ঠিকানা ডেস্ক : উগ্র মুসলিমবিদ্বেষ থেকেই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ জন নিরীহ মুসল্লিকে হত্যা করেছে ট্রাম্প সমর্থক অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ২৮ বছরের ওই হামলাকারীর অ্যাসল্ট রাইফেলে লেখা ছিল ২০১৭ সালে স্টকহোমে লরি হামলায় নিহত ১২ বছরের সুইডিশ শিশু এবা আকারলাউন্ড-এর নাম। হামলা চালানোর আগে লেখা ৭৪ পৃষ্ঠার ইশতেহারেও এবা আকারলাউন্ডের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলেছিল ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ১৬ হাজার ৫০০ শব্দের ইশতেহারে হামলার কারণ ব্যাখ্যা করেছে এই অস্ট্রেলীয় নাগরিক। সেখানে মোটা দাগে উঠে আসে মুসলিমবিদ্বেষ ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের মতো বিষয়গুলো। নিজের অস্ত্রের ওপর লেখায় উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের বিজয়ের কথাও উল্লেখ করেছে সে। এই যুদ্ধংদেহী বিদ্বেষের ফল মসজিদের ভেতরে ছড়িয়েছিল মানুষের রক্তাক্ত লাশগুলো।
এবা আকারলাউন্ডের বিষয়ে ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারী লিখেছে, বছর দুয়েক আগের ওই ঘটনা তার চিন্তাচেতনায় নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিলের ওই সহিংসতার পর থেকে আর চুপ থাকতে পারেনি সে। কারণ এবার ঘটনা পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। স্কুল ছুটির পর মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল সে। সে হত্যার বদলা নিতেই গত ১৫ মার্চ এবার জন্মদিনে পাশবিক হিংস্রতায় নিরপরাধ মুসল্লিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রেন্টন ট্যারান্ট।
ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে হামলায়ও খুনির তা-ব থেকে বাদ যায়নি নারী ও শিশুরা। মসজিদের হামলায় নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো দুই শিশুর একজনের বয়স মাত্র দুই বছর। ঘৃণা আর বিদ্বেষের এই বিষবৃক্ষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে কোনো এক দিন হয়তো এই শিশুদের রক্তের শোধ নিতে রাইফেল কিংবা লরি নিয়ে তা-ব চালাবে অন্য কোনো সন্ত্রাসবাদী। নিরপরাধ মানুষের রক্তে হয়তো প্রতিশোধ নিতে পারার সুখ খুঁজবে সে।
প্রতিশোধের বার্তা দিয়ে মুসলিমদের উদ্দেশে ক্রাইস্টচার্চের খুনি বলেছে, এই হামলা চালানো হয়েছে এটা দেখানোর জন্য যে, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শ্বেতাঙ্গও বেঁচে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশ আমাদেরই (শ্বেতাঙ্গদের) থাকবে। আমাদের দেশ কখনোই তাদের (অভিবাসী মুসলিমদের) হবে না। তারা কখনো আমাদের ভূমি দখল করতে পারবে না।
ট্যারান্টের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। মসজিদে হামলা উপলক্ষে সে ৭৪ পাতার তথাকথিত ইশতেহারের নাম সে দিয়েছে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট।’ এতে রয়েছে যেমন শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যার শিকার হওয়ার মতো ‘উদ্ভট’ দাবি, তেমনি রয়েছে মুসলিমদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরির প্রস্তাব।