিকানা রিপোর্ট: পবিত্র শবে মেহরাজ মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ দিন আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বন্ধু এবং যার জন্য এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন সেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:)কে তার আরশে মেহমান করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ দিনই মুসলমানদের জন্য নামাজ কায়েম করা হয়। যারা নবী করিম (স:)কে সম্মান করতে জানে না, তারাই পবিত্র শবে মেরাজের বিরোধিতা করছে। আল্লাহ যাকে সম্মান করেছেন, তাঁকে তাঁর বান্দারাই অসম্মান করছেন। তারা আবার তাদের নামের আগে আন্তর্জাতিক মফাচ্ছের ব্যবহার করেন। কিন্তু কোন দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলাতেও যাননি। আসলে তারা পবিত্র কোরআনের গভীরে পৌঁছান না, তাদের অবস্থা হয়েছে কচুরি পানার মত। পবিত্র শবে মেরাজ উপলক্ষে এস্টোরিয়ার আল আমিন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, মুহাদ্দিস ড. কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহি এ সব কথা বলেন। গত ১৪ এপ্রিল বাদ মাগরিব এস্টোরিয়ার আল আমিন মসজিদে এই ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আল আমিন মসজিদের সভাপতি জয়নাল আবেদীনের পরিচালনায় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আল আমিন মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফিজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী।
ড. কফিল উদ্দিন সরকার সালেহি শবে মেরজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আল্লাহপাক অনেক আগেই বহু অলৌলিক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিলো হযরত ইদ্রিস (স:)কে আল্লাহ জান্নাত দেখিয়েছিলেন। মুসা (স:) এর লাঠি দিয়ে নদীর পানি ভাগ করেছিলেন। এ ধরনের বহু অলৌলিক ঘটনা আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞান বলছে, যা চোখে দেখা যায় না, তা নাকি বিশ্বাস করতে নেই। এটা ঠিক নয়। কারণ আমরা বাতাস দেখি না, ফুলের গন্ধ দেখি না, আমাদের রুহু দেখি না, তাই বলে কি আমরা এ গুলো বিশ্বাস করি না? অবশ্যই বিশ্বাস করি। সুতরাং বিজ্ঞানের ঐ কথা সম্পূর্ণ ভুল। তিনি বলেন, আগুন, পানি, মাটি এবং বাতাস দিয়ে মানুষের দেহ সৃষ্টি। আবার এই গুলো দিয়ে পৃথিবীরও সৃষ্টি। আল্লাহর নির্দেশেই এ সব চলে, আবার মানুষের রুহুও আল্লাহর আদেশে মানুষের শরীরের আসে এবং আল্লাহর নির্দেশেই চলে যায়। পৃথিবীর কোন ডাক্তার যেমন মানুষের রুহু কী তা দেখতে পারেননি। আবার রুহু চলে যাওয়া ঠেকাতেও পারেননি। এই রুহুই আমাদের চালিকা শক্তি। আল্লাহর নির্দেশের কাছে ডাক্তারদের সকল ডাক্তারিই ব্যর্থ। অনেকে বলেন, তারা সব জানেন, আসলে তারাই অজ্ঞ। কারণ সব কিছু জানা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহ পাক ৯০ হাজার জিনিস সৃষ্টি করেছেন। কেউ ৯০ হাজার জিনিস সম্পর্কে জানেন না। তিনি আরো বলেন, আবার অনেকের বহু শক্তি আছে, অস্ত্র আছে কিন্তু কেউ রুহুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বিজ্ঞান নয় কোরআনই হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কোরআনই আসলে বিজ্ঞান। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কোরআনে আছে। যে কারণে এখন বিজ্ঞানীরা কোরআনের পেছনে ছুটছেন। তিনি বলেন, এই পৃথিবীতে একদিন সবাই কলেমা পড়বে এবং মুসলমান হবে। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মই নারীদের সম্মান দিয়েছে। মনে রাখবেন এরাই হচ্ছেন মায়ের জাতি। কোরআনে আছে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তিনি আরো বলেন, নবী করিম (স:) মেরাজ যাবার পথে দেখেছেন মুসা নবী কবরে নামাজ পড়ছেন, ইউছুপ নবী হাজীদের তলাবিয়া পড়ছেন। তিনি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রতিটি নবী এখনো জীবিত আছেন। আর আল্লাহ পাক এই পৃথিবী সৃষ্টির আগেই নবী করিম (স:) এর নূর সৃষ্টি করেছিলেন। নবীজিকে একজন প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, আদমের দেহ তৈরির সময়ও আমি নবী ছিলাম। অথচ এক শ্রেণির জ্ঞানপাপী বলে, নবী নাকি ৪০ বছর বয়সে নবী হয়েছেন। তারা ২০ রাকাতের তারাবির নামাজকে ৮ রাকাতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন, মানুষদের বিভ্রান্ত করছেন। তিনি বলেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সোয়াব হয়। তিনি নবী করিম (স:) এর পবিত্র মেরাজে যাওয়া এবং কার কার সাথে দেখা হয়েছে তা বিশাদভাবে বর্ণনা করেন।


ওয়াজ মাহফিলের শুরুতে কোরআন তেলওয়াত করেন হাফেজ ইশরাক আহমেদ। ওয়াজ মাহফিল শেষে মুসলিম বিশ্বের সুখ- শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। ওয়াজ মাহফিল শেষে মুসল্লীদের মধ্যে তবারুক বিতরণ করা হয়।
বাংলা বাজার পবিত্র শবে মি’রাজ উদযাপন
নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মি’রাজ উদযাপিত হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনসহ রাতব্যাপি ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যতে পবিত্র শবে মি’রাজ উদযাপন করেন। বিভিন্ন মসজিদে এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করেন। সৃষ্টিকর্তার রহমত কামনা ও গুনাহ মাফের জন্য পবিত্র এ রজনীতে এবাদত-বন্দেগী ছাড়াও ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষগণ পরদিন নফল রোজাও পালন করেন।
এদিকে, ব্রঙ্কসের বাংলাবাজার জামে মসজিদে পবিত্র শবে মিরাজ উপলক্ষে আলোচনা, যিকির মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং মসজিদের খতীব মাওলানা আবুল কাশেম এয়াহইয়ার পরিচালনায় মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মোফাচ্ছিরে কোরআন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ইসলামী ভাষ্যকার, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা ড. কাফিল উদ্দীন সালেহী সরকার।
মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে মি’রাজের তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনায় আল্লামা কাফিল উদ্দীন সালেহী সরকার বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন সকল দার্শনিকের বড় দার্শনিক, সকল বৈজ্ঞানিকের বড় বৈজ্ঞানিক। যুগে যুগে বিজ্ঞানকেও হার মানিয়েছে তার জীবনে প্রতিফলিত নানা ঘটনা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অলৌকিক ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী মি’রাজ। নবুয়তের দশম বর্ষের আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা হতে বায়তুল মোকাদ্দাসে (জেরুজালেম) উপনীত হন এবং সেখান হতে সশরীরে সপ্তাকাশ ভ্রমণ করে মহান আল্লাহ্ পাকের সান্নিধ্যে উপস্থিত হন। উভয়েই একান্তে মিলিত হন। পবিত্র মি’রাজকালীন রাসুল (সা.) প্রভুর দীদার লাভে ধন্য হয়ে আনন্দে বিভোর ছিলেন। তখনো তিনি উম্মতে মোহাম্মদীর কথা ভুলেননি। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বন্ধুর মনের কথা অনুধাবন করতে পেরে বললেন, আমার সাথে আপনার যেমন দীদার হয়েছে, তেমনি আমার সাথে আপনার উম্মতদেরও দীদার হবে সালাতের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ পাকের এ কথায় রাসুল (সা.) অত্যন্ত খুশি হন। পবিত্র মি’রাজ হতে ফিরে এসে ঘোষণা দেন সালাত (নামাজ) মু’মেনদের জন্যে মি’রাজ স্বরূপ।
ড. কাফিল উদ্দীন সালেহী সরকার বলেন, পবিত্র মি’রাজ রজনীতে মহান আল্লাহর নিকট থেকে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য পাওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত বা উপহার হচ্ছে সালাত। এ সালাতের মাধ্যমেই উম্মতে মোহাম্মদীগণ আল্লাহর দীদার লাভের সুযোগ পান। তাই সালাত কায়েমের মাধ্যমে মহান আল্লাহর দীদার লাভের চেষ্টা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। আমরা যেন সবসময় মহান আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হতে পারি। এটাই হোক আমাদের মি’রাজের শিক্ষা।
বিপুল সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে মাহফিলে বিশেষ দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন আল্লামা কাফিল উদ্দীন সালেহী সরকার। দোওয়া-মোনাজাতে দেশ, প্রবাস ও বিশ্ব মানবতার শান্তি, কল্যাণ কামনা করা হয়। পরে তবারুক বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়।